সিলেটে জমি দখলে পুলিশের জড়িত থাকার অভিযোগ


সিলেটে জমি দখলে পুলিশের জড়িত থাকার অভিযোগ

সিলেট শহরের সাগরদীঘির পাড়ে এক একর দশ শতক জমি নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে দখল করে রাখার গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন জমির বর্তমান মালিকরা। তাঁরা বলছেন, আদালতের বৈধ রায় থাকা সত্ত্বেও পুলিশ সদস্যরা সেখানে অবস্থান করে তাদের জমি ব্যবহার ও প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন।

শনিবার (২ আগস্ট) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ উত্থাপন করেন জমির মালিক সামরান হোসেন চৌধুরী রাজুসহ কয়েকজন।

লিখিত বক্তব্যে সামরান হোসেন চৌধুরী রাজু জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে হিমাংশু রঞ্জন গুপ্তের কাছ থেকে বৈধভাবে তারা জমিটি কেনেন। তবে কেনার আগে জমিটির মালিকানা নিয়ে এসটিএস গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আইনি বিরোধ ছিল। সেই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী টিপু মুনশি। সামরান দাবি করেন, হিমাংশু রঞ্জন গুপ্তের দায়ের করা মামলার রায়ে আদালত এসটিএস গ্রুপের মালিকানা বাতিল করে।

তার ভাষায়, "তবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে টিপু মুনশি জমিতে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিলেন।" তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মন্ত্রী সরে গেলেও নতুনভাবে বাধা তৈরি করেছেন স্থানীয় জাতীয় পার্টি নেতা নজরুল ইসলাম বাবুল। তার নেতৃত্বে পুলিশের কিছু সদস্য জমিতে বসানো হয়েছে এবং মালিকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে।

সংবাদ সম্মেলনে সামরান বলেন, "প্রলোভন দেখিয়ে জমির কেয়ারটেকার দেলোয়ার ও তার স্ত্রী পারভিনকে দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করানো হয়েছে।" তাঁর দাবি, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে এটি সাজানো মামলা বলে প্রমাণ মিলবে। এমনকি মামলার বাদী অতীতেও সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থানায় একাধিক ভুয়া মামলা করেছেন বলেও জানান তিনি।

এছাড়া জমির মালিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। সামরান জানান, ওই দিন জমি দখলের উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয় এবং পুলিশ তাদের সহায়তা করে।

ভুক্তভোগীরা জানান, স্থানীয়দের সমর্থন সত্ত্বেও পুলিশ নিরাপত্তার অজুহাতে সেখানে অবস্থান করছে এবং মালিকদের দূরে রাখছে। এই অবস্থায় পুলিশকে সরিয়ে জমির মালিকদের বৈধ অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক বলেন, "অপরাধপ্রবণ হওয়ায় ড্রিম সিটির পাশে আগেই পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প ছিল। বর্তমানে নির্মাণকাজ চলায় পুলিশ সাময়িকভাবে ড্রিম সিটির দুটি রুম ব্যবহার করছে। স্থানীয়দের অনুরোধেই পুলিশ কমিশনার অনুমতি দিয়েছেন। জমি দখলের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।"

তিনি আরও বলেন, "উল্টো ওই এলাকায় ধর্ষণ, মাদক এবং কিশোর গ্যাং সক্রিয় ছিল। সেসব ঠেকাতে পুলিশ অস্থায়ীভাবে সেখানে অবস্থান করছে। জমিটির মালিক ড্রিম সিটি নয় এবং এ নিয়ে উচ্চ আদালতে মৎস্য অধিদপ্তর ও এসটিএস গ্রুপের মধ্যে মামলা চলছে।"

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×