
দেশজুড়ে লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান জনস্বার্থে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং র্যাব মহাপরিচালকের কাছে এই নোটিশ পাঠান।
আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও, পরবর্তী সময়ে দেশে তীব্র নিরাপত্তা সংকট ও ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিপ্লব-পরবর্তী অস্থির পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন থানা ও নিরাপত্তা স্থাপনা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়, যার বড় অংশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই অবৈধ অস্ত্র অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের হাতে থাকায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা গুরুতর হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী সহিংসতার আশঙ্কা ও প্রাণনাশের ঝুঁকি স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নোটিশে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখে একইসঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই সনদ গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। তবে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় নির্বাচনী পরিবেশ কার্যত ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হয়েছে। এর উদাহরণ হিসেবে নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ছাড়া নির্বাচন আয়োজন করা হলে তা প্রার্থীদের প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়াবে এবং সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত নাগরিকদের ‘জীবনের অধিকার’ লঙ্ঘিত হবে।
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘জুলাই সনদ গণভোট’ একটি জাতীয় ঐকমত্যভিত্তিক বিষয় এবং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হওয়ায় এতে সহিংস প্রতিযোগিতার সুযোগ নেই। বিপরীতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রক্রিয়া। তাই অবৈধ অস্ত্রের উপস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়।
এই প্রেক্ষাপটে নোটিশে দাবি জানানো হয়েছে, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখে জুলাই সনদের ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হলেও, লুণ্ঠিত সব অস্ত্র উদ্ধার ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখতে হবে।
নোটিশে আরও জানানো হয়েছে, আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে।