খালেদা জিয়াকে ‘কালো মানিক’ উপহার দিতে সোহাগের ঢাকায় যাত্রা


February 4 2025/WhatsApp-Image-2025-06-05-at-10655-PM-2506050711.webp

শুরুতে কেউ বুঝতে পারেনি। সাজসজ্জা দেখে মনে হতে পারে, হয়ত কারো বিয়ের উৎসব। চারপাশে ব্যানার, বাদ্যযন্ত্র, স্লোগান, হুল্লোড়-লোকজন ভিড় করছে, ভিডিও করছে, সেলফি তুলছে। মিনি ট্রাকে সাজানো আছে বিশাল কালো রঙের এক ষাঁড়।

গলায় দলের প্রতীকের মালা, গায়ে রঙিন কাপড়। কিন্তু কাছে গিয়ে বোঝা গেল- এটা কোনো বিয়ের আয়োজন নয়। এটি একটি ভালোবাসার মহোৎসব। উৎসবটি ঘিরে আছে পটুয়াখালীর এক দরিদ্র কৃষক সোহাগ মৃধার স্বপ্ন। তার নিজের হাতে লালন-পালন করা ষাঁড়টি উপহার দিতে চান তার প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। তিনি ষাঁড়টির নাম রেখেছেন- ‘কালো মানিক’।

ঈদপটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামে সোহাগ মৃধা ২০১৮ সালের শেষের দিকে চৈতা বাজার থেকে মাত্র ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি গাভি কিনেছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে গাভিটি একটি বাছুর প্রসব করে।

পরে গাভিটি বিক্রি করে বাছুরটিকে রেখে দেন তিনি। আর সেই বাছুরই আজকের এই কালো মানিক। ছয় বছরের যত্ন, আদর আর কঠোর পরিশ্রমে গড়ে ওঠে বিশাল আকৃতির ষাঁড়টি। এখন ওজন প্রায় ৩৫ মণ, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট, উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। স্থানীয় বাজারে গত বছর কোরবানির সময়ে ষাঁড়টির দাম উঠেছে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত।

ঢাকায় ষাঁড়টি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি চলে বেশ কিছুদিন ধরেই। দুটি মিনি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে, খরচ হবে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। দলের প্রতীকে সুসজ্জিত ব্যানার, কাপড়, এমনকি বাদ্যযন্ত্রের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। গ্রামের শত শত মানুষ মিলে তৈরি করেছে এক আনন্দ-উৎসবের পরিবেশ-যেন বিয়ের শোভাযাত্রা, অথচ পাত্র এই উৎসবের সবচেয়ে আলাদা চরিত্র ‘কালো মানিক’।

সোহাগ মৃধা বলেন, ‘ভাইরালের জন্য না। আমি সত্যিই চাই, নেত্রীর কোরবানির জন্য যাক আমার কালো মানিক। এতে আমার কোনো লাভ নেই, শুধু ভালোবাসা আছে। দীর্ঘদিন থেকে আমি আমার প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে একটি গরু উপহার দেওয়ার ইচ্ছা। আজ সেই সুযোগ এসেছে। আল্লাহ যদি কবুল করেন এবং নেত্রী যদি এই গরু গ্রহণ করেন, তাহলে আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পূরণ হবে। আশা করি, নেত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না।’

সোহাগের প্রতিবেশী মতিয়ার মিয়া বলেন, ‘প্রথমে ভাবছিলাম মজা করছে। এখন বুঝি, সে সত্যি করে বলছে। এটা শুধু গরু না-একজন কৃষকের ত্যাগ, ভালোবাসা আর রাজনীতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।’

সোহাগের মা হাজেরা বেগম বলেন, ‘ও ছোটবেলা থেইকাই বিএনপি ভালোবাসে। কয় বছর ধইরা কয়- এই গরু নেত্রীরে দিব। সংসারে কত কষ্ট গেছে, কত সময় ভাত কম খাইছি; কিন্তু ওরে থামাই নাই। মানিকরে আমরা ঘরের মানুষ বানাইয়া রাখছি। আজ যাইতেছে ঢাকায়, আমাদের গোয়াল ঘর খালি হইয়া যাইবে। চোখে পানি আসে, কিন্তু মনে শান্তি লাগে- নেত্রী যদি গ্রহণ করেন, তয় আমরা ধন্য হইয়া যামু।’

সোহাগের স্ত্রী পলি বেগম বলেন, ‘আমরা এই মানিকরে ৬ বছর সন্তানের মতোই মানুষ করছি। গায়ে সর্দি লাগলে ওষুধ দিছি, খাইছে কি না সেই দুশ্চিন্তা করছি। আজ যাইতেছে ঢাকায়, ঘর ফাঁকা লাগবে। কিন্তু এই কান্না দুঃখের না-এটা খুশির কান্না। যদি নেত্রী এই গরু গ্রহণ করেন, তয় আমাদের সব কষ্ট সার্থক হইব।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×