মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ জরুরি: প্রধান উপদেষ্টা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১২:০০ এম, ০১ অক্টোবর ২০২৫

জাতিসংঘ সদর দফতরে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলছেন—রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ মিয়ানমারে এবং এর স্থায়ী সমাধানও সেখান থেকে বের করতে হবে। মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি না হলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করানো ও তাদের দ্রুত রাখাইন প্রত্যাবাসন করা কঠিন হবে—এটাই তার প্রধান বার্তা ছিল।
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, গণহত্যা শুরু হওয়ার আট বছর পার হলেও রোহিঙ্গাদের কষ্ট থেমে নেই এবং সংকট নিরসনে উদ্যোগের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি বলেন মজবুত তহবিল না থাকায় সহায়তা কার্যক্রমই দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং তহবিল ঘাটতির একমাত্র শান্তিপূর্ণ বিকল্প হল রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা — যা আন্তর্জাতিক সংরক্ষণের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়সাপেক্ষ।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, রোহিঙ্গারা সবসময়ই নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং বিশেষত সম্প্রতি সংঘাত এড়াতে বাংলাদেশে এসেছেন এমনদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের সুযোগ দেওয়া উচিত। তিনি বাংলাদেশের উপর পড়া আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত বোঝা তুলে ধরে জানান, বাংলাদেশ এই সংকটের প্রধান ভুক্তভোগী। রাখাইন হয়ে বাংলাদেশে মাদকের প্রবাহসহ অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিস্তার সামাজিক কাঠামোকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। দুর্ভিকাশ, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে নিয়মিত কর্মসংস্থান দেওয়া সম্ভব নয়—তাও তিনি বলেন।
সমাপনী বক্তব্যে ড. ইউনূস সবাইকে এখনই সংকটের স্থায়ী সমাধানে কাজ করার আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতার অঙ্গীকার জানান।
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে তিনি সাত দফা সুপারিশ প্রস্তাব করেছেন—
রাখাইনের বাস্তবসম্মত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বাস্তব রোডম্যাপ প্রণয়ন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ—প্রত্যাবাসন শুরু স্থানীয়ভাবে বাস্তুচ্ছুতদের দিয়েই শুরু করতে হবে, রাখাইন স্থিতিশীল করার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন একত্রিত করা এবং স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি স্থাপন, রাখাইন সমাজ ও শাসনব্যবস্থায় রোহিঙ্গাদের টেকসই একীকরণের জন্য আস্থা তৈরির ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করা, যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার পূর্ণ অর্থায়নের জন্য দাতাদের অবদান সুরক্ষিত ও একত্রিত করা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার প্রয়োগ করা, মাদক-অর্থনীতি ভেঙে ফেলা এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াই চালানো।