মেট্রোরেল দুর্ঘটনা

‘বাবা ঘুমাচ্ছে মা, তুমি কান্না করো না’


‘বাবা ঘুমাচ্ছে মা, তুমি কান্না করো না’

“আমার সন্তানরা এখনো জানে না তাদের বাবা আর ফিরবে না। ওরা বলে, ‘বাবা ঘুমাচ্ছে মা, তুমি কান্না করো না।’ আমি কীভাবে বুঝাই, তাদের বাবা আর জাগবে না।” এভাবেই চোখের জলে ভেঙে পড়েন ঢাকার মেট্রোরেলে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তার।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম ছিলেন জলিল চোকদার ও হনুফা বেগম দম্পতির ছেলে। পরিবারে তিনি ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, যাঁর ওপর নির্ভর করত পুরো সংসার।

গতকাল বিকেলে ঈশ্বরকাঠির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বামীর জানাজা ও দাফনের পরও স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন আইরিন আক্তার, স্থানীয়দের কাছে যিনি ‘পিয়া’ নামে পরিচিত। বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন তিনি। দুই ছোট সন্তানকে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, “ওদের বাবার পূর্ণতা কে দেবে? বাবা তো আর আসবে না। আমার ছেলের বাবার বুক ছাড়া ঘুম আসে না। সারারাত বাবাকে খুঁজছে আর ছটফট করছে। ওরা তো অবুঝ, বলতে পারে না বাবা কী জিনিস!”

শোকে কাতর আইরিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকারকে বলেন আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে। সরকার কেন সচেতনভাবে কাজ করল না? তারা জানত, পথচারীরা নিচ দিয়ে হাঁটবে। তাহলে ওপরে কাজটা সচেতনভাবে করল না কেন? তারা সব কাজ অবহেলাভাবে করে। সরকার সচেতন থাকলে এত অল্প বয়সে আমার স্বামী মারা যেত না; আমার কলিজারা বাবাহারা হতো না।”

নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাকী দাস জানান, “উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার জানাজা ও দাফনে অংশ নিয়েছি। আমরা সার্বক্ষণিক তার পরিবারের পাশে রয়েছি।”

মেট্রোরেল নির্মাণস্থলে ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনায় এক মুহূর্তে নিভে গেছে এক পরিবারের সকল আলো। এখন শুধু স্ত্রীর আহাজারি আর সন্তানদের অজানা অপেক্ষা।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×