জুয়ার টাকা জন্য শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীকে হত্যা


kijhfsdg09df90089f.png

গাজীপুরের টঙ্গীতে ভাড়া বাসা থেকে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী নারী ‎রাবেয়া সাবরিন লিখন (৩৩) হত্যার প্রধান আসামি স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার (২৬ মে) বেলা সাড়ে ১১ টায় পিবিআই’র পুলিশ সুপার (এসপি) আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রোববার (২৫ মে) সকাল ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানার গাজীবাড়ী পুকুরপাড় এলাকার গোলাম মোস্তফার বাসা থেকে সাইফুল ইসলাম উজ্জলসহ (২৮) এবং তার স্ত্রী সাদিয়া আক্তারকে (১৯) গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার প্রধান আসামি সাইফুল ইসলাম ব্রাহ্মবাড়ীয়ার বিজয়নগর উপজেলার নিন্দারাবাদ (বিজয়হরষপুর) গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। সে তার স্ত্রী সাদিয়া আক্তারকে নিয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার পুকুরপাড় এলাকার ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন।

ভিকটিম ‎রাবেয়া সাবরিন লিখন পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর পটখালী গ্রামের সেলিম হাওলাদারের মেয়ে। তিনি গাজীবাড়ি (পুকুরপাড়) এলাকার গোলাম মোস্তফার বাড়িতে বিগত চার মাস যাবত ভাড়া থেকে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন শরীরিক প্রতিবন্ধি সুরক্ষা ট্রাস্ট (মৈত্রি শিল্পে) কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করতেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই’র) উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিত বিশ্বাস বলেন, ভিকটিম এবং আসামিরা একটি বাসার দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে পাশাপাশি কক্ষে বসবাস করতেন। সোমাবর (১৯ মে) সকাল সোয়া ৬টায় ভিকিটম রাবেয়া সাবরিন লিখন ঘরের দরজা খোলা রেখে বাসার বাইরের চুলায় রান্না বসাতে যায়। এ সুযোগে আসামিরা ভিকটিমের ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে লুকিয়ে থাকে। পরবর্তীতে ভিকটিম তার নিজ ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই আসামিরা তাকে হাত, পা, মুখ বেঁধে হত্যা করে ঘরের দরজা বাহির থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রান্না পুড়ে যাওয়ার গন্ধ পেয়ে পাশের ঘরের ভাড়াটিয়া সাদিয়া আক্তার সাথী (১৯) ভিকটিমকে ডাকতে এসে ঘরের দরজা বাহির থেকে বন্ধ দেখতে পেয়ে বাড়ির মালিককে খবর দেয়। বাড়ির মালিক ঘরের দরজা খুলে দেখে হাত, পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় ভিকটিমের মরদেহ বিছানায় উপুর হয়ে পড়ে আছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা টঙ্গীপূর্ব থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করে। তদন্তকালীন সময়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে গাজীপুর পিবিআই অত্র মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় একই বাসার পাশের কক্ষ থেকে প্রধান আসামি সাইফুল ইসলাম উজ্জল এবং তার স্ত্রী সাদিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার পর থেকেই আসামিরা ওই বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। গ্রেপ্তাররা আদালতে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

জবানবন্দিতে আসামি সাইফুল ইসলাম উজ্জল বলেন, তিনি স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করার পাশাপাশি অনলাইন (আইপিএল) জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে এবং দুই মাসের বাসা ভাড়া বাকী থাকায় স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হতো। ভিকটিম রাবেয়া সাবরিন লিখনের বোনাস পাওয়ার খবর আসামি সাইফুল ইসলাম উজ্জল জানতে পেরে তার বোনাসের টাকা চুরির পরিকল্পনা করে।

সোমাবর (১৯ মে) সকাল সোয় ৬টায় ভিকটিমের কক্ষে প্রবেশ করে পেছন থেকে তা মুখ চেপে ধরে বিছানায় উপুড় করে শুইয়ে ভিকটিমের পিঠে চেপে বসে হাত, পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। এসময় আসামির স্ত্রী সাদিয়া আক্তার ভিকটিমের পা বেঁধে ফেলে। ভিকটিম নড়াচড়া না করলে আসামী সাদিয়া আক্তার তার নিজ কক্ষে চলে যায়। পরে প্রধান আসামি সাইফুল ইসলাম উজ্জল ভিকটিমের ব্যাগ থেকে ১২৫০টাকা, পূর্বে ভিকটিমের ঘর থেকে চুরি করা মোবাইলের বক্স এবং দুই কেজি চাল নিয়ে বাহির থেকে ঘরের দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে দেয়। পরে সাইফুল তার স্ত্রীর টাকা রেখে যথারীতি অফিসে চলে যায়।

গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই’র) পুলিশ সুপার (এসপি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিহত রাবেয়া সাবরিন লিখন (৩৩) একজন শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী। আসামিরা সামান্য কিছু টাকার জন্য তাকে হত্যা করেছে।

ঢাকা ওয়াচ ২৪/এমআর  

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×