গত বছরের তুলনায় মেয়ে শিশু নির্যাতন বেড়েছে


গত বছরের তুলনায় মেয়ে শিশু নির্যাতন বেড়েছে

দেশে এক থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে ৯ জন শারীরিক শাস্তি বা মানসিক নিপীড়নের মুখোমুখি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় মেয়েদের ওপর এই নির্যাতনের পরিমাণ ৭৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে শিশুদের অভিভাবক, শিক্ষক বা রক্ষকরা সরাসরি জড়িত।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘কমিউনিটি বেইজড চাইল্ড প্রোটেকশন মেকানিজম ফর দ্য চিলড্রেন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কারস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে ইউনিসেফের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেমিনারের আয়োজন করে উন্নয়ন সংস্থা ‘টেরে ডেস হোমস্ নেদারল্যান্ডস’ (টিডিএইচ-এনএল), ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস) ও ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক)।

ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন টিডিএইচ-এনএল’র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নূরুল কবির। তিনি বলেন, লাখ লাখ শিশু তাদের পরিচয়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশে ১০২টি শিশু আদালত থাকলেও কিশোর বিচার ব্যবস্থায় শিশুদের জড়িত ২৩ হাজারের বেশি মামলা এখনও বিচারাধীন। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে ৩০৬ জন শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে।

নূরুল কবির আরও বলেন, ইন্টারনেট তথ্য ও শিক্ষা লাভের সুযোগ বাড়িয়েছে, তবে অনাকাঙ্ক্ষিত কনটেন্ট ও পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতার কারণে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রলোভন ও হয়রানির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা তাদের বিপদগ্রস্ত করে এবং দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তিনি বিশেষ করে পোশাক খাতের শ্রমিকদের শিশুদের ঝুঁকিতে থাকার দিকে ইঙ্গিত করেন। এই শিশুদের বেশিরভাগই নিজস্ব বা সমাজভিত্তিক কোনও শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় নেই। ফলে তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, কম মজুরির ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ছে এবং চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবহার ও যৌন নির্যাতনের মতো ঝুঁকিতে পড়ছে। সরকারের দেওয়া সেবা যথেষ্ট নয়। স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার না দেওয়ায় তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সেমিনারে সুপারিশ করা হয়েছে, পোশাক শ্রমিকদের শিশুদের জন্য কমিউনিটিভিত্তিক শিশুবান্ধব সুরক্ষা কাঠামো গঠন করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় বিশেষায়িত শিশু সুরক্ষা ইউনিট এবং শিশুবান্ধব অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, ধর্ষণ মামলার ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা, জাতীয় শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয়, আইন সংস্কার ও নীতিমালা হালনাগাদ এবং শিশুবান্ধব বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন টিডিএইচ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম, সঞ্চালনা করেন বিটিএস’র পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম। এতে বক্তৃতা করেন সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান, মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের পরিচালক নাঈমা হোসেন, পদ্মা অ্যাপারেলস ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক জাবেদ হোসেন ভূঁইয়া, সহকারী কমিশনার ফারিয়া তাসনিম, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা রাশেদা বেগম প্রমুখ।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×