
আফগানিস্তানে ২০২৫ সালে আফিম চাষ গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে সিনথেটিক ড্রাগসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৬ নভেম্বর) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি একদিকে এই পতনকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করলেও, অন্যদিকে সিনথেটিক মাদকের উৎপাদন ও পাচার বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
২০২২ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার এক বছর পর দেশজুড়ে পপি চাষ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর পর থেকে আফগান কৃষিক্ষেত্রে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা গেছে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর (UNODC) জানায়, ২০২৪ সালের ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি থেকে ২০২৫ সালে আফিম চাষের পরিমাণ নেমে এসেছে ১০ হাজার ২০০ হেক্টরে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে আফগানিস্তানে প্রায় দুই লাখ ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে আফিম পপি চাষ হতো। বর্তমানে আফিম উৎপাদনও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে ২৯৬ টনে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩২ শতাংশ কম।
এই পতনের প্রভাবে কৃষকদের আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। ২০২৪ সালে আফিম বিক্রি থেকে যেখানে ২৬০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল, সেখানে ২০২৫ সালে তা নেমে এসেছে ১৩৪ মিলিয়ন ডলারে।
তবে ইউএনওডিসি জানিয়েছে, “২০২৫ সালে আফিমের দাম কিছুটা কমলেও, নিষেধাজ্ঞার আগের গড় দামের তুলনায় এখনো তা পাঁচ গুণ বেশি।”
সংস্থাটি আরও সতর্ক করে বলেছে, আফিমের চাষ কমলেও এখন সিনথেটিক মাদক—বিশেষ করে মেথামফিটামিন—উৎপাদনের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সিনথেটিক ড্রাগগুলো এখন সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর জন্য নতুন ব্যবসায়িক মডেল হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে, কারণ এগুলো উৎপাদন করা তুলনামূলকভাবে সহজ, সহজে শনাক্ত করা কঠিন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল।”
জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাচ্ছে আফগান কৃষকদের বিকল্প জীবিকার সুযোগ তৈরিতে সাহায্য করতে, যাতে তারা আফিম চাষ থেকে সরে আসে। একই আহ্বান জানিয়েছে তালেবান সরকারও।
ইউএনওডিসি জানায়, “নিষেধাজ্ঞার পর অনেক কৃষক খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য ফসল চাষে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে খরা ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে ৪০ শতাংশেরও বেশি জমি এখনো পতিত পড়ে আছে।”
২০২২ সালের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে আফিম চাষের কেন্দ্র স্থানান্তরিত হয়েছে আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, যা তালেবানের ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণাঞ্চলীয় ঘাঁটি থেকে অনেক দূরে।
২০২৪ সালের মে মাসে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাদাখশান প্রদেশে আফিম ক্ষেত ধ্বংসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় কৃষকদের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজন নিহত হন। ওই এলাকায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আফিম চাষ চলছিল বলে জানা যায়।