ভ্যাট আইন এখনও ল্যাংড়া-খোঁড়া: এনবিআর চেয়ারম্যান


ভ্যাট আইন এখনও ল্যাংড়া-খোঁড়া: এনবিআর চেয়ারম্যান

ভ্যাট আইনকে এখনও "ল্যাংড়া-খোঁড়া" আখ্যা দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। তার মতে, দেশের ভ্যাট আইন জটিল হলেও সেটিকে সহজ করা সম্ভব, যদি সবার জন্য একক হারে ভ্যাট কার্যকর করা যায়।

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘কর্পোরেট কর ও ভ্যাট সংস্কার: এনবিআরের জন্য ন্যায়সংগত দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “২০১২ সালে ভ্যাট আইন করা হলেও কার্যকর হতে সাত বছর লেগেছে। এর মধ্যে অনেক দেনদরবার ও আলোচনার পরও আইনটি ল্যাংড়া-খোঁড়া রয়ে গেছে।”

সংলাপে মূল গবেষণা প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্স অ্যাসোসিয়েট তামিম আহমেদ। এতে ন্যায়সংগত কর কাঠামোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ গবেষণায় সহায়তা করে ক্রিসচিয়ান এইড। বিশেষ বক্তা হিসেবে অংশ নেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সংস্কার পরামর্শক কমিটির প্রধান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট অডিট- চলতি দায়িত্ব) সৈয়দ মুসফিকুর রহমান এবং সংস্কার কমিটির সদস্য ফরিদ উদ্দিন।

এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান আরও বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের প্রস্তাবিত কাঠামোতে যেমন সবার জন্য একক হারে ভ্যাট রাখা হয়েছিল, তেমন কাঠামোই সবচেয়ে কার্যকর। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তালিকাভুক্ত থেকে ভ্যাটমুক্ত থাকবে, আর যাদের আয় আছে তারা আয়কর দেবে। “এটাই সিম্পল মডেল, এর বিকল্প নেই।”

ভ্যাট অডিট প্রসঙ্গে তিনি জানান, নানা অভিযোগের কারণে অডিট কার্যক্রম আপাতত পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। “প্রয়োজনে কেয়ামত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে,” বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এখনো অডিট বাছাই ‘ম্যানুয়ালি’ হওয়ায় কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ প্রভাব ফেলে। তাই সিস্টেম পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় না হওয়া পর্যন্ত এ অডিট চালু হবে না। ভবিষ্যতে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যেখানে প্রতি তিনটি অডিটের একটি হবে সেইসব প্রতিষ্ঠানের, যাদের কখনো অডিট হয়নি।

কর ছাড় প্রসঙ্গেও তিনি সমালোচনামূলক মন্তব্য করেন। তার ভাষায়, “অনেকে মনে করেন কর দিতে হয় না কেবল দুইদিন— একদিন রোদ ওঠে, আরেকদিন মেঘলা থাকে।”

কর প্রশাসনে বিদ্যমান জটিলতা স্বীকার করে আব্দুর রহমান খান বলেন, স্বচ্ছ প্রশাসনের লক্ষ্যেই সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কর নীতি ও প্রশাসনকে আলাদা করা হচ্ছে, যাতে চেয়ারম্যানের মূল মনোযোগ রাজস্ব আদায়ে দেওয়া যায়।

তিনি আরও জানান, দেশে নিবন্ধিত অধিকাংশ কোম্পানি কর দেয় না, কারণ সেগুলো কার্যত অচল। “বনে যেমন এক লাখ গাছ লাগালে ৯০ হাজার টেকে না, বাকি ১০ হাজারেই বন তৈরি হয়। কোম্পানি নিবন্ধনও অনেকটা তেমন।” তার মতে, বন্ধ করার জটিল প্রক্রিয়া এবং ভিজিটিং কার্ডে একাধিক কোম্পানির মালিকানা প্রদর্শনের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান নামেই টিকে আছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×