এই সরকার সদ্য জন্মগ্রহণ করা এনসিপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে: নুরুল হক নুর
- কুমিল্লা প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৯:২৮ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২৫

সরকারের পক্ষপাতমূলক ভূমিকার অভিযোগ তুলে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, সদ্য আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-কে পৃষ্ঠপোষকতা করে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত এক জনসভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
নুরুল হক বলেন, এই সরকার সদ্য জন্মগ্রহণ করা এনসিপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। দেশের অধিকাংশ সচেতন রাজনৈতিক মহল এবং সচেতন নাগরিকদের মতামত, সরকার একটি রাজনৈতিক দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ জনগণের সামনে পরিষ্কার করেছে। আপনারা এরই মধ্যে দেখেছেন সরকার ১৩টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ প্রধানদের সঙ্গে বসেছিলেন, সেখানে আমরাও ছিলাম। সেখানে সব রাজনৈতিক দলই সরকারের এনসিপির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস স্যারের প্রতি সম্মান রেখেই রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন—আপনার সরকারের প্রতি আমরা এটা প্রত্যাশা করি না।
তিনি দাবি করেন, অতীতেও সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থনে বিভিন্ন ‘কিংস পার্টি’র উত্থান ঘটেছে, তবে সময়ের ব্যবধানে তারা অস্তিত্ব হারিয়েছে। সদ্য গঠিত এনসিপি কতটা পথ পাড়ি দেবে বা টিকবে—এটি এখনো অনিশ্চিত বলে মত দেন তিনি। নুরুল হক বলেন, পরশু দিনের আগে আপনারা দেখেছেন চারটি দলকে নিয়ে মিটিং করেছে এবং গণমাধ্যমে উপদেষ্টারা বলেছেন, তাঁরা চারটি প্রধান রাজনৈতিক দলকে নিয়ে মিটিং করেছে। একটি দল যেখানে নিবন্ধনই নেই, সদ্য জন্মলাভ করেছে, কত দূর যায় বা কত দিন রাজনীতিতে টেকে সেটাই তো এখনো জানা নেই।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ন্যায্য ও সমান আচরণ করবে। তবে বাস্তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা মনে করি এনসিপিসহ সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সরকার সমান আচরণ করবে, সবাইকে সমানভাবে দেখবে। এরই মধ্যে কোনো কোনো দলের সমাবেশে দেখা গেছে জেলার বৃক্ষমেলা বন্ধ করে, পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। এটি নতুন বাংলাদেশের চিত্র হতে পারে না। এমন আচরণ আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দেখেছি।
সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুলঘটনার প্রসঙ্গে নুরুল হক বলেন, এ ঘটনার পর সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তার ভাষ্য, মাইলস্টোনের ঘটনাকে পুঁজি করে পতিত সরকারের দোসররা ঢাকার রাজপথে নানা ধরনের নাশকতা ও অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। তার একটি অংশ হিসেবে তারা কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে ঢুকে ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করে সচিবালয়ের দিকে নিয়ে গেছে এবং সচিবালয় ভাঙচুর করেছে। এর মধ্য দিয়ে সরকার ও প্রশাসনের একটি দুর্বল চিত্র আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে। সচিবালয়ের মতো একটি সুরক্ষিত জায়গার নিরাপত্তা সরকার যদি দিতে না পারে তাহলে দেশের ১৮ কোটি মানুষের নিরাপত্তা কীভাবে দেবে।
এর আগে ‘গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্র সংস্কার’ শীর্ষক জনসভায় বক্তব্যকালে কুমিল্লার ছয়টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেন গণ অধিকার পরিষদের এই নেতা। ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন—কুমিল্লা-২ আসনে নাজমুল হাসান, কুমিল্লা-৬-এ রাশেদুল হক রিয়াদ, কুমিল্লা-৭-এ গিয়াস উদ্দিন, কুমিল্লা-৮-এ ফয়েজ উল্লাহ, কুমিল্লা-৯-এ আবদুল্লাহ এবং কুমিল্লা-৫ আসনে মোকাম্মেল হোসেন।
এ সময় তিনি জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দেশের সব ৩০০ আসনে ট্রাক প্রতীকে প্রার্থী দেবে গণ অধিকার পরিষদ। নুরুল হক বলেন, গতকাল ঢাকায় ৩৬ জুলাই স্মরণে ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা এবং আজকের কুমিল্লার এই সমাবেশে আমাদের প্রার্থীদের পরিচয় করানোর মধ্য দিয়ে সারা দেশে আমাদের নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ শুরু হলো।
কুমিল্লা জেলা গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিনের সঞ্চালনায় আয়োজিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। এ সময় গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানও উপস্থিত ছিলেন।