সাদা পাথর লুটে ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি, পর্যটন হুমকিতে


সাদা পাথর লুটে ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি, পর্যটন হুমকিতে

সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ এলাকার সাদা পাথর একসময় দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কেন্দ্রীয় স্থান হিসেবে পর্যটকদের আকর্ষণ করতো। শ্বেত পাথরের বিশাল স্তূপ, স্বচ্ছ নদীর পানি ও সবুজ পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই স্থানটি ছিল দর্শনীয়। কিন্তু আজ সেই সৌন্দর্যের বদলে দেখা যাচ্ছে গভীর নদীতলে বড় বড় গর্ত, কালো এবং ঝলমলে পানি এখন কুয়াশাচ্ছন্ন আর পাথরহীন মরুভূমির মতো পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী দিন-রাত নির্বিঘ্নে শত শত নৌকায় পাথর উত্তোলন করছে। তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে এমনভাবে যে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। কয়েক মাস ধরে চলা এই অবৈধ লুটপাটে নদীর স্বচ্ছতা হারিয়ে গেছে, আর পাথরের পাহাড় একে একে বিলীন হচ্ছে।

কোম্পানীগঞ্জের বাসিন্দা মো. আব্দুল ওয়াদুদ শিপন বলেন, “সাদা পাথর লুটপাট বন্ধের দাবিতে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, বিশেষ করে ইউএনও মহোদয় এবং সিলেট জেলা প্রশাসন, বিশেষ করে ডিসি মহোদয়কে একাধিকবার বিষয়টি অবহিত করেছি। প্রতিবারই তারা বলেছেন, এ বিষয়ে অভিযান চলছে। কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই লুটপাটের অবসান ঘটাবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে সাদা পাথরের খ্যাতি দ্রুত হারিয়ে যাবে এবং এটি পর্যটন মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার পথে যাবে। শুধু পর্যটন নয়, শতাধিক পরিবারের জীবিকা এই অবস্থা থেকে সরাসরি প্রভাবিত হবে।

ট্রাভেলার্স অফ গ্রেটার সিলেটের এডমিন শেখ রাফি বলেন, “সাদা পাথরের এই নির্বিচারে পাথর লুট শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস করছে না, বরং পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় মানুষের জীবিকা সরাসরি হুমকির মুখে ফেলছে। প্রশাসনের চোখের সামনে এই অপরাধ চলা মানে অপরাধীদের সরাসরি প্রশ্রয় দেওয়া। আমরা ট্যুর অপারেটররা খুবই ব্যথিত। কারণ এই ধ্বংসযজ্ঞ কেবল আমাদের পেশা নয়, আমাদের ভালোবাসার প্রকৃতিকেও হত্যা করছে। এখনই কঠোর আইন প্রয়োগ, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের স্থায়ী অবসান প্রয়োজন; নইলে একদিন সাদা পাথর শুধু ছবিতে দেখার স্থান হয়ে যাবে।”

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী শাহ শাহেদা বলেন, “যেহেতু খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় দাবি করে এই সম্পদ তাদের, সেহেতু এই এলাকায় তারা তদারকির দায়িত্বে আছেন। এই যে পাথরগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে, সুন্দর একটা জায়গা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে বলা যায়, এইগুলা দেখার মতো কেউ নেই।”

তিনি আরও বলেন, “সিলেট একটা অরক্ষিত এলাকা হয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কেউ নেই বলে মনে হয়। পাথর সংরক্ষণে প্রশাসনের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এই ধ্বংসযজ্ঞের নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করা দরকার।”

ঢাকাপোস্ট যখন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারের সঙ্গে কথা বলেন, এবং প্রশ্ন তোলেন দিনের বেলা নৌকা নিয়ে প্রকাশ্যে পাথর লুট হচ্ছে কেন প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারছে না, তখন তিনি জানান, “উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজ চলমান থাকবে।” এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, “নিয়মিত আমাদের অভিযান চলছে। জেলা থেকে যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে কাজ চলছে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×