
নিজের দপ্তরে যাওয়ার পথে সরকারি গাড়িতেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন পরিকল্পনা কমিশনের এক যুগ্ম সচিব। চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তাকে জিম্মি করে ছয় লাখ টাকা দাবি করেন তারই নিয়োজিত চালক।
ভুক্তভোগী যুগ্ম সচিবের নাম মাকসুদা হোসেন। অভিযুক্ত চালক আবদুল আউয়াল (৪০)। বুধবার ১৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি ঘুরিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয় সকাল সোয়া আটটার দিকে। ধানমন্ডির বাসা থেকে পরিকল্পনা কমিশনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সরকারি গাড়িতে ওঠেন মাকসুদা হোসেন। কিন্তু চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে এসে গাড়ি কমিশনের দিকে না নিয়ে বিজয় সরণির দিকে ঘুরিয়ে দেন চালক। এরপর মহাখালী, বনানী হয়ে বিমানবন্দর সড়কের দিকে গাড়ি চালাতে থাকেন তিনি।
গাড়ি ভিন্ন পথে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি চালক। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে এক সহকর্মীকে বিষয়টি জানান যুগ্ম সচিব। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করতে গেলে চালক জোর করে তার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেন বলে জানান তিনি।
ঘটনার বর্ণনায় মাকসুদা হোসেন বলেন, “মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে চালক গাড়ির দরজা লক করে দেন।” এরপর উত্তরার দিয়াবাড়ি হয়ে বেড়িবাঁধ ধরে সাভারের হেমায়েতপুরের দিকে গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আবার দারুস সালাম হয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দুপুর ১২টার দিকে পরিকল্পনা কমিশনের সামনে গাড়ি আসে।
এই পুরো সময় কেন তাকে জিম্মি করা হয়েছে বা কেন এভাবে গাড়ি ঘোরানো হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি চালক বলে জানান তিনি।
চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের মাঠে, যা সাবেক বাণিজ্য মেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত, সেখানে গাড়ি থামিয়ে চালক তার মায়ের চিকিৎসার কথা বলে ছয় লাখ টাকা দাবি করেন। তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ হাজার টাকা চান তিনি। তখন মাকসুদা হোসেন জানান, ওই মুহূর্তে তার কাছে টাকা নেই এবং অফিসে গেলে ব্যবস্থা করা যাবে।
এরপর চালক তাকে পরিকল্পনা কমিশনের ভেতরে নিয়ে এলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আবদুল আউয়ালকে আটক করেন। বিকাল পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং পরে শেরেবাংলা নগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
আবদুল আউয়াল গত দুই মাস ধরে মাকসুদা হোসেনের গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার বাড়ি বগুড়া জেলায়। এর আগে তিনি পরিকল্পনা কমিশনের আরেক যুগ্ম সচিবের গাড়ির চালক ছিলেন।
একজন যুগ্ম সচিবকে জিম্মি করার খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ওই সরকারি গাড়িটি ট্র্যাক করতে থাকে।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শাকিল আখতার বলেন, “চালক একজন মাদকাসক্ত বলে তারা জানতে পেরেছেন।” তিনি আরও বলেন, ওই কর্মকর্তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছিল এবং এ ঘটনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।