আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানোর মামলা: আজ ১১তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ


আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানোর মামলা: আজ ১১তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ

আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মতো ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ (১৫ অক্টোবর) সাক্ষ্যগ্রহণের ১১তম দিন। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে এদিন আরও দুজন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি দেবেন বলে জানা গেছে।

এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দশম দিনে, গত ৯ অক্টোবর, শহীদ ওমর ফারুকের বাবা চান মিয়া আদালতে হাজির হয়ে ঘটনার দিন, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, কী ঘটেছিল তা বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি ছিলেন মামলার ১৪তম সাক্ষী। জবানবন্দির পর তাকে জেরা করেন পলাতক আসামিদের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে আজকের তারিখে সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়।

সেদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সাইমুম রেজা তালুকদার এবং আবদুস সোবহান তরফদার।

এর আগে ৮ অক্টোবর, মামলার নবম দিনে সাক্ষ্য দেন এএসআই মনিরুল ইসলাম। তিনি জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। তার আগের দিন, ৭ অক্টোবর, সাক্ষ্য দেন কনস্টেবল রাশেদুল ইসলাম, যিনি ঘটনার দিনের চিত্র আদালতে উপস্থাপন করেন।

২৮ সেপ্টেম্বর সপ্তম দিনে জবানবন্দি দেন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ও একাত্তর টিভির সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম অনিক। তার সাক্ষ্য নিয়ে পলাতক আট আসামির আইনজীবীরা জেরা শেষ করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর অনিকসহ আরও একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।

২৪ সেপ্টেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী শফিকুল ইসলামের জেরা শেষে ৮ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। শফিকুল একই সঙ্গে ২৩ সেপ্টেম্বরও আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন। ওই দিন আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মতিবর রহমানেরও সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

১৮ সেপ্টেম্বর শেষ হয় মামলার তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা। এর আগে, ১৭ সেপ্টেম্বর দুজন এবং ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনে শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান সাক্ষ্য দেন।

মামলার শুনানি শুরু হয় ১৪ সেপ্টেম্বর, যখন প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম উদ্বোধনী বক্তব্যে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সংঘটিত নৃশংস ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। এরপর ২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়।

ওই সময় উপস্থিত থাকা আটজন আসামির মধ্যে সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করে আদালতে বলেন, "আমি রাজসাক্ষী হতে চাই। মামলার বিষয়ে যা কিছু জানি, সব বলবো।" ট্রাইব্যুনাল তার দোষ স্বীকারের বক্তব্য রেকর্ড করে এবং লিখিত আবেদন করতে বলেন। পরে সে আবেদন জমা দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজসাক্ষী হন।

আটজন আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন, তাদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামও আছেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, এসআই আবজাল এবং কনস্টেবল মুকুল।

মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রসিকিউশন দাখিল করে গত ২ জুলাই। এতে ৩১৩ পৃষ্ঠার লিখিত বিবরণ, ৬২ জন সাক্ষীর তালিকা, ১৬৮ পৃষ্ঠার প্রমাণপত্র এবং দুটি পেনড্রাইভ সংযুক্ত করা হয়। আদালত এসব উপাত্ত পর্যালোচনা করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটে। পুলিশি গুলিতে নিহত হন ছয় তরুণ। পরে তাদের মরদেহ পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় একটি দেহে তখনও প্রাণ ছিল, তবে তাকেও জীবন্ত আগুনে ফেলে হত্যা করা হয়। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের এক মাস পর, ১১ সেপ্টেম্বর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া এখনো চলমান, আর আজ ১১তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে ঢাকায়।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×