
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে চালু হওয়া বিভিন্ন কাঠামোগত সংস্কারের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, দেশের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রা অবশ্যই এসব অর্জনের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তিনি সরকারের বিভিন্ন কাজের উল্লেখ করে জনগণকে অনুরোধ করেন, "আমরা যা সত্যিকার অর্থে অর্জন করেছি, তা মূল্যায়ন করুন।"
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব বক্তব্য তুলে ধরেন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা যখন সংস্কারের কথা বলি, তখন একটি সাধারণ হতাশা দেখা দেয়- পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এলে কী হবে? এসব সংস্কার কি হারিয়ে যাবে? আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই- দু’টি বিষয় কখনো হারাবে না।”
তিনি স্পষ্টভাবে জানান, পুনর্বহাল করা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এমন সংস্কার, যা কোনোভাবেই বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই। তার ভাষায়, “তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে সুরক্ষিত, ‘এটি বাতিল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।’ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইনটির ক্ষেত্রেও অভিভাবক হবে কোর্ট নিজেই, যা এ ব্যবস্থাকে স্থায়ী সুরক্ষা দেবে।
তিনি আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না যে কোনো সরকার এসব সংস্কার প্রত্যাহারের চিন্তাও করবে। আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে, আর আমাদের স্বাধীন বিচারব্যবস্থা থাকবে- এই দু’টো একসঙ্গে মানবাধিকার অগ্রগতির বড় নিশ্চয়তা প্রদান করে।”
বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “মানবাধিকার অধ্যাদেশ এবং গুম-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ আমাদের বড় পরিকল্পনার অংশ। এগুলোর বিরোধী কিছু গোষ্ঠী অবশ্যই থাকবে, কারণ এগুলো প্রকৃত জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে। কিন্তু আমরা যখন আবার নাগরিক সমাজে ফিরে যাব, আমরা রাস্তায় নামব এসব আইন রক্ষার জন্য।”
সরকার ইতোমধ্যে কিছু অপেক্ষাকৃত সহজ আইনও প্রণয়ন করেছে, যা মানুষের উপকারে আসতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা সিআরপিসি এবং সিপিসির প্রক্রিয়াগত আইনগুলোর ফাঁকফোকর চিহ্নিত করেছি। ফলে এখন দ্রুত বিচার প্রদানের সম্ভাবনা আগের চেয়ে অনেক বাস্তবসম্মত। আমি মনে করি না যে কোনো সরকার এসব পরিবর্তন বাতিল করার চেষ্টা করবে।”
এ পর্যন্ত অর্জিত সংস্কারগুলোকে মূল্যায়নের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অনুগ্রহ করে আমরা যা সত্যিকার অর্থে অর্জন করেছি, তা মূল্যায়ন করুন। আর যেগুলো করতে পারিনি, সেগুলোর পেছনের সীমাবদ্ধতাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।”
স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়টি উল্লেখ করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, কমিশন সুপারিশ দেওয়ার স্বাধীন ক্ষমতা রাখবে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি কমিশন বারবার সুপারিশ করে, আর সরকার তা উপেক্ষা করতে থাকে- তাহলে কি সেটি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে না?”
আগে এমন চাপ সৃষ্টির সুযোগ ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর ধারাবাহিক নজরদারি, জবাবদিহি ও জনস্বচ্ছতা এখন এই নতুন কাঠামোর মধ্য দিয়ে আরও শক্তিশালী হবে।