.png)
সম্প্রতি ভারত ও আফগানিস্তানের সাথে সংঘটিত যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতায় নড়বড়ে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী গদি। এসব সংকট আর অস্থিরতার ভিতরে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলি-কে কেন্দ্র করে। ক্ষমতাসীন পিএমএলএ-ন কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব কণ্ঠভোটে পাস করেছে। প্রস্তাবে পিটিআইকে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত দল হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর) প্রস্তাবটি আসে এমন এক সময়, যখন কয়েক দিন আগেই আইএসপিআর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমদ শরীফ চৌধুরী নাম উল্লেখ না করে ইমরান খানের বিরুদ্ধে সেনাবিরোধী প্রচারণা চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের বয়ান “রাজনীতির সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।” এরপর থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ চলছে।
সরকারি দল পিএমএলএ-নের এমপিএ তাহির পারভেজ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন, যা বিরোধী পিটিআইয়ের অনুপস্থিতিতেই পাস হয়। ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে পিটিআই সদস্যরা অধিবেশন বর্জন করেন। যদিও প্রস্তাবে সরাসরি ইমরান খান বা পিটিআইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবু বার্তাটি যে তাদের উদ্দেশেই- তা পরিষ্কার।
প্রস্তাবে দাবি করা হয়, পাকিস্তানের নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অপপ্রচার “রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ।” আরও বলা হয়, শত্রুর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করায় পিটিআই ও তার প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
একইদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে পাঞ্জাবের তথ্যমন্ত্রী আজমা বোখারি জানান, তিনি সাধারণত কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নন। তবে পিটিআইয়ের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সরকারকে সে পথে ভাবতে বাধ্য করছে বলে মন্তব্য করেন। ইমরান খানকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, আদিয়ালা জেলের বন্দি এখন “আলতাফ হুসেনের দ্বিতীয় সংস্করণে” পরিণত হয়েছেন।
এদিকে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে মঙ্গলবারও ইমরান খানের বোনদের সাক্ষাৎ করতে না দেওয়ায় আদিয়ালা জেলগেটে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে। আলেমা ও উজমা খানসহ পিটিআইয়ের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। গত সপ্তাহে একবার সাক্ষাতের অনুমতি পেলেও ওইদিন তারা আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে আলেমা খান অভিযোগ করেন, রাষ্ট্র নিজেই আইন ভঙ্গ করছে- যেখানে “পিটিআই কোনো অবৈধ কাজ করেনি।” তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, যদি অবৈধভাবে কাজ করা লোকজনই ‘ঠিক’ আর তারা ‘ভুল’ হয়, তাহলে সেটাই দেশের বর্তমান সিস্টেমের চিত্র।
পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গোহর আলী খান বলেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রশাসন কেন ইমরান খানের পরিবার ও আইনজীবীদের সাক্ষাৎ করতে দিচ্ছে না, তার কোনো ব্যাখ্যাই দিতে পারছে না তারা। পিটিআইয়ের অন্যান্য নেতাদের অভিযোগ, এ ধরনের আচরণ রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অন্যদিকে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করে বারবার বিক্ষোভকারীদের স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। দাঙ্গা পুলিশের ব্যারিকেড অতিক্রম করতে না পেরে আলেমা খান বলেন, “আমরা এখান থেকে যাব না; লাঠি মারুক বা গুলি করুক- যা খুশি করুক।”
পিটিআই নেতাদের দাবি, সেনেটর ফয়সল ভওদার আহ্বানের পর থেকেই কর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতি বেড়েছে। পরিবারের একজন সদস্যকে সাক্ষাতের অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
নেতাদের অভিযোগ, সরকারের এই অবস্থান জনগণ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে জটিল করে তুলছে।
সূত্র: ডন