বিশ্ব বসতি দিবস আজ

৪৪ বছরে ঢাকায় জনবসতি সাত গুণ বেশি


৪৪ বছরে ঢাকায় জনবসতি সাত গুণ বেশি

ঢাকা শহর আজ শুধু জনসংখ্যার চাপে নয়, পরিবেশগত বিপর্যয়ের দিক থেকেও ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত ৪৪ বছরে রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় সাত গুণ, আর একই সময়ে শহরের ভূমির তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ১৯৮০ সালের পর থেকে ঢাকার প্রায় ৬০ শতাংশ জলাধার হারিয়ে গেছে। বর্তমানে জলাধার রয়েছে শহরের মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এলাকায়। সবুজ আচ্ছাদনও দ্রুত কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬ শতাংশে, যা আগের ২১ দশমিক ৬ শতাংশের অর্ধেকেরও কম।

স্যাটেলাইট চিত্র ও নগরায়ণের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজধানীর মাত্র ছয়টি থানা এখনো জলাধার সংরক্ষণের ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করছে। বাকিগুলোর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঢাকার এই পরিবেশ বিপর্যয়ের মূল কারণ হলো অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম এবং জলাধার রক্ষা আইনের দুর্বল বাস্তবায়ন।

বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে আজ (৬ অক্টোবর) পালিত হচ্ছে জাতীয় কর্মসূচি— “পরিকল্পিত উন্নয়নের ধারা, নগর সমস্যায় সাড়া” প্রতিপাদ্যে। এ উপলক্ষে শোভাযাত্রা, প্রদর্শনী ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের নগরাঞ্চলের টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব শহরের উন্নয়নে সরকার বহুমাত্রিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে।”

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের মতে, ঢাকার পরিবেশের এই দ্রুত অবক্ষয় মানুষের জীবনযাত্রাকে কষ্টকর করে তুলছে এবং শহরটিকে ক্রমেই বাসযোগ্যতার সীমা ছাড়িয়ে নিচ্ছে। এখনই পরিবেশবান্ধব ও ন্যায্য নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা না নিলে রাজধানী ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংকটে পড়বে বলে তারা সতর্ক করেছে।

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে— আদাবর, রামপুরা, কাফরুল, বংশাল ও ওয়ারী এলাকায় গাছের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে। অন্যদিকে সূত্রাপুর, মিরপুর, গেন্ডারিয়া ও কাফরুল এখন প্রায় জলশূন্য। সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বা ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে শ্যামপুর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, রামপুরা ও দারুসসালাম।

গবেষণা পরিচালক ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসাইন খান বলেন, “উন্নয়নের নামে ঢাকার প্রকৃতি প্রায় ধ্বংসের পথে। বায়ুদূষণের কারণে ইনহেলারের বিক্রি কীভাবে বেড়েছে তা দেখলেই বোঝা যায় পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। করাচি আজ ঢাকার নিচে, আর আমরা সেই একই পথে হাঁটছি। ঢাকাকে করাচি হতে না দিতে হলে সিঙ্গাপুরের মতো প্রকৃতিনির্ভর নগর মডেল গ্রহণ করতে হবে।”

এই গবেষণায় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন সাবরিন সুলতানা ও মো. ফুয়াদ হাসান।

দিবসের কর্মসূচি:

বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় জিয়া উদ্যান থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শেষ হবে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে, যেখানে অনুষ্ঠিত হবে মূল আলোচনা সভা। সকাল ১০টায় ‘হল অব ফেম’-এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জাতিসংঘের বাংলাদেশ রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর গোয়েন লুইস।

এ ছাড়া প্রদর্শনী, স্মরণিকা প্রকাশ, ব্যানার ও পোস্টার টানানোর মাধ্যমে দিবসটি দেশজুড়ে পালন করা হচ্ছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×