সোনামসজিদ স্থলবন্দরে রাজস্ব ঘাটতি ২১৪ কোটি টাকা


সোনামসজিদ স্থলবন্দরে রাজস্ব ঘাটতি ২১৪ কোটি টাকা

২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ সোনামসজিদ স্থলবন্দরে রাজস্ব ঘাটতি। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এই বন্দরে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১৪ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার টাকা।

বন্দরের কাস্টমস বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১,১২২ কোটি ৪১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ৯০৭ কোটি ৮০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৯ দশমিক ১২ শতাংশ ঘাটতি।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হওয়া, সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি, এবং ফল ও কৃষিপণ্যসহ উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি হ্রাস—এইসব কারণে রাজস্ব আদায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সোনামসজিদ দিয়ে ফল আমদানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষিপণ্য, গোখাদ্য ও পাথরের আমদানিও আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে।

সিএন্ডএফ এজেন্টদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই বন্দরে এখন শুধু পাথরের আমদানিই কিছুটা হচ্ছে। কারণ, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের অসহযোগিতায় ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারিয়েছেন।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “অবকাঠামো সমস্যা, নাজুক সড়ক ব্যবস্থা, এবং রাজনৈতিক প্রভাব ও চাঁদাবাজির কারণে সম্ভাবনাময় বন্দরটি মুখ থুবড়ে পড়েছে।”

ব্যবসায়ী মো. আরিফুর রহমান জানান, “ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে পারেনি। বিশেষ করে যেসব পণ্যে উচ্চ শুল্ক রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এলসি দেওয়া হয়নি। ফলে এসব পণ্যের আমদানি কমে যায়, যা সরাসরি রাজস্ব ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বন্দর কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নুরুল হাসান বলেন, “আলু, পেঁয়াজ, গুড়সহ বেশ কয়েকটি কৃষিপণ্য না আসায় রাজস্ব আহরণ ব্যাহত হয়েছে। তবে রাজস্ব বেশি আদায় হওয়া মানেই বিদেশে বেশি মুদ্রা যাচ্ছে। এবার দেশেই এইসব পণ্যের উৎপাদন ও দাম সহনীয় থাকায় আমদানির প্রয়োজন হয়নি।”

তিনি আরও জানান, “সরকার এখন আমদানিনির্ভরতা কমানোর নীতিতে কাজ করছে, যার প্রভাব রাজস্ব আদায়ে পড়েছে।”

গত তিন অর্থবছর ধরেই সোনামসজিদ স্থলবন্দরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৬৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪১৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ঘাটতি হয়েছে; যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১,০৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, আদায় হয়েছে ৬১৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

তবে ২০২১-২২ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল যথাক্রমে ১৪২ কোটি ৩১ লাখ ও ২৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বেশি।

এক আমদানিকারক তরিকুল ইসলাম জানান, “ডলার সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির ফলে বাণিজ্য ধাক্কা খেয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল। আশা করি, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে আমদানি-রফতানিতে গতি ফিরবে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×