জুমার খুতবার সময় কি মোবাইল ব্যবহার করা যাবে?


জুমার খুতবার সময় কি মোবাইল ব্যবহার করা যাবে?

জুমার খুতবার সময় মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি অনেকেই করে থাকেন। কেউ হয়তো বার্তা দেখছেন, কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত। কিন্তু এমন ব্যবহার কি ইসলামী দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য? অনেকেই এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। শরিয়তের আলোকে এর জবাব পরিষ্কার; খুতবার সময় মোবাইল ব্যবহার করা মোটেই অনুমোদিত নয়।

ইসলামে নামাজকে ইবাদতের সর্বোচ্চ রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, “তুমি সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম কর এবং ফজরের নামাজ কায়েম কর। নিশ্চয়ই ফজরের নামাজে সমাবেশ ঘটে।” (সুরা বনি ইসরাঈল: ৭৮)

ইসলামে নামাজকে ইবাদতের সর্বোচ্চ রূপ হিসেবে গণ্য করা হয়। হাদিস শরিফে হজরত মু‘আয ইবনু জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “ধর্মের মূলে রয়েছে ইসলাম, তার স্তম্ভ হলো নামাজ, আর ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া হলো আল্লাহর পথে জিহাদ।” (তিরমিজি: ২৬১৬)

এই পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মধ্যে জুমার নামাজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হাদিসে জুমার দিনের ফজিলত বোঝাতে গিয়ে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মতো গোসল করে এবং প্রথম প্রহরে মসজিদে যায়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। দ্বিতীয় প্রহরে গেলে গরু কোরবানির সওয়াব, তৃতীয় প্রহরে গেলে ভেড়া, চতুর্থ প্রহরে গেলে মুরগি এবং পঞ্চম প্রহরে গেলে ডিম কোরবানির সওয়াব পাবে। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে মিম্বারে ওঠেন, তখন ফেরেশতারা আর আমল লিখেন না, তারা খুতবা শুনতে থাকেন।” (বোখারি: ৮৮১)

জুমার নামাজের কেন্দ্রবিন্দু হলো খুতবা। এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার সময় নীরব থেকে মনোযোগ সহকারে শোনা ওয়াজিব। হাদিস শরিফে স্পষ্টভাবে এসেছে, খুতবার সময় কথা বলা তো দূরের কথা, অন্যকে চুপ করতে বলাও ঠিক নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, “জুমার দিন খুতবার সময় যদি তুমি তোমার পাশের সঙ্গীকে বল ‘চুপ কর’, সেটাও অনর্থক।” (বোখারি: ৯৩৪, মুসলিম: ৮৫১)

এই নির্দেশনা থেকে স্পষ্ট হয়, খুতবার সময় যে কোনো ধরনের কথাবার্তা, অপ্রয়োজনীয় আচরণ বা মনোযোগ বিভ্রান্তকারী কাজ নিষিদ্ধ।

তবে মোবাইল ফোন ব্যবহার কি এর মধ্যে পড়ে?

ইসলামী আইন বা ফিকহের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ‘ফাতাওয়ায়ে শামি’-তে বলা হয়েছে, “যেসব কাজ নামাজে হারাম, সেগুলো খুতবা চলাকালেও হারাম। যেমন কথা বলা, পানাহার করা ইত্যাদি।” (ফাতাওয়ায়ে শামি: ৩/৩৫)

এই নীতির ভিত্তিতে বলা যায়, খুতবার সময় মোবাইলে কথা বলা, বার্তা দেখা, গেম খেলা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা সম্পূর্ণরূপে শরিয়তবিরোধী। এসব কাজ খুতবার পবিত্রতা নষ্ট করে এবং মনোযোগ বিচ্যুত করে, যা ইসলামী আদবের পরিপন্থী।

অতএব, জুমার খুতবার সময় মোবাইল ব্যবহার করা ইসলামে অনুমোদিত নয়। বরং এ সময়টিতে মনোযোগসহকারে খুতবা শোনা প্রত্যেক মুসল্লির দায়িত্ব।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×