শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা বৈধ ছিল, ষড়যন্ত্র ছিল না: নাহিদ ইসলাম
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:৫০ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপসারণকে ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করার কোনো সুযোগ নেই। বরং, তার ভাষ্য অনুযায়ী, এটি ছিল জনগণের ন্যায়সঙ্গত প্রতিরোধ।
রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নাহিদ বলেন, “শেখ হাসিনা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক দফা ঘোষণা করে তাকে উৎখাত করার প্রস্তুতি নেওয়া ছিল বৈধ, এখানে ষড়যন্ত্রের কিছু নেই।”
নাহিদের মতে, আন্দোলনে দেশের সাধারণ জনগণই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছিল, যেখানে দেশি কিংবা বিদেশি কোনো শক্তির ইন্ধন ছিল না। “জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসেছিল জীবন দিয়ে প্রতিরোধ করে সফলতা নিয়ে এসেছে,” বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম আরও দাবি করেন, আওয়ামী লীগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তার কথায়, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেই সুযোগও আছে। আমরাও আবেদন জানাব। বিচারের মধ্য দিয়েই তাদের বিষয়ে ফয়সালা করতে হবে।”
তিনি মনে করেন, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে দলটির অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও, সেটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। “কারণ, অস্থায়ী সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না,” বলেন তিনি।
এদিন আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে হাজির হন নাহিদ। এই মামলার আসামির তালিকায় আছেন শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামুন ইতোমধ্যে দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
জেরা পর্বে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন প্রশ্ন করেন, আন্দোলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে সামনে আনার প্রস্তাব দেশি-বিদেশি কোনো চক্রান্তের অংশ ছিল কিনা। জবাবে নাহিদ বলেন, “এ কথা সত্য নয়।”
আইনজীবীর আরেক প্রশ্ন ছিল, ৩ আগস্ট ঘোষিত এক দফা কর্মসূচি কী দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনার ফসল ছিল। জবাবে নাহিদ বলেন, “এটা সত্য নয় যে, ৩ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি তাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফলশ্রুতি। এটাও সত্য নয় যে, তাঁদের আন্দোলনের পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির হাত ছিল।” প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে এ সময় আপত্তি জানালেও ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেন, বিষয়টি প্রাসঙ্গিক।
প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, “৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনকে চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ নেই। এটা রাষ্ট্রের বৈধতা রয়েছে। আর এ বিষয়ে আপিল বিভাগ অনুমোদন দিয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, মামলাটি মানবতাবিরোধী অপরাধসংক্রান্ত, তাই সে দিকেই মনোনিবেশ করাই যুক্তিযুক্ত।
জেরার সময় আইনজীবী আমির হোসেন দাবি করেন, শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেননি, বরং তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, “এটা সত্য নয় যে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন নাই। এটাও সত্য নয় যে শেখ হাসিনা বাধ্য হয়ে ভারতে চলে যান নাই।”
আরেক প্রশ্নে আমির হোসেন দাবি করেন, “আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের কোনো নির্দেশ দেননি শেখ হাসিনা। মূলত জনগণের জানমাল ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। তাই এই আসামিরা অপরাধের জন্য দায়ী নন।” জবাবে নাহিদ বলেন, এই বক্তব্যগুলো “সত্য নয়।”
আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের নাহিদ ইসলাম বলেন, “রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে দলীয় প্রধান হিসেবে জনগণকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।” তার দাবি, এই অপরাধ শুধু ব্যক্তি নয়, একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সংঘটিত হয়েছে।
তিনি বলেন, “জনগণই প্রতিরোধ করে তাকে উৎখাত করেছে। ফলে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে।” নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “জুলাই-আগস্টের অপরাধ পৃথিবীর ইতিহাসে লেখা হয়ে থাকবে।”
তিনি স্পষ্ট করেন, এই আন্দোলন কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল না, বরং এটি ছিল “জনগণের অভ্যুত্থান।”