জুবায়েদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করল জবি প্রশাসন
- বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০১:০৫ এম, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
জুবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও মামলার অগ্রগতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রশাসন। বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের নিচে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাজাম্মুল হক প্রধান, জবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল, শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অধ্যাপক ড. রইস উদ্দীন বলেন, “আমরা আজ শোকে বিহ্বল। আমাদের সামাজিক জীবন শোকে থমকে গেছে। যে প্যান্ডেলে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করার কথা ছিল, সেখানে আমরা জুবায়েদের শোকসভা করেছি। আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে—বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে দিনটি জুবায়েদকে উৎসর্গ করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “হত্যাকাণ্ডের তিন দিনের মাথায় তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এটি দৃশ্যমান অগ্রগতি। জুবায়েদের পরিবারের পক্ষে দূর থেকে মামলা পরিচালনা সম্ভব নয়, তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে মামলাটি পরিচালনা করা হবে।”
রইস উদ্দীন পুলিশ প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন তোলেন, “বর্ষার নাম এজাহারে এক জায়গায় এসেছে, অথচ সে-ই তো জুবায়েদকে ডেকে নিয়ে গেছে এবং খুনিদের লোকেশন দিয়েছে। তাহলে এজাহারে এসব তথ্য কেন নেই?”
তিনি আরও বলেন, “পুলিশ বলছে ধস্তাধস্তি হয়েছে, কিন্তু যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে আশপাশের কেউ কিছু শুনেনি কেন? ওই বাসার সবাই কি বধির? পুলিশ কি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে?”
অধ্যাপক রইস উদ্দীন আরও বলেন, “মাহির যদি সত্যিই খুন করে থাকে, সে তো জুবায়েদের চাইতে ছোট গড়নের। তাহলে কীভাবে সে এত নিখুঁতভাবে গলায় ছুরি মেরে হত্যা করতে পারল?”
তিনি যোগ করেন, “বর্ষা জুবায়েদকে পছন্দ করত, এটি বর্ষার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু সে বিষয়টি জানলে হয়তো জুবায়েদ টিউশন ছেড়ে দিত। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষে তিনি বলেন, “আমরা চাই প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হোক, নিরপরাধ কেউ যেন শাস্তি না পায়, আর প্রকৃত অপরাধীরা যেন আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে না পারে। সুষ্ঠু বিচার হলে আর কোনো মায়ের বুক খালি হবে না।”
উল্লেখ্য, জুবায়েদ হোসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি জবি কুমিল্লা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন।
গত ১৯ অক্টোবর বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ১৫, নূরবক্স লেনের ‘রৌশান ভিলা’ নামের এক বাসায় তাকে খুন করা হয়। সেখানে তিনি বর্ষা নামের এক ছাত্রীকে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি পড়াতেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, বর্ষা ও মাহিরের দীর্ঘ দেড় বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরই মধ্যে জুবায়েদের সঙ্গে বর্ষার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়, যা জানার পর মাহির ক্ষুব্ধ হন। পরবর্তীতে বর্ষা, মাহির এবং মাহিরের বন্ধু আয়লান মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯ অক্টোবর বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে বর্ষা জুবায়েদকে কল করে বাসায় ডাকে। জুবায়েদ বাসায় প্রবেশ করলে মাহির ও আয়লান তার ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে মাহির গলার নিচে ছুরিকাঘাত করে।
লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, “ছুরিকাঘাতের পরও জুবায়েদ তখন জীবিত ছিলেন। বাঁচার জন্য তিনি তিনতলায় উঠে বর্ষাকে বলেন, ‘আমাকে বাঁচাও।’ কিন্তু বর্ষা জবাব দেয়, ‘তুমি না মরলে আমি মাহিরের হবো না।’ পরে জুবায়েদ মারা যান।”
পুলিশের ভাষ্যমতে, বর্ষা এরপর নিজেকে বাঁচাতে চিৎকার করে বলেন, “স্যারকে কে মারলো?”
ঘটনার পর পুলিশ মাহির রহমান, বার্জিস শাবনাম বর্ষা ও ফারদিন আহমেদ আয়লানকে গ্রেফতার করে। জুবায়েদের বড় ভাই বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।