নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ আহরণে মেঘনায় নামবেন লক্ষ্মীপুরের লক্ষাধিক জেলে
- লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৫:২১ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
মা ইলিশের প্রজনন রক্ষায় লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ শুরু হবে। জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের অভিযানে (গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত) ২২ দিন নদীতে ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখে জেলেরা।
লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাত ১২টায়। সেজন্য নদীতে মাছ আহরণের জন্য জেলেরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে চাঁদপুরের ষাটনকল এলাকা পর্যন্ত মেঘনা নদীতে লক্ষ্মীপুরের লক্ষাধিক জেলে শনিবার মধ্যরাতে মাছ আহরণে নদীতে নামবেন।
মা ইলিশ রক্ষায় সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, লক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ জেলে তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। জেলা টাস্কফোর্সের দাবি, এ বছর মা ইলিশ রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়, অভিযানকালে অসাধু জেলেদের আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া অভিযানকালে কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, আটককৃত নৌকা নিলামে বিক্রি করা হয়েছে এবং উদ্ধারকৃত ইলিশ মাছ গরিব, দুস্থ ও এতিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর উপকূল এলাকায় অধিকাংশ মানুষ মৎস্য আহরণ ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জেলেরা অধিকাংশই “গুল্টিজাল” ব্যবহার করে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করেন। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধন করায় তাদের আটক করে মামলা ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে।
২২ দিন বেকার থাকার পর নৌকা ও জাল মেরামত করে জেলেরা মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জাল ও নৌকা মেরামতের কাজে জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলে আনোয়ার মাঝি ও জহির হাওলাদার বলেন, “সরকার মা ইলিশ রক্ষায় যে অভিযান দেয়, তা আমরা মানি। তবে কিছু অসাধু জেলে নদীতে নেমে মাছ ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষে নদীতে নেমে আমরা মাছ পাই না। আমরা ঋণ করে নতুন জাল ও নৌকা মেরামত করে নদীতে নামতে হয়। নদীতে নেমে মাছ না পেলে খুব খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। নিষেধাজ্ঞা সময়কালে সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়, তা দিয়ে কিছুই হয় না। এখনকার বাজারের যে অবস্থা, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি, সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালানো আমাদের অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এবার তা অনেকটাই সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকায় কোনো জেলেই নদীতে নামতে পারেনি। আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বসে আছি। দেখা যাক, অভিযান শেষে কী পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়।”
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, “ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। ডিম ছাড়ার জন্য এই সময়টাতে মিঠাপানিতে ছুটে আসে। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার ২২ দিনের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স তা সর্বাত্মকভাবে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। অভিযানকালে জেলেদের খাদ্যসহায়তা হিসেবে জনপ্রতি ২৫ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও জেলা টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযানে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল হওয়ায় এ বছর ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এতে করে ইলিশ সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।”
প্রসঙ্গত, জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুর জেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৫৫ হাজার। এর মধ্যে কার্ডধারী জেলে রয়েছে ৪৪ হাজার। তবে বেসরকারি হিসেবে জেলায় প্রায় লক্ষাধিক জেলে রয়েছে।