
মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে আফগানিস্তানে তৃতীয়বারের মতো ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৫৬ মিনিটে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্স ভূমিকম্পের মাত্রা ৬.২ বলে জানালেও, বিবিসির প্রতিবেদনে তা ৫.৬ বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের ভূমিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানা না গেলেও, অন্তত ১৭ জনকে আহত অবস্থায় কুনার প্রাদেশিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নানগারহার স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র নাকিবুল্লাহ রাহিমি জানিয়েছেন, কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল পাকিস্তান সীমান্তবর্তী শিওয়া জেলা। ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক খবর এসেছে বারকাশকত এলাকা থেকে।
এর আগে রোববার ভয়াবহ ভূমিকম্পে দেশটির ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আফগানিস্তান। মঙ্গলবার আরও একটি ভূমিকম্প ওই ক্ষতিকে বাড়িয়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে তালেবান সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক সহায়তা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে।
রোববারের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধারের কাজ এখনও চলছে, যা উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যাহত করছে।
এছাড়া প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন এবং ৬ হাজার ৭০০টিরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সবমিলিয়ে অন্তত ৮৪ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপন্ন এই ভূকম্পন পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি অঞ্চলে তৃতীয়বারের মতো আঘাত হানায় মানুষের দুর্দশা আরও বেড়েছে। আগের দুই কম্পনে কুনার ও নানগারহারের বহু গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, গৃহহীন হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৬০০ জন।
বেঁচে যাওয়া মানুষদের অনেকেই এখন আশ্রয়হীন। দাতা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তাদের হাতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ নেই।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থা আফগানিস্তানে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসা এবং আশ্রয় সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবারও ভূমিকম্পকবলিত পূর্বাঞ্চলে উদ্ধারকাজ অব্যাহত ছিল। তালেবান প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, মোট মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ২০৫ এবং আহত ৩ হাজার ৬৪০ জন।
রোববারের ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের পর মঙ্গলবার ৫.৫ মাত্রার কম্পন নতুন করে আতঙ্ক ছড়ায় এবং উদ্ধার তৎপরতা স্থবির হয়ে পড়ে। পাহাড়ি রাস্তায় পাথর গড়িয়ে পড়ায় অনেক গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে সময় ফুরিয়ে আসছে, ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) জানিয়েছে, দুর্যোগকবলিত অঞ্চলে দ্রুত বাড়ছে মানবিক সহায়তার চাহিদা। তারা জানিয়েছে, কমপক্ষে ৮৪ হাজার মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ডওয়াইড জানিয়েছে, কুনারের ক্ষতিগ্রস্ত কিছু গ্রামে মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ হতাহত হয়েছেন এবং ৯৮ শতাংশ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধসে পড়েছে।
পরিবারের নিখোঁজ সদস্যদের খুঁজতে অনেকেই খালি হাতে ধ্বংসস্তূপে খোঁজ চালাচ্ছেন। যারা মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছেন, তারা কাঠের খাটিয়ায় করে নিজেরাই কবরে দাফন করছেন। অনেকেই অপেক্ষা করছেন ত্রাণের।
রয়টার্সের ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ময়দাভর্তি ট্রাক ও কোদাল হাতে স্থানীয়রা দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। যেসব এলাকায় হেলিকপ্টার নামানো যায়নি, সেখানে আকাশপথে কমান্ডো মোতায়েন করা হয়েছে।
৪ কোটি ২০ লাখ মানুষের এই দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত, দারিদ্র্যপীড়িত এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন। এমন প্রেক্ষাপটে উদ্ধার সামগ্রী ও ত্রাণের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সামনে আসছে শীত, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ অব্যাহত রাখতে অন্তত ৩০ লাখ ডলারের তহবিলের প্রয়োজন। আর বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, তাদের হাতে থাকা ত্রাণ মজুত মাত্র চার সপ্তাহের জন্য যথেষ্ট।