ডাকসুর শীর্ষ তিন পদে ছাত্রীদের ভোটে এগিয়ে শিবির সমর্থিত জোট


ডাকসুর শীর্ষ তিন পদে ছাত্রীদের ভোটে এগিয়ে শিবির সমর্থিত জোট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে শীর্ষ তিন পদে ছাত্রীদের ভোটে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) - এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদেই জোটটির প্রার্থীরা ছাত্রীদের সব হলেই অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ডাকসুর মোট ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতে জয়লাভ করেছেন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। বাকি পাঁচটি পদের মধ্যে চারটিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং একটি পদে বামধারার প্রতিরোধ পর্ষদের একজন প্রার্থী বিজয়ী হন।

ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন শিবির-সমর্থিত প্যানেলের সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এস এম ফরহাদ এবং সহসাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন মহিউদ্দিন খান।

ছাত্রী হলগুলোতে বিপুল ব্যবধান

ভিপি পদে সাদিক কায়েম শুধু রোকেয়া হলেই পেয়েছেন ১,৪৭২ ভোট, যেখানে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবিদুল ইসলাম পেয়েছেন ৫৭৫ ভোট এবং উমামা ফাতেমা পেয়েছেন ৬১৪ ভোট।

জিএস পদের ফলাফলেও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। এস এম ফরহাদ রোকেয়া হলে পেয়েছেন ১,১২০ ভোট; অন্যদিকে শেখ তানভীর বারী হামিম পেয়েছেন ৪৪৭ এবং মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৭৮০ ভোট।

এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান পেয়েছেন ১,২২৪ ভোট, যা তাঁর দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তানভীর আল হাদী মায়েদ (৪৭৫ ভোট) ও তাহমীদ তাহমীদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী (৩৭৫ ভোট)-এর তুলনায় অনেক বেশি।

সবকটি ছাত্রী হলে এই তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভোট পেয়েছেন, যা ফলাফলের ধরনকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে।

ভোট গণনা ও উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন

ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার দুই দিন পর নির্বাচন নিয়ে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হয়। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ কয়েকটি প্যানেলের প্রার্থী অভিযোগ করেন, ভোটার উপস্থিতির হার প্রকৃতপক্ষে ৭৫ শতাংশ হয়নি। তাঁরা প্রধান রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং ভোটার তালিকা ও সিসিটিভি ফুটেজ মিলিয়ে দেখার দাবিও জানিয়েছেন।

তবে রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, এই অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সব সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

পর্যবেক্ষকরা যা বলছেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও সাংবাদিক তাহমিদ জায়িফ বলেন, "পর্যবেক্ষক হিসেবে ভোট গণনার সময়ও কেন্দ্রে আমিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি থেকে পাঁচজন উপস্থিত ছিলাম। এ ছাড়া সব প্যানেলের মনোনীত পোলিং এজেন্টরাও উপস্থিত ছিলেন। আমাদের সবার সামনেই ব্যালট বাক্স খোলা হয়েছে এবং ওএমআর মেশিনে গণনার চিত্র দেখানো হচ্ছিল। তখন কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।"

ভোট গণনার পদ্ধতি ছিল দুই ধাপে

নির্বাচন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, পোলিং এজেন্ট ও পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোট গণনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুই ধাপে কাজ করা হয়েছে। ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ভোট গণনা হয়। বিকেল ৪টার পর কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট বাক্স খোলা হয় এবং ব্যালট পেপার স্ক্যান করে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়।

শিক্ষকরা জানান, প্রথমে কয়েকটি ব্যালট ওএমআর মেশিনে স্ক্যান করে দেখা হয় সঠিকভাবে 'রিড' করছে কি না। প্রতিটি ব্যালটে ভোটাররা যে প্রার্থীর পাশে ক্রস দিয়েছেন, সেই জায়গায় ‘ওয়ান’ চিহ্ন দেখায় কম্পিউটার ডিসপ্লেতে। আর ফাঁকা ঘরগুলোর জন্য ‘ডট’ দেখায়। মেশিনের মাধ্যমে গণনার ফলাফল ও হাতে গোনা ফলাফল মিলে যাওয়ায় এটি নিশ্চিত হয় যে গণনা সঠিক হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একইভাবে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

ফলাফল ঘোষণায় দেরির কারণ

যদিও ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৪টায়, তবে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয় পরদিন সকাল ৮টায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল জানানো হয়।

বিলম্বের কারণ হিসেবে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যালট বাক্সগুলো একত্র করে প্রতিটি ব্যালট পেপারের ছয়টি পাতাকে আলাদা করে সাজাতে হয়েছে। ডাকসুর পাঁচটি ব্যালট এবং হল সংসদের একাধিক ব্যালট - সবগুলো নম্বর অনুযায়ী আলাদা করে পুনরায় সজ্জিত করতে সময় লেগেছে। এই কারণেই ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×