
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার দাবিতে রাজধানীতে সহিংস বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে ছাত্র-জনতা। উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে ধানমন্ডি-৩২ নম্বর এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিক্ষোভ চলাকালে অংশগ্রহণকারীরা ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘হাদির রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’, ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগছে’সহ নানা স্লোগান দেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধানমন্ডি-৩২ নম্বর বাড়ির আশপাশের একাধিক স্থানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। কয়েকজনকে বাড়িটির একটি অংশ হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর করতেও দেখা গেছে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার দাবিতে এই বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এ সময় ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা সেখানে আগুন দেয়।
এদিকে রাতের শুরুতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে রামপুরা, মিরপুর ও কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রাত ১২টার দিকে কারওয়ান বাজারে দৈনিক প্রথম আলো কার্যালয়ে ভাঙচুর ও নথিপত্রে অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। এরপর বিক্ষুব্ধরা ডেইলি স্টার কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
অন্যদিকে, টিএসসি থেকে মিছিল বের করে জাতীয় ছাত্রশক্তি। তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও, রুখে দাও’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী হলগুলো থেকেও শিক্ষার্থীরা বের হয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন। একই সময় ইনকিলাব মঞ্চ, এনসিপি নেতা-কর্মী ও জুলাই যোদ্ধারা শাহবাগে অবস্থান নেন।
উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া শরিফ ওসমান হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার গণসংযোগে অংশ নিতে বিজয়নগর এলাকায় গেলে তিনি হামলার শিকার হন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে একটি চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী গুলি করেন। গুলিটি তার মাথায় লাগে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তী সময়ে সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
ঢাকায় হাদির অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া নিউরো সার্জন আব্দুল আহাদ বৃহস্পতিবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে তাদের কাছে হাদির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। তার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন।