
সরকারি দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে আবারও বিক্ষোভে উত্তাল হতে যাচ্ছে ফিলিপাইন। রাজধানী ম্যানিলায় রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) হাজারো মানুষ রাজপথে নামতে প্রস্তুত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি অর্থায়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তুঙ্গে পৌঁছেছে। পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস দাবি করেছে, জলবায়ু-সম্পর্কিত প্রকল্প থেকে গত বছর প্রায় ১৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় এক ট্রিলিয়ন ফিলিপাইন পেসো আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ প্রতিবাদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রিলিয়ন পেসো মার্চ’।
এই বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক স্মৃতিও। ১৯৭২ সালের ২১ সেপ্টেম্বরেই তৎকালীন স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মারকোস ফিলিপাইনে মার্শাল ল’ জারি করেছিলেন। গণআন্দোলনের মুখে তার দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটে, এবং ১৯৮৯ সালে তিনি দুর্নীতির অভিযোগে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
বর্তমানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তারই ছেলে ফার্দিনান্দ “বংবং” মারকোস জুনিয়র। তিনি জনগণের ক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, “আপনারা কি দোষ দেন রাস্তায় নামার জন্য? আমি যদি প্রেসিডেন্ট না হতাম, হয়তো আমিও তাদের সঙ্গে থাকতাম। সবাই ক্ষুব্ধ, আমিও ক্ষুব্ধ। কারণ যা ঘটছে তা একেবারেই সঠিক নয়।”
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম গামানেটওয়ার্ক জানিয়েছে, রবিবার ম্যানিলায় দুটি বড় সমাবেশ হবে। সকাল ৯টায় রিজাল পার্ক থেকে শুরু হবে ‘বন্যা মোকাবিলায় পদক্ষেপ: দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন’ শিরোনামের কর্মসূচি, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, নাগরিক সংগঠন ও বিভিন্ন অ্যাক্টিভিস্ট অংশ নেবে। দুপুর ২টায় ইডিএসএ পিপল পাওয়ার মনুমেন্টে অনুষ্ঠিত হবে আরেকটি বিশাল সমাবেশ, যেখানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে। ধর্মীয় নেতাদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ ও তরুণ সংগঠনও এতে যুক্ত হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফিলিপাইনের অসংখ্য সিভিল সোসাইটি, চার্চ সংগঠন ও ছাত্রসমাজ এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তরুণদের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এটি নতুন সংযোজন। নেপালে ‘জেনারেশন জেড’-এর আন্দোলনে সরকার পতন, ইন্দোনেশিয়ায় এমপিদের বাড়তি সুবিধা বাতিল, এবং তিমুর-লেস্টেতে এমপিদের এসইউভি কেনার পরিকল্পনা বাতিলের সঙ্গে এর মিল পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে ফিলিপাইনে সম্প্রতি আলোচনায় আসে ‘ঘোস্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ বা কাগজে-কলমে থাকা কিন্তু বাস্তবে না হওয়া প্রকল্প। এর জেরে প্রেসিডেন্টের আত্মীয় এবং হাউজ স্পিকার মার্টিন রোমুয়ালদেজ গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেন। তিনি বলেন, “এই প্রকল্পগুলো নিয়ে ওঠা প্রশ্ন শুধু আমাকে নয়, গোটা প্রতিষ্ঠানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাই আমি নিরপেক্ষ তদন্তের সুযোগ দিতে আন্তরিকতা ও সৎ বিবেক নিয়ে পদত্যাগ করছি।”
এছাড়া এক নির্মাণ কোম্পানি সম্প্রতি প্রায় ৩০ জন সংসদ সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলে। এরপর প্রেসিডেন্ট মারকোস সাবেক সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি আন্দ্রেস রেয়েসকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। এই কমিশন গত এক দশকের বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পগুলো তদন্ত করবে।