খেলাপি ঋণ মুহুর্তে আদায় করা সম্ভব না: অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান


February 4 2025/AGRANI-DW-NEWS.jpg

বাংলাদেশে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) সহ মোট ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো সরকারের মালিকানাধীন এবং পরিচালিত হয়। এই ব্যাংকগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য হল সরকারের বিভিন্ন নীতি এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা, যা সাধারণত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে ‘রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংক’ এই ব্যাংকগুলোতে এখন খেলাপি ঋণ কমানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকে ঋণের অর্ধেক খেলাপি ঋণে পরিনত হয়েছে। 

বর্তমান অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। ব্যাংকিং খাতের অভিজ্ঞ এ কর্মকর্তা এক সময় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকও হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সবশেষ ঢাকা ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন তিনি। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনীতির নানা শাখায় কাজ করেছেন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী এ অর্থনীতিবিদ।

সম্প্রতি ঢাকাওয়াচের সাথে দেশের ব্যাংকিং খাত, রেমিট্যান্স এবং ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ সম্পর্কসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকাওয়াচের বিজনেস এডিটর ফরিদ উদ্দিন শ্রাবণ।

ঢাকাওয়াচ: বর্তমানে ব্যাংক খাতে এক ধরনের সংকট চলছে। সেখানে আপনার ব্যাংকের অবস্থান জানতে চাই?  

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ: ব্যাংকের অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি খুব দ্রুত অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে। বিগত ১৬ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন অপশাসনের মাধ্যমে এই খাতকে বিপর্যস্ত করে তোলা হয়েছে। ব্যাপক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে এবং সেগুলো বারবার পুনঃতফসিল করে প্রকৃত অবস্থা আড়াল করা হয়েছে। তাই তখন খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। এখন সেগুলো যাছাই-বাচাই করতে গিয়ে ঋণের আসল চেহারা বের হয়ে আসছে। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। তবে গত দশ মাসে নতুন করে কোনো খেলাপি বাড়েনি।

ঢাকাওয়াচ: অগ্রণী ব্যাংকের আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাই?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ: আমানত ও ঋণ মোটামুটি অবস্থানে রয়েছে। তবে আমদানি ও রপ্তানিতে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে আছে অগ্রণী ব্যাংক। সার্বিকভাবে রেমিট্যান্সে সবসময়ই আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়, অর্থাৎ ইসলামি ব্যাংকের পরেই থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এটা দেখে অবাক হয়েছে। সরকারি ব্যাংক হিসেবে ডলার রেট বাংলাদেশ ব্যাংক যেটা বেঁধে দেয় তার বাইরে দেয়ার সুযোগ নেই। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। ৫০ শতাংশের কাছাকাছি খেলাপি ঋণ চলে আসছে। ফলে মূলধন ঘাটতি দেখা গেছে। কিন্তু খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য এরই মধ্যে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ডিজিটাল সার্ভিসের ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে নেই। বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের ৯৭৯টি শাখায় অনলাইন সার্ভিস চালু আছে। অগ্রণী ব্যাংকে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, অ্যাননটেক্সের মতো বড় কোনো জালিয়াতির ঘটনা নেই। এ ধারাবাহিকতা আমরা ধরে রাখতে চাই। কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই), কৃষি খাতে ঋণ রয়েছে। এ খাতে আরো ঋণ বাড়ানো হবে। কারণ এ খাতে খেলাপি হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। এদেশে উন্নয়নে ২৫ শতাংশ অবদান এ খাতেই বেশি। অথচ এখাতে মানুষ ঋণ পাই না। তাই যারা ভালো ব্যবসা করতে চাইবে, তাদেরকে আমরা ঋণ দিবে।  নতুন করে কোনো কর্পোরেটে খাতে ঋণ দিচ্ছি না। তবে যেগুলো চলমান আছে, সেগুলো ব্যবসার পরিধি অনুযায়ি ঋণ দেয়া হচ্ছে। যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখতে পারে।  

ঢাকাওয়াচ: খেলাপি ঋণ আদায় নতুন কোনো পরিকল্পনা নিয়েছেন কি?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ: পরিকল্পনা তো অবশ্যই রয়েছে। তবে চাইলে খেলাপি ঋণ মুহুর্তে আদায় করা সম্ভব না। খেলাপি ঋণ আদায় করারও একটা প্রক্রিয়া রয়েছে। সেই প্রক্রিয়ায় আগাতে গেলেও দুই থেকে তিন বছর লাগবে। খেলাপি ঋণ আদায় করতে গেলে আইনের প্রক্রিয়াটাই অনেক জটিল। সেই জটিলতা শেষ করতে তো সময় চলে যায়। তাই সরকারের উচিত। খেলাপিদের জন্য বিশেষ আদালত করে, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। তাহলে কেউ সহজে আর খেলাপি হতে চাইবে না। এখন বছরের পর বছর ব্যাংকের টাকা না দিয়ে খেলাপি ঘুরে বেড়াতে পারে। সরকারের উচিত খেলাপিদের ব্যাপারে কঠোর হওয়া। যাতে অল্প সময়ের মধ্যে খেলাপিদের সম্পদ বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা সমন্বয় করতে পারা। তবে সম্পদ বিক্রি করতে রয়েছে নানা জটিলতা। সম্পদের সঠিক দামে বিক্রিতে করতে গেলেও রয়েছে সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেট আগে থেকে বসে থাকে কিভাবে সম্পদের দাম কম দিবে। তার জন্য আদালত থেকে নিয়ে আসবে রায়ও। তাই সবখানে রয়েছে সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট ভাঙতে সময়ের প্রয়োজন।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×