পোশাকশ্রমিককে ৪০ ঘণ্টা আটকে ধর্ষণের অভিযোগ


November 16/shreepur-thana-eff09cbf6c626a6a1a701cdf41b6bea1.jpg

গাজীপুরের শ্রীপুরে সহকর্মী পোশাকশ্রমিক নাজমুল হককে (২৭) বখাটেদের হাত থেকে মুক্ত করতে গিয়ে এক নারী পোশাকশ্রমিক (২৩) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বখাটেরা ওই পোশাকশ্রমিককে ৪০ ঘণ্টা আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেছে। এ সময় তার সহকর্মীকেও তারা নির্যাতন করে। শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্বখণ্ড (ফখর উদ্দিন প্রিন্ট কারখানা গেট) নজরুল উকিলের ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) ভুক্তভোগী নারী চার জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত তিন জনসহ মোট সাত জনকে অভিযুক্ত করে শ্রীপুর থানায় মামলা করেন। শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) নয়ন কর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় তিন জনকে শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার পোশাক শ্রমিক নাজমুল হক টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার কোনাবাড়ী গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি শ্রীপুর পৌরসভার মাধখলা এলাকার মাহমুদুল্লাহর বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় ইশরাক স্পিনিং মিল কারখানায় চাকরি করেন।

আসামিরা হলো- শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া দক্ষিণখণ্ড এলাকার মৃত মিজানুর রহমানের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৯), উপজেলার কাওরাইদ (মোড়ল পাড়া) এলাকার মোশারফের ছেলে সাগর (২৫), কেওয়া দক্ষিণখণ্ড (গারোপাড়া) এলাকার ইয়াসিন (২৪), নেত্রকোনা সদর উপজেলার হাটখোলা বাজার এলাকার হাশেম ইসলামের ছেলে মনিরুল ইসলাম নিরব (১৮) ও তাদের সহযোগী অজ্ঞাত তিন জন। চতুর্থ আসামি মনিরুল ইসলাম নিরব কেওয়া পূর্ব খণ্ড এলাকার নজরুল ইসলামের বাড়ির ভাড়াটিয়া।  

গ্রেফতাররা হলো- সাগর (২৫), আশরাফুল ইসলাম (২৯) ও মনিরুল ইসলাম নিরব (১৮)।

থানায় করা মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, নির্যাতনের শিকার নাজমুল হক ও আমি একই কারখানায় চাকরি করি। বুধবার (৮ জানুয়ারি) আমি বাসায় ছিলাম। ওই দিন বিকাল ৩টায় নাজমুল আমাকে ফোন দিয়ে বলে আমার সমস্যা হয়েছে, তুমি ফখর উদ্দিন কারখানার মোড়ে বটগাছের নিচে আসো। তার ফোন পেয়ে আমি বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বট গাছের নিচে যাওয়া মাত্রই আসামি সাগর আমার পরিচয় জিজ্ঞাসা করে। পরিচয় দেওয়ার পর সে আমাকে ফখর উদ্দিন প্রিন্ট কারখানা গেট সংলগ্ন স্থানীয় নজরুল উকিলের বাসায় নিয়ে যায়। ওই বাসায় গিয়ে দেখি, আমার সহকর্মী নাজমুল হককে আসামিরা মারধর করছে। আমি তাদেরকে মারধর করতে নিষেধ করি এবং তাকে ছেড়ে দিতে বলি। তাদের কাছ থেকে নাজমুলকে নিয়ে যেতে হলে ৫০ হাজার টাকা দামি করে। তাদের দাবি করা ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি না হলে রেগে গিয়ে আমাকে পাশের রুমে নিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে আশরাফুল ও সাগর ধর্ষণ করে।

আরও উল্লেখ করা হয়, আশরাফুল ও সাগর আমাকে ঘরে রেখে বের হলে অজ্ঞাত তিন জন এসে ধর্ষণ করে। তারা আমাকে ওই ঘরে আটক রেখে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় আরও ১০ হাজার টাকার জন্য মোবাইল ফোন রেখে আমাকে ছেড়ে দেয়। পরে মনিরুল ইসলাম নিরব একটি অটোরিকশা ভাড়া করে দিলে আমি বাসায় গিয়ে ঘটনাটি আমার স্বামী ও বাড়ির লোকজনের সঙ্গে পরামর্শ করে শনিবার (১১ জানুয়ারি) থানায় মামলা করি।

নির্যাতনের শিকার পোশাকশ্রমিক নাজমুল হক দাবি করেন, বুধবার বিকাল ৪টায় বেতনের টাকা তুলে বাসায় ফিরছিলাম। সহকর্মী ইয়াছিন কল করে বলেন, ফখরুদ্দিন মোড়ে যেতে। ওই স্থানে গেলে ইয়াছিন ও তার সহযোগীরা আমাকে একটি বাড়িতে নিয়ে পিটিয়ে নির্যাতন করে দুই লাখ টাকা দাবি করে। আমার সঙ্গে থাকা বেতনের সাড়ে ১৪ হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা। পরে আরও টাকার জন্য মারধর করলে আমি দুই ব্যক্তির কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে আরও চার হাজার টাকা তাদেরকে এনে দেই।

শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, মামলা রুজুর পরই অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে রবিবার (১২ জানুয়ারি) গাজীপুর আদালতে পাঠানো হবে।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×