আইনজীবী খুনের প্রতিবাদে চবি শিক্ষক ঐক্যের মানববন্ধন

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) মানববন্ধন করেছে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক ঐক্য। বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই মানববন্ধন করেন শিক্ষক ঐক্য। এ সময় তারা আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি করেন ও বক্তব্য দেন। মানববন্ধনে চবির রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ পাটোয়ারী বলেন, ‘বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে। সরকারের নরম নীতির কারণে কিছু মহল বার বার ষড়যন্ত্র করছে। একজন আইনজীবীকে কেন কুপিয়ে হত্যা করা হবে! দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সরকারকে আহ্বান করছি।’ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক বলেন, ‘এই মুহূর্তে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। তারা নিজেদেরকে সংখ্যালঘু দাবি করে। অথচ তারা মসজিদ ভাঙল, বাংলাদেশের পতাকার ওপর গেরুয়া পতাকা লাগিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ দেশদ্রোহীতার শামিল।’ দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোজাম্মেল হক জানান, এক পা ভারতে রেখে আপনারা বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারেন না। আপনাদেরও তো দেশের প্রতি কিছু দায়িত্ব আছে। আপনারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছেন, তা আমরা কোনভাবেই মেনে নেব না।’

সহিংসতায় তৃতীয় পক্ষের উস্কানি ছিল; দাবি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের

ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালে শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন কলেজের মধ্যে সহিংসতার পেছনে তৃতীয় পক্ষের উস্কানি ছিল বলে দাবি করেছেন সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে সোহরাওয়ার্দী কলেজের ক্যাম্পাসে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এ দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী লিখন ইসলাম বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী কলেজে প্রথম ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলাকালীন কয়েকটি কলেজ একত্রিত হয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি। এরপরও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা দায়িত্বশীল ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে পারত। কিন্তু তৃতীয় পক্ষের উস্কানি ও সংঘাতে অংশগ্রহণে তা সম্ভব হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমারা বিশ্বাস করি, যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা চরম নিন্দনীয় কাজ। এ জন্য আমাদের সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সহনশীল মনোভাব পোষণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আহ্বান জানাচ্ছি, আমরা যেন তৃতীয় পক্ষের উস্কানিতে দেশে সহিংসতার সৃষ্টি না করি। এই উস্কে দেওয়া তৃতীয় পক্ষের মানুষদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্তর্বর্তী সরকারকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম শাহরিয়ার বলেন, ‘কলেজ সহিংসতায় তৃতীয় পক্ষের বা অন্য মানুষদের উস্কানি ছিল। আমরা এই তৃতীয় পক্ষকে মনে করছি ইউসিবি নামের একটি সংগঠনকে। এই সংগঠনের প্রতিনিধি ঢাকার সব কলেজেই আছে। মূলত তাদের উস্কানিতে এই ধরনের সহিংসতার সূত্রপাত। সহিংসতার শুরু থেকেই কবি নজরুল বা সোহরাওয়ার্দীর কোন শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল না। আমাদের নাম ভাঙিয়ে বা সোহরাওয়ার্দী, কবি নজরুলের শিক্ষার্থী ছদ্মবেশে এমন সহিংসতার সৃষ্টি হয়।’

প্রতিবন্ধীদের ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা দিতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে

ধর্ম উপদেষ্টা আফম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। তারা সমাজের বোঝা নয়। প্রতিবন্ধীদের ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা দিতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে।’ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে রাঙ্গামাটির কাউখালি উপজেলার জামিয়া শায়খ জমিরউদ্দীন আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা আয়োজিত শিক্ষা বিষয়ক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সেমিনারে খালিদ হোসেন আরো বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের জন্য ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এ জাতীয় শিক্ষা তাদেরকে স্বনির্ভর হতে বিশেষভাবে সহায়তা করবে। তারা সমাজে সম্মানজনকভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। এছাড়া, এমন শিক্ষার মাধ্যমে তাদের মনোবল, দক্ষতা ও নৈতিকতার বিকাশ ঘটবে।’ উপদেষ্টা এ মাদ্রাসার ব্রেইল পদ্ধতিতে অন্ধ ছাত্রদের কুরআন, বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও সমাজ শিক্ষা দানের কার্যক্রম দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। আল মানাহিল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ হেলাল উদ্দিন বিন জমিরউদ্দীনের সভাপতিত্ব সেমিনারে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। সেমিনার শেষে উপদেষ্টা শায়খ জমিরউদ্দীন জামে মসজিদের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পূর্বে, মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে উপদেষ্টা হাটহাজারি থানা মডেল মসজিদের স্থান পরিদর্শন করেন।

জাবিতে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান-বিক্ষোভ; নেপথ্যে কী?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। অন্য দিকে, সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ‘মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত’ ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ নিয়ে সেখানে পাল্টা অবস্থান নেয় অন্যান্য বিভাগের এক দল শিক্ষার্থী। সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়েল উপাচার্য কামরুল হাসান বলেন,‘“উপস্থিত সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসব। সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে অতি দ্রুত মিটিং করে এই বিষয়ের সমাধান করা হবে।’ প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, চারুকলা বিভাগের ভবন নির্মাণকাজ শুরুর দাবি জানিয়ে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কিন্তু আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ না হওয়ায় তারা নতুন প্রশাসনিক ভবনের গেইটে তালা দেন। রাত সোয়া ১১টার দিকে চারুকলার শিক্ষার্থীরা নিজেদের হলে ফিরে যান। এরপর ১৫ মিনিট পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হল থেকে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এসে পৌঁছায়। তাদের হলের পাশে চারুকলার ভবন নির্মাণ না করতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। এ বছরের জুনে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অর্থায়নে চারুকলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যে স্থানটিতে ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সেটি অতিথি পাখির অভয়াশ্রম খ্যাত জলাশয়ের পাশে হওয়ায় ওই সময় একদল শিক্ষার্থী তাতে বাধা দেন। বাধা উপেক্ষা করে সেখানে অন্তত ১৫০টি গাছ কেটে নির্মাণকাজের শুরু করা হয়। এরপর সরকার পতনের পর এক দল শিক্ষার্থী ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। পরে ৩ নভেম্বর এক প্রশাসনিক সভায় সেখানে সাময়িকভাবে ভবন নির্মাণকাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভবন নির্মাণের পক্ষে অংশ নেওয়া চারুকলা বিভাগের ৫০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাঈদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ভবন নির্মাণকাজ শুরুর জন্য শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আচমকা রাতে এক দল শিক্ষার্থী আমাদের পেছনে অবস্থান নিয়ে আমাদেরকে টার্গেট করে উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়েছে।’ ‘আমাদের একজন শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে ‘অসম্মানজনক’ স্লোগানও দেওয়া হয়েছে। আমরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ ভবন নির্মাণের বিপক্ষে ইংরেজি বিভাগের জাহিদুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি নষ্ট করে ভবন নির্মাণ করা যাবে না। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ণ করে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে। একইসঙ্গে ভারতের টাকায় কোন ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।’ ‘চারুকলার জন্য যেখানে ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছিল সেখানে বহু গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়। এর জন্য চারুকলা শিক্ষক ময়েজউদ্দিনের মত আওয়ামী লীগের দোষরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’ শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম নাইম বলেন, ‘আমাদের চারতলা আবাসিক হলের সামনেই ছয়তলা একাডেমিক ভবন চাই না। সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখি জাবির যেই লেকে এসে বসে সেই লেকের সামনে এই ভবন নির্মাণ করা পরিবেশের চরম বিপর্যয়।’ ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষকরা কিংবা পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা এখানে যেন ভবন না হয় বার বার না করেছিল। তারপরও প্রকল্প পরিচালক ময়েজউদ্দিন গায়ের জোরে বিগত রেজিমে এই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গেল জুনে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অর্থায়নে জাবির চারুকলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যে স্থানটিতে ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সেটি অতিথি পাখির অভয়াশ্রম খ্যাত জলাশয়ের পাশে হওয়ায় ওই সময় এক দল শিক্ষার্থী এতে বাধা দেন। তাদের বাধা উপেক্ষা করে সেখানে অন্তত ১৫০টি গাছ কেটে নির্মাণকাজের শুরু করা হয়। এরপর সরকার পতনের পর এক দল শিক্ষার্থী ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গেল ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এক দল শিক্ষার্থী। তারা ভবনটির নির্মাণ স্থগিতের দাবি জানান। পরে ৩ নভেম্বর এক প্রশাসনিক সভায় সেখানে সাময়িকভাবে ভবন নির্মাণকাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্ট গ্রেগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ বন্ধ ঘোষণা

রাজধানীর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে কলেজের ফাদার ব্রাদার প্লাসিড পিটার রিবেরু সিএসসির সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।এতে বলা হয়, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের মর্নিং শিফট, ডে শিফট ও কলেজ শাখার সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা ও অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিদ্যালয়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মেরামতের কাজ অতি জরুরি এবং সময়সাপেক্ষ। সবকিছু অনুকূলে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম যথারীতি শুরু হবে।এর আগে রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলার প্রতিবাদে পার্শ্ববর্তী সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। কলেজটির শিক্ষক ও স্টাফরা জানান, কলেজের শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকদের কক্ষসহ অন্তত ৫০টি রুমে ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া ক্যান্টিনে হামলা করে টাকা লুট ও দ্বিতীয় তলায় শিক্ষক কক্ষে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা

দেশে সক্রিয় সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটি। সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে এই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিক বিস্তারিত ব্রিফ করা হবে। রাত সোয়া ১০টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।বৈঠকের বিষয়বস্তু জানানো না হলেও ধারণা করা হচ্ছে সম্প্রতি রাজধানীতে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের তথ্য দিতে চালু করা কোটা মুভমেন্ট হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সঙ্গে সব ছাত্র সংগঠনের বৈঠক চলছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানানো হবে।

সমন্বয়কদের বৈঠকে বসবে না কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ

রাজধানীর তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে বসবে না কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ। আজ সোমবার রাত ১০টায় এ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। আজ রাত ৮টা ৪০ মিনিটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুই কলেজের অধ্যক্ষ।কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, আলোচনায় বসার জন্য ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা যাচ্ছি না। এটা আলোচনার সময় না। শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত আছি। আলোচনার সময় নেই এখন। এখন আবার কিসের আলোচনা। অনেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি। এখন পর্যন্ত ৪০ শিক্ষার্থীর আহতের খবর পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় কলেজ বহন করবে।সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী কবি নজরুল কলেজ যেহেতু যাচ্ছে না সেহেতু আমরাও যাব না। আমাদের ছাত্রদের রক্তের ওপর দিয়ে আমরা কোনো সংলাপে যাব না। মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সঙ্গে কোনো বৈঠক করব না আমরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি তারা আমাদের এ সংকট সময়ে আমাদের কথা ভেবেছে। তবে আমরা চাই আমাদের শিক্ষামন্ত্রণালয় সবকিছু তদন্ত করুক। শিক্ষামন্ত্রণালয় যদি সবাইকে নিয়ে বসে তখন আমরা বসব। মোল্লা কলেজের সঙ্গে এখন আলোচনায় বসলে আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।এর আগে সন্ধ্যায় রাজধানী বাংলামটরের রূপায়ন টাওয়ারে তিন কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল এবং সমন্বয়কদের নিয়ে আলোচনার ডাক দেন কেন্দ্রীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। দুই কলেজের অধ্যক্ষ জানান, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তারিকুল ফোন করে বৈঠকে বসার আহ্বান জানান। তবে সমন্বয়ক তারিকুলকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।এর আগে দুই কলেজের অধ্যক্ষ জানান তাদের কলেজের কোনো শিক্ষার্থী নিহত হননি। অনেক শিক্ষার্থী আহত, তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় কলেজ বহন করবে।সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, কলেজের কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর আসেনি। অনেক পেজ ও মিডিয়া ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে কতজন আহত হয়েছে, তার সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।

যাত্রাবাড়ীতে তিন কলেজের সংঘাত: নাফিকে গুলি মারল কারা?

ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় তিন কলেজের সংঘর্ষে ড. মোল্লা মাহবুবুর রহমান কলেজের নাফি (১৭) নামে শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তবে কে বা কারা তাকে গুলি করেছে, সে ব্যাপারটি এখনো জানা যায়নি। সোমবার (২৫ নভেম্বর) দিনভর যাত্রাবাড়ী এলাকায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায়। এতে বহু শিক্ষার্থী হতাহত হন। এদের মধ্যে অন্তত ৪৫ শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন পেটে গুলিবিদ্ধ। কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে। কীভাবে তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র এল? আর তা যদি না হয় তাহলে এ গুলি কে করল? প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, যাত্রাবাড়ী এলাকায় শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ালেও পুলিশের সক্রিয় কোন ভূমিকা ছিল না। তারা শিক্ষার্থীদের দমাতে কোন ধরনের টিয়ারগ্যাস বা গুলি ছোড়েনি। তবে, পুলিশের ধারণা, শিক্ষার্থীদের এ সংঘর্ষে বহিরাগত কোন অপরাধী বা গোষ্ঠী এই কাজ করে থাকতে পারে। আহত ওই শিক্ষার্থীর নাম নাফি। তিনি ডেমরার ড. মোল্লা মাহবুবুর রহমান কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ডেমরার বামৈল বাজার এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। চিকিৎসকরা জানান, কলেজছাত্র নাফীর পেটে গুলি ও মাথায় ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নাফীর খালু মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, ‘সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মারামারির সংবাদ শুনে বাসা থেকে বের হয় নাফী। এর একটু পরেই সে গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তী স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ডেমরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমরা সংবাদ পেয়ে সেখান থেকে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসি। তার পেটে গুলি ও মাথায় ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। দেহে এখন রক্ত দেওয়া হচ্ছে। তবে কে বা কারা গুলি করেছে, সে বিষয়টি এখনো জানতে পারিনি।’ নাফির বড় ভাই নিলয় বলেন, ‘আমার ভাই মারামারি দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সে যখন গুলিবিদ্ধ হয় সেই সময় স্পটে কোন পুলিশ ছিল না। ছাত্রদলের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ গুলি করেছে। আমাদের ধারণা- কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা গুলি করেছে। কারণ, তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল।’ ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, যাত্রাবাড়িতে তিন কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ৪৫ জন শিক্ষার্থী এসেছেন। এদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ তার নাম নাফি। বর্তমানে জরুরি বিভাগে তার চিকিৎসা চলছে। তার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ও পেটে একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আজ তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মারামারিতে পুলিশ কোন গুলি করেনি। আমরা কোন অ্যাকশনে যায়নি। গুলিতে শিক্ষার্থী আহতের বিষয়টি আমরাও জেনেছি। আমাদের ধারণা বহিরাগত অপরাধীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’ বলে রাখা ভাল, পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদারের মৃত্যুর ঘটনায় রোববার (২৪ নভেম্বর) ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। পূর্বঘোষিত সেই কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওই সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গণ্ডগোলের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ওই হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে সোমবার (২৫ নভেম্বর) ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচির ডাক দেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে কবি নজরুল কলেজের সামনে আসেন। এ সময় নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ মাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানালে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডেমরা সড়ক সংলগ্ন মোল্লা কলেজে গিয়ে হামলা চালান। এ সময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে সংঘর্ষে জড়ান।

মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ছাত্রবেশে পরিকল্পিত হামলা, দাবি পুলিশের

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রাবাড়ীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ছালেহ উদ্দিন। সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকাল চারটার দিকে কলেজের সামনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে এই আশ্বাস দেন তিনি। ছালেহ উদ্দিন দাবি করেছেন, পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসীরা ছাত্রবেশে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করতে এই হামলা ও কোটি টাকার মালামাল লুটপাট হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে, মামলা হবে।’ এই হামলা ঠেকানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে দাবি করে ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকা দিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে আসার সময় হামলাকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু হামলাকারীরা সেটি তোয়াক্কা না করে একত্র হয়ে হামলা করেছে, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করেছে। এই হামলায় স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত। এ জাতীয় ঘটনা বরদাশত করা হবে না।’ এ জন্য এলাকাবাসীর সহায়তা চান তিনি। পুলিশ এ ঘটনা ঠেকাতে না পারার কারণ হিসেবে ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘৫ আগস্ট এই এলাকায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এখন ওই সময়ের কোন পুলিশ সদস্য নেই। সব পুলিশ সদস্য নতুন এবং সংখ্যায় কম। সৎ ও যোগ্য পুলিশ সদস্যদের বাছাই করে গ্রাম-গঞ্জ থেকে এখানে আনা হচ্ছে। ফলে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য এলাকাবাসীকে সহায়তা করতে হবে।’ লুটপাটের মালামাল কারও বাসায় থাকলে, তার বিষয়ে গোপনে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানান পুলিশ কর্মকর্তা ছালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘কলেজে যে ঘটনা ঘটেছে, এখন আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হবে। সবাইকে এ বিষয়ে সহায়তা করতে হবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে।’ এ সময় তিনি সবাইকে কলেজের সামনের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। ছালেহ উদ্দিনের বক্তব্যের পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা সবাইকে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করেন। এরপর কলেজের সামনে থেকে ধীরে ধীরে সবাইকে সরিয়ে দেয়া হয়। আশপাশের এলাকায় পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা মোতায়েন আছেন। সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের কয়েক শত শিক্ষার্থী গিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালান। ভাঙচুর ও লুটপাটের পর দুপুর একটার দিকে সেখানে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। এর মধ্যে কলেজের ভেতরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের কয়েকজন আটকা পড়েন। পরে তাদের ব্যাপক মারধর করা হয়। দুপুরে অন্তত তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় কলেজের ভেতর থেকে বের করতে দেখা গেছে। হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর আগে রোববার (২৪ নভেম্বর) ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জের ধরে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালান মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের দিনের হামলার জের ধরে সোমবার (২৫ নভেম্বর) মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালানো হয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী বিজয় আহমেদ বলেন, ‘গতকাল মাহবুবুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের কলেজে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। আমরা এর প্রতিশোধ নিতে এসেছি। মোল্লা কলেজে ঢুকে যা পেয়েছি, তা নিয়ে এসেছি।’ হামলার পর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে গিয়ে ভাঙচুরের চিত্র দেখা গেছে। কলেজটির দশ তলা ভবনের সব তলায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। লুটপাট করা হয়েছে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও আসবাব। মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের কলেজে আচমকা হামলা চালানো হয়। এরপর ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। কলেজের টাকা-পয়সাও লুট করা হয়েছে।’

মোল্লা কলেজ নিয়ন্ত্রণে নিল সেনাবাহিনী, বাইরে কৌতুহলী জনতা

ঢাকার ডেমরায় অবস্থিত ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) দিনভর সংঘর্ষের পর সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্ধ্যার আগেই পুরো কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। তবে, দিনভর সংঘর্ষে কলেজটির বিভিন্ন অংশের ভাঙাচোরা দেখতে বিকাল থেকে সেখানে কৌতুহলী জনতার ভিড় দেখা গেছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সরেজমিনে কলেজটির সামনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়৷ সেখানে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর টিম বাইরে অবস্থান করছে৷ সাংবাদিক ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না৷ বাইরের সড়কে কৌতুহলী জনতার ভিড়৷ এছাড়া ভবনের অধিকাংশ কাচ ভেঙে পড়েছে৷ ভবনজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাচের টুকরো৷ ক্লাসরুম, অফিস কক্ষ ও লিফটসহ ধ্বংস থেকে বাদ যায়নি কোন কিছু৷ স্থানীয়ারা বলছেন, ‘সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল থেকে সংঘর্ষ চলায় আশপাশের এলাকায় জনগণ আতঙ্কে ছিল। সন্ধ্যার পর তারা কলেজের পরিস্থিতি দেখতে এসেছেন।’ স্থানীয় সোবহান মিয়া বলেন, ‘সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকালে যখন সংঘর্ষ শুরু হয়, তখন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ পরিস্থিতি এখন শান্ত৷ কলেজের সামনে সেনাবাহিনী, এ জন্য দেখতে এলাম। ভাঙাচোরা ভবন দেখতে আসা নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘এমনিতেই দেখতে এলাম এখানকার অবস্থা৷ পুরো দিন সবাই আতঙ্কে ছিল। আমরাও আশপাশে ছিলাম। কলেজের ভেতরে প্রবেশের পর কয়েকজন শিক্ষক জানান, সকালে যখন হামলা হয় তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী আর শিক্ষক ক্যাম্পাসে ছিলেন। হামলা করে কলেজের অফিস কক্ষ, ল্যাব, ক্লাসরুমে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে৷ কলেজের গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট ও জিনিসপত্র চুরির অভিযোগও করেছেন তারা৷ ‘ভুল চিকিৎসায়’ মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদারের মৃত্যু কেন্দ্র করে রোববার (২৪ নভেম্বর) পুরান ঢাকার ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধরা সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও হামলা-ভাঙচুর চালায়। এতে ঢাকার ৩৫টিরও বেশি কলেজের শিক্ষার্থী অংশ নেন। এরই জেরে সোমবার (২৫ নভেম্বর) ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায় সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক হলে মেনে নেবে সরকার

শিক্ষার্থীদের যে কোন যৌক্তিক দাবি সরকার মেনে নেবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সোমবার (২৫ নভেম্বর) একনেকের সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান। প্রেস ব্রিফিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের তাদের ন্যায্য দাবিগুলো তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছি। ন্যায্য দাবি পূরণ করা হবে। রাস্তায় নামার প্রয়োজন হবে না। যৌক্তিক দাবি নিয়ে যারা এসেছে, তাদের সমাধানের আশ্বাস দেওয়ায় অনেকে তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে। যখন আমরা কোন যুক্তিসঙ্গত দাবি পেয়েছি, আমরা যথাযথ সমাধানের জন্য কাজ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় এমন বহু সংগঠন আছে, যাদের প্রায়ই রাস্তাঘাটে দেখা যায় বা দাবি আদায় করতে রাস্তা অবরোধ করে। এই সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান হবে? আমি একা সমস্যার সমাধান করতে পারব না। দাবি যৌক্তিক না হলে কোন অবস্থাতেই মেনে নেওয়া হবে না।’ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘যদি আন্দোলনের কারণে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, জনসাধারণের কষ্ট হয়, যেমন রেললাইন অবরোধ বা যাত্রীদের ওপর হামলা, তাহলে জনসাধারণের অনুভূতি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেই যাবে।’

ছাত্রদের বেহুদা আবদারের কাছে সরকার মাথা নত করায় অস্থির শিক্ষাঙ্গন

দেশের শিক্ষাঙ্গন অশান্ত হয়ে উঠেছে। টানা বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলন আর সংঘর্ষের মুখে অচল হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আরো বিনয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ছাত্রদের অন্যায্য দাবির কাছে সরকার মাথানত করায় দেশে এমন পরিস্থিতি।’ বাসে ওঠা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে বুধবার (২০ নভেম্বর) ঢাকার সায়েন্সল্যাব এলাকায় সংঘর্ষে জড়ান ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে পুরো ঢাকা সিটির সড়কপথ।এর ঠিক দুই দিন আগেই সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে রেললাইন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ব্যাহত হয় রেল যোগাযোগ।এ ছাড়া বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) হলের সিট বরাদ্দের জেরে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অচল হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।এমন নানা বাস্তবতায় গেল ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলে সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনেই চলছে অস্থিরতা। সবশেষ রোববার (২৪ নভেম্বর) থেকে তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় হতবাক দেশবাসী। দিন পেরিয়ে রাত তবুও শেষ হয়নি সংঘর্ষ।নিয়মিত আন্দোলন, সড়ক অবরোধ, সচিবালয় ঘেরাও এবং নানা দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়কে নামা যেন এখন রোজকার ঘটনা, যার ফলাফল অস্থিরতা বেড়েই চলেছে শিক্ষাঙ্গনে।চলমান এই সংঘাতের পেছনে অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনার অভাবকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ছাত্রদের নানা অন্যায্য দাবির কাছে মাথা নত করেছে সরকার এমন মন্তব্য করে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।’তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রদের উচিত ছিল পড়াশোনায় ফিরে যাওযা। কিন্তু, পড়াশোনায় ফিরে না গিয়ে ছাত্রদের একটি অংশ রাজনীতি বা রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহী হয়েছেন। ছাত্রদের অন্যায্য দাবির কাছে সরকারের নতি স্বীকার করা ঠিক হয়নি।’দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আরো বিনয়ী হওয়া প্রয়োজন ছিল বলেও মনে করেন এ বিশেষজ্ঞ।

আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

ভাঙচুর ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। রোববার পুলিশের উপ-পরিদর্শক এ কে এম হাসান মাহমুদুল কবীর বাদী হয়ে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় এই মামলা করেন। সোমবার আদালতের সূত্রাপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখারুম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গতকাল ২৪ নভেম্বর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের ৭-৮ হাজার শিক্ষার্থী বেআইনি জনতাবদ্ধে মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রসহ দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে। সরকারি অস্ত্রের (পিস্তল) গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরি, সরকারি ডিউটিতে ব্যবহৃত এপিসি গাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করা, জীবননাশের হুমকি দেওয়া এবং ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে। এছাড়া পুলিশের আর্মড পুলিশ কার (এপিসি) ও ডিউটিরত পুলিশের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে মোট দুই লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে পেনাল কোড ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারার অপরাধ আনা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের হামলা নিয়ে যা জানালেন মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষ

ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন দাবি করেছেন, রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলায় তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে কলেজ ক্যাম্পাসে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফকালে তিনি এ দাবি করেন। শিক্ষার্থীদের হামলায় ১২তলা ভবনের কোনো কাঁচ আর অক্ষত নেই জানিয়ে অধ্যক্ষ নয়ন বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ৫টি লিফট, কম্পিউটার ও সায়েন্স ল্যাব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হামলাকারী শিক্ষার্থীরা নগদ টাকা, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, সার্টিফিকেট, ৩ শতাধিক ফ্যান, প্রায় ৩০টির মতো ল্যাপটপ, অসংখ্য কম্পিউটারসহ মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস লুট করেছে।শিক্ষার্থীরা এমন করতে পারে আমরা ভাবিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সব ধবংস করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে কুচক্রি মহল কাজ করছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশ অন্যদিকে চলে যাবে। হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, হামলার সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা দূরে থেকে পরিস্থিতি দেখেছেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।’ এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে আহত অবস্থায় অন্তত ৩৫ জনকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মাথায় এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

দেশজুড়ে চলমান আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব ও সামগ্রিক সমস্যা নিয়ে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে বৈঠক ডেকেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।এতে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠনকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এর পূর্বে, সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকাল তিনটায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটি বৈঠক করে। এরপর আলোচনার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ ও নির্বাহী সদস্য মাহিন সরকার।

৭ কলেজের মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত

সাত কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকা ও মাতুয়াইলে দুদিন ধরে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের ফলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের মঙ্গলবারের পরীক্ষা ‘অনিবার্য কারণে’ স্থগিত করা হয়েছে। এ পরীক্ষার নতুন সময়সূচি ‘শিগগিরই’ ঘোষণা করা হবে। তবে অন্যান্য পরীক্ষার সময়সূচির অপরিবর্তিত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে সাত কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়। এর মধ্যে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত দুইদিন ধরে পুরান ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এর মধ্যে সোমবার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষের মধ্যে মাঝপথে ইতিহাস পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল দুই কলেজই রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের মধ্যে।

হামলার পেছনে ইউসিবি গ্রুপ, মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ক্ষতি ৭০ কোটি

ঢাকার যাত্রাবাড়ির কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলায় ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) প্রায় ৭০ কোটি টাকার মত ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন। সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকালে কলেজ ক্যাম্পাসে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফকালে তিনি এ দাবি করেন।ওবায়দুল্লাহ নয়ন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হামলায় আমাদের ১২তলা ভবনের কোন কাঁচ আর অক্ষত নেই। পাঁচটি লিফট, কম্পিউটার ও সায়েন্স ল্যাব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হামলাকারী শিক্ষার্থীরা নগদ টাকা, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, সার্টিফিকেট, তিন শতাধিক ফ্যান, প্রায় ৩০টির মত ল্যাপটপ, অসংখ্য কম্পিউটারসহ মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস লুট করেছে। এতে করে প্রায় ৭০ কোটির মত ক্ষতি হয়েছে।’এ সময় তিনি ঘটনার জন্য ন্যাশনাল মেডিকেল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে বলে দাবি করেন।এছাড়া শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইউসিবি নামের একটি গ্রুপ থেকে হামলার উসকানি ও ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নয়ন।তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এমন করতে পারে আমরা ভাবিনি। আমাদের সব ধবংস করে দিয়েছে। দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে ফেরাতে শিক্ষার্থীদের কলেজমুখী করার বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে কুচক্রি মহল কাজ করছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশ অন্য দিকে চলে যাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা আমরা চাই না।’হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ভূমিকা রাখেনি বলেও অভিযোগ করেন অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু, হামলার সময় তারা দূরে থেকে পরিস্থিতি দেখেছেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি।’যেভাবে সংঘর্ষের শুরু: ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসকের গাফিলতিতে বন্ধুর মৃত্যুর অভিযোগে রোববার (২৪ নভেম্বর) দফায়-দফায় সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থীরা। মেডিকেল ঘেরাও কর্মসূচি পরে রূপ নেয় সংঘর্ষে। এ সময়, হাসপাতালটির পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজেও ভাঙচুর চালানো হয়। ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের ভূমিকা নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ উঠে। রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে দলে-দলে আসতে থাকেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের চিকিৎসায় গাফিলতি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে সোমবার (২৪ নভেম্বর) মৃত্যু ঘটে অভিজিতের। ওই ঘটনার বিচার চাইতে হাসপাতাল ঘেরাও ও ভাঙচুর করেন উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা।এক পর্যায়ে হাসপাতালের মূল ফটক ছেড়ে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের দিকে এগিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। মৃত্যুর বিচার চেয়ে হাসপাতাল ঘেরাওয়ের কর্মসূচি রূপ নেয় কলেজে হামলায়। এর আগে দুই দফা অবস্থান নিলেও ন্যাশনাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। হামলার সময় ওই দুই কলেজেই পরীক্ষা চলছিল। ভাঙচুর শুরু হলে পরীক্ষার্থীরা এলোপাতাড়ি এদিক-ওদিক ছুটতে থাকেন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে দিলে জড়ো হতে থাকেন কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। হামলা-ভাঙচুরের পাশাপাশি অর্থ লুটপাটের অভিযোগ করেন তারা। উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ঘটনাস্থলে শুরু থেকেই পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও সংঘর্ষ ঠেকাতে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ থাকলেও হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে তারা অবগত নন বলে জানান লালবাগ জোনের পুলিশ কর্মকর্তা। দুই কলেজের পাশাপাশি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ভেতরেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

তিন কলেজের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ/দায়ভার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা-পুলিশ প্রধানের, পদত্যাগ দাবি

ঢাকার যাত্রাবাড়ির ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সাথে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা-পুলিশ প্রধানের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের দাবি, এক দিন আগেই ঘোষণা দিয়ে এক দল শিক্ষার্থী এসে ভাঙচুর করল, অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধুই চেয়ে দেখল। উদ্ভূত এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না নিতে পারার সব দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা-পুলিশ প্রধানের। অবিলম্বে এই দায় নিয়ে তাদেরকে পদত্যাগ করতে হবে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকালে সংঘর্ষের কারণ ও প্রশাসনের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা এসব দাবি করেন। হামিমুল কবির নামে ড. মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী বলেন, ‘সকাল থেকেই আমরা আমাদের কলেজের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। তখন আমরা ছিলাম ২০০ জনের মত, কিন্তু আচমকা তারা হাজার-হাজার শিক্ষার্থী এসে একসঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় কারো হাতে রামদা, কারও হাতে বিদেশি অস্ত্র এমনকি বোমাও ছিল।’ তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে আমরা পিছু হটি। এ সময় আমাদের বেশকিছু বন্ধু-বান্ধব মারাত্মকভাবে আহত হয়। এই সুযোগে তারা কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে ও ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় ভেতরে থাকা বেশকিছু শিক্ষার্থী ও কর্মচারীকে তারা বেধড়ক মারপিট করে। আমরা শুনতে পাচ্ছি, কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের এই সন্ত্রাসী হামলায় আমাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থী মারাও গেছে।’ সংঘর্ষের মূল সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে আব্দুল হাকিম নামে শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই ঘটনার মূল সূত্রপাত হয় ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। সেখানে ড. মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়ে মৃত্যু হয়। এর প্রতিবাদে মোল্লা কলেজসহ ২৫টি কলেজ একত্রে আমরা আন্দোলন করতে গিয়েছিলাম। সেদিন সোহরাওয়ার্দী কলেজেও আমাদের সঙ্গে ছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলাকালীন সোহরাওয়ার্দী কলেজের কিছু শিক্ষার্থী টাকা খেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে চলে যায়। এমনকি সেদিন তারা আমাদের কিছু ছেলেকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। এভাবে তারা দুই দিন আমাদের পিটিয়েছে, তারপরও আমরা কিছু বলিনি। এরপর আমরা সোহরাওয়ার্দী কলেজের দিকে এগিয়ে গেলে ভেতর থেকে ককটেল ও গুলি ছোড়া হয়। তখন আমাদের স্টুডেন্টরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভেতরে ঢুকে যায় ও ভাঙচুর চালায়। এরপর তারা আজকে সাতটি কলেজ মিলে আমাদের মারতে এসেছে।’ কামরুজ্জামান নামে স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, ‘মোল্লা কলেজের প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট, প্রতিটি ল্যাব সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুলের শিক্ষার্থীরা এসে তছনছ করে ফেলেছে। কলেজের ভেতরে এমন একটা জিনিস নেই, যা অক্ষত অবস্থায় আছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রশাসন যদি সময়মত আসত ও যথাযথ ব্যবস্থা নিত, তাহলে আজকের এ অবস্থা হত না। তাদের হামলায় আমাদের অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। শুনেছি, বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। আজকের এই পরিস্থিতির জন্য পুরোপুরি দায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তামাশা দেখেছে।’ মুক্তার আলী নামে আরেক স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘এক দিন আগেই ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরা ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে এসে ভাঙচুর করেছে। এমনকি তাদের হামলায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর পাশাপাশি শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের কী কিছুই করার ছিল না? নাকি তারা দুই পক্ষের মারামারি দেখে মজা নিয়েছে? আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ কী? তারা চাইলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। এই যে আজকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর প্রাণ গেল, তার দায় কি রাষ্ট্র নেবে?’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, এই ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে পুলিশ প্রধানসহ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করা উচিত। তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই আজ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেহাল দশা।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অ্যাকশনে গেলে আরো রক্তপাত হত

ঢাকার যাত্রাবাড়িতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সাথে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অ্যাকশনে গেলে আরো রক্তপাত হতো বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সোমবার (২৫ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন। আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘শত চেষ্টা ও বসে সমাধান করার আহ্বান জানানোর পরও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে জড়ানো থেকে আটকানো গেল না। শিক্ষার্থীদের এগ্রেসিভনেস ও প্রস্তুতি দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও স্ট্রিক্ট অ্যাকশনে যায়নি। কোন প্রকার অ্যাকশনে গেলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ ও রক্তপাত হত।’ তিনি আরো বলেন, ‘সব পক্ষকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। একত্রে দেশ গড়ার সময়ে সংঘর্ষের মত নিন্দনীয় কাজে জড়ানো দুঃখজনক। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান অন্তর্বর্তী সরকারের

শিক্ষার্থীদের কোন ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এ ধরনের সংঘাতের পেছনে কোন ধরনের ইন্ধন থাকলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।’ ঢাকায় কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সোমবার (২৫ নভেম্বর) এসব কথা বলেন। শফিকুল আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে, সরকার তার প্রতি নজর রাখছে। আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের কোন ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’ প্রেস সচিব বলেন, ‘এ ধরনের সংঘাতের পেছনে কোন ইন্ধন আছে কি না, আমরা খতিয়ে দেখছি।’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দেশের অন্য যে কোন অঙ্গনে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির যে কোন চেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বলে রাখা ভাল, সোমবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এর আগে, রোববার (২৪ নভেম্বর) রাতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে রণক্ষেত্র যাত্রাবাড়ী, বিকালে তিন কলেজের সাথে বসবে ডিএমপি

ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠকে বসবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকাল চারটার দিকে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ দিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ১১ জনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অনেকেই মাথায় আঘাত পেয়েছেন। এর আগে, সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শত শত শিক্ষার্থী যাত্রাবাড়ীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় কলেজটির বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম নিয়ে যায় হামলাকারীরা। পরে দুপুর একটার দিকে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ছাড়াও সংঘর্ষ ঘটে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় যাত্রাবাড়ী এলাকা। ওই ঘটনায় অনেকে আহত হলে তাদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ, র‌্যাবসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল থেকেই পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে থাকেন কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা যাত্রাবাড়ীর দিকে রওনা হয়। এক পর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে স্লোগান দিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা-ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। এর পূর্বে, রোববার (২৪ নভেম্বর) ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জের ধরে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা-সংঘর্ষ: তিন শিক্ষার্থী নিহতের দাবি কর্তৃপক্ষের

ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা ও ভাঙচুর ও শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় শিক্ষকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে। সেই সাথে এ হামলা, লুটপাটের ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ডক্টর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ডক্টর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ গভীর শোক ও ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, আজ আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। তথাকথিত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বহিরাগত এক দল সন্ত্রাসী ঢুকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ হামলায় তিনজন শিক্ষার্থী নির্মমভাবে প্রাণ হারায় এবং শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’ এতে আরো বলা হয়, ‘এ হামলায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের কিছু ছাত্র নামধারী ব্যক্তি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মদদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। হামলাকারীদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী নয়, বরং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত ব্যক্তিবর্গ। হামলাকারীরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, সম্পদ ও শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত মালামাল লুট করেছে। এ ছাড়া, কলেজ ভবনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়সহ বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করে।’ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ বার বার প্রশাসনের স্থানীয় ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতার আবেদন করলেও, এ পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।’ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় তিনটি দাবি তুলে বলা হয়, ‘আমরা ডক্টর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আহ্বান জানাই।’ দাবিগুলো হল হামলার প্রকৃত দোষীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান; শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কলেজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও লুটকৃত সম্পদ উদ্ধার ও ক্ষতিগ্রস্ত নথি পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলছি, এ ন্যক্কারজনক ঘটনার পরও আমাদের সবাইকে ধৈর্য ও সংহতি বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।’

যাত্রাবাড়ীতে ৩ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা-ভাঙচুর করেছে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় কলেজটির বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম নিয়ে যায় হামলাকারীরা। সোমবার (২৫ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শত শত শিক্ষার্থী গিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালায়। পরে বেলা ১টার দিকে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে যাত্রাবাড়ী এলাকা। এর আগে সকাল থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে থাকেন কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা রওনা করে যাত্রীবাড়ীর দিকে। দুপুর ১২ টার স্লোগান দিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা-ভাঙচুর চালায় তারা। এ সময় কলেজটির বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম নিয়ে যায় হামলাকারীরা। এর আগে গতকাল রোববার ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জের ধরে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের দিনের হামলার জের ধরে আজ মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালানো হয়।

ঢাকা কলেজের সব ক্লাস বন্ধ

ঢাকা কলেজের সব ক্লাস আজ সোমবার বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে কলেজটির প্রশাসন। গতকাল রবিবার রাতে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার ঢাকা কলেজের কোনো শিক্ষার্থী কোথাও কোনো ধরনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলে অথবা আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কোনো কাজ করলে তার দায় কলেজ প্রশাসন নেবে না। সুতরাং, সব শিক্ষার্থীকে বাইরের যে কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কাজ না করার অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে হাতে লেখা এক বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যক্ষ জানান, ‘অনিবার্য কারণবশত ২৫ নভেম্বর ঢাকা কলেজের সব ক্লাস স্থগিত করা হলো। গতকাল রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং কবি নজরুল কলেজে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার পর নতুন করে ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা দিয়েছেন কলেজ দুটির শিক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা কলেজের সব ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হলো। দ্রুত সংস্কার করে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবেদ্রুত সংস্কার করে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবেএদিকে, গত বুধবার সিটি কলেজের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। সে দিনের পর থেকে ক্লাস বন্ধ রয়েছে সিটি কলেজে।