নতুন সরকারের অঙ্গীকার জরুরি ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায়
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১০:০৫ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২৫

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং আর্থিক খাতের ওপর জনআস্থা পুনর্গঠনে আগামীতে নির্বাচিত সরকারকে এখনই সুস্পষ্ট ও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিতে হবে—এমন আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকরা।
রাজধানীর বনানীতে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) এক সেমিনারে জানা যায়, আর্থিক খাতের দুর্বলতা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির ভিত্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের পর দায়িত্ব নেওয়া নতুন সরকারের জন্য এটি হবে একটি অবিলম্বে গ্রহণযোগ্য চ্যালেঞ্জ।
সেমিনারটির আয়োজন করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর সেন্টার ফর ম্যাক্রোইকোনমিক অ্যানালাইসিস (সিএমইএ)। অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি)-এর সহায়তায় এটি অনুষ্ঠিত হয় ‘মান্থলি ম্যাক্রোইকোনমিক ইনসাইটস (এমএমআই)’ সিরিজের অংশ হিসেবে।
দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অবস্থা, বিনিয়োগ স্থবিরতা, বাণিজ্যনীতি এবং আর্থিক খাত সংস্কার বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, নীতিনির্ধারক এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার।
সেমিনারের শুরুতে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম বলেন, রাজস্ব আদায় এখনো বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এনবিআর-এ নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পৃথক করার মতো কাঠামোগত সংস্কার প্রক্রিয়ায় থাকলেও তা এখনও পূর্ণাঙ্গ নয়।
প্রধান আলোচক হিসেবে পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ড. সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো বিনিয়োগনির্ভর। বেসরকারি ঋণের প্রবাহ ধীর, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে, বিনিয়োগের হার জিডিপির প্রায় ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে—ফলে প্রবৃদ্ধির হার কমছে। তবুও সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনির্ভর খাত—যেমন তৈরি পোশাক ও ফুটওয়্যারের প্রতিযোগিতার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশাল ও ক্রমবর্ধমান বাজার হওয়ায়, এখন সময় এসেছে প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য চুক্তির দিকে অগ্রসর হওয়ার। কেবল শ্রমনির্ভর সুবিধার উপর ভর করেই চলবে না। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো আরও ভালো চুক্তি করলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। এটি আমাদের জন্য এক নতুন ও জরুরি চ্যালেঞ্জ।
সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর শুল্কনীতি বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় আমরা অনুকূল বাণিজ্য চুক্তিতে পিছিয়ে আছি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য সরকারের প্রতি আস্থা তৈরি করা জরুরি।
প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে গৃহীত নীতি ও পদক্ষেপগুলো আগামী ১ থেকে ৩ বছর ধরে অব্যাহত রাখতে হবে। তাই নির্বাচিত নতুন সরকারকে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার এই বৃহত্তর লক্ষ্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাই কমিশনার ক্লিনটন পোবকে। তিনি বলেন, এমএমআই ইভেন্টটি জটিল অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো বোঝার এবং সেগুলোর সাথে কার্যকরভাবে জড়িত হওয়ার একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের রাজস্ব জায়গা সীমিত। করনীতি, ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং জিডিপি হিসাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্কার জরুরি, যদিও তা কষ্টদায়ক হতে পারে। এনবিআরের নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের মধ্যে স্পষ্ট পৃথকীকরণ না থাকলে অর্থবহ অগ্রগতি অসম্ভব।
প্যানেল আলোচনার পর মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব প্রশাসনের ডিজিটালাইজেশন নিয়ে অংশগ্রহণমূলক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।