সন্ধান মিলেছে কোরআনে বর্ণিত সামুদ জাতির ঘরবাড়ি!
- ইসলাম ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:০৬ এম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত প্রাচীন সামুদ জাতির ধ্বংস আজও ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত। পাহাড় কেটে নির্মিত বিশাল ঘরবাড়ি ও প্রাসাদের জন্য পরিচিত এই জাতি তাদের অবাধ্যতার দরুন ধ্বংস হয়, এবং তাদের নিদর্শন মানবজাতির জন্য রেখে দেওয়া হয়।
কোরআনের বর্ণনায় বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা আদ জাতির পর সামুদদেরকে জমিনে বসবাসের সুযোগ দেন। তারা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ এবং পাহাড় খুঁড়ে ঘর তৈরি করত। কিন্তু তারা আল্লাহর প্রেরিত নবী হযরত সালেহ (আ.)-এর উপদেশ উপেক্ষা করে।
হযরত সালেহ (আ.)-এর মাধ্যমে তাদের কাছে একটি অলৌকিক উট পাঠানো হয়, যার বিষয়ে বলা হয়েছিল - একদিন সেই উট পানি পান করবে এবং অন্যদিন গোটা জাতি। কিন্তু তারা উটটিকে হত্যা করে স্পষ্টভাবে আল্লাহর আদেশ অমান্য করে। এর পরিণতিতে আল্লাহ তিন দিনের সময় দেন, যার পর প্রচণ্ড শব্দ এবং ভূমিকম্পে তারা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কোরআনে বলা হয়েছে, তারা তাদের নিজ ঘরের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ে যায়, যেন কখনও তারা সেখানে বসবাসই করেনি।
১৮১২ সালে এক ইউরোপীয় অনুসন্ধানকারী জর্ডানের মরুভূমিতে এক বিস্ময়কর নগরী আবিষ্কার করেন - নাম পেট্রা। লাল বালুকাপাথরের পাহাড় কেটে গড়ে তোলা এই নগরী অতীতের স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য। প্রাচীন এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখে গবেষকরা ধারণা করেন, প্রায় ৯০০০ বছর আগে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে এটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
পেট্রার অবকাঠামো ও নির্মাণশৈলী দেখে প্রশ্ন উঠেছে - এই পেট্রাই কি কোরআনে বর্ণিত সামুদ জাতির অবশিষ্ট নিদর্শন?
পাহাড় কেটে প্রাসাদ নির্মাণের যে বিবরণ কোরআনে পাওয়া যায়, তা পেট্রার স্থাপত্যের সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে যায়। কিন্তু সমস্যার জায়গা হলো - প্রত্নতাত্ত্বিকরা পেট্রার ধ্বংসাবশেষের সময়কাল সামুদ জাতির কালের সাথে সরাসরি মিলিয়ে দেখাতে পারছেন না।
২০২২ সালেমুসলিম ইন্ক্-এ প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্নতাত্ত্বিক সময় নির্ধারণের পদ্ধতি শতভাগ সঠিক নয়। বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে একই নিদর্শনের ভিন্ন বয়স নির্ধারিত হতে পারে। সেই হিসেবে, পেট্রার প্রকৃত বয়স সম্পর্কে আমরা যে ধারণা পেয়েছি, তা বিভ্রান্তিকরও হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও কিছু প্রমাণ ও যুক্তির উল্লেখ রয়েছে, যা সামুদ জাতির ধ্বংস এবং পেট্রা নগরীর মধ্যে সম্পর্কের সম্ভাবনাকে জোরালো করে।
গবেষকরা এ বিষয়ে একমত - পেট্রার পাহাড়কাটা স্থাপত্য এবং কোরআনে সামুদ জাতির বিবরণে যে মিল পাওয়া যাচ্ছে, তা উপেক্ষা করার নয়। তবে এখনো পর্যন্ত এটিকে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে পেট্রাই সামুদ জাতির সেই হারিয়ে যাওয়া নগরী।
বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরও ব্যাপক গবেষণা এবং সুনির্দিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।