আওয়ামী লীগের প্রতি সরকারের সহমর্মিতা বাড়ছে : রাশেদ খান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফলতা কী কী, সেটা বুঝতে পারছেন না গণঅধিকার পরিষদের সাধরাণ সম্পাদক রাশেদ খান। তবে তার মতে, এই সরকারের বড় সফলতা হলো, সরকার নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে সমাজে অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের সহমর্মিতা বাড়ছে বলেও অভিযোগ করেছেন রাশেদ খান। আজ সোমবার নিজের ফেসবুক পেজে এসব মন্তব্য করেন গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা। রাশেদ খান বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার যখন বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটি তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। এই কথার প্রতিবাদ করলে, একদল সুশীল এসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়। এরা নাকি রাষ্ট্রকে জবাবদিহিতামূলক করতে চায়। তাই এদের দৃষ্টিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে। তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন একজন ব্যাংকের কর্মকর্তাকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বানিয়ে রাখেন, যখন বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগে চট্টগ্রামকে প্রাধান্য দেন, তার গ্রামীণ ব্যাংক ও সার্কেলের লোক ছাড়া যোগ্য লোক খুঁজে পান না, তখন সেটি নিয়ে নাকি প্রতিবাদ করা যাবে না। একজন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পেয়েছেন! যিনি নিজেই জানেন না কী করতে হবে। মাঝেমধ্যে দু-এক দিন মিডিয়ার সামনে পুলিশকে ধমক দেওয়ার কারণে তিনি নাকি ফাটাকেস্ট। অথচ প্রতিদিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা আরো বলেন, বিজনেস সামিটের নামে বিশাল বিনিয়োগের ধোঁয়া তোলা হয়, রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো নিয়ে যখন আইওয়াশ করা হয়, মানবিক করিডর নামে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকিতে ফেলার চেষ্টা করে, তখনো নাকি প্রতিবাদ করা যাবে না! রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল রেখে ম্যাজিক দেখিয়েছে সত্য! কিন্তু রমজানের পরে কি আর মানুষের খাওয়া-দাওয়া লাগে না? বাজার যে নিয়ন্ত্রণহীন, তা কি বাণিজ্য উপদেষ্টা জানেন না? আওয়ামী লীগের প্রতি সরকারের সহমর্মিতা বাড়ছে দাবি করে রাশেদ খান বলেন, আগের তুলনায় আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে, ঝটিকা মিছিলের পরিমাণ বেড়েছে, বিদেশিরা আওয়ামী লীগের জন্য লবিং করা শুরু করেছে। আর সে জন্য সরকারের উপদেষ্টারা সাবের-মান্নানদের জামিনে সহযোগিতাও করা শুরু করেছে। অর্জন বলতে এতটুকুই দেখছি, আওয়ামী লীগের প্রতি সরকারের সহমর্মিতা বাড়ছে, আওয়ামী লীগের ডামি এমপিরা জামিন পাচ্ছে। গ্রেপ্তার হচ্ছে না এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ হচ্ছে না! এরই অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের আইনে গণহত্যার দায়ে সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের বিধান বাদ দিয়েছে। ওই পোস্টে তিনি বলেছেন, এই সরকারের আরো বড় সফলতা হলো, সরকার নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে সমাজে অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে! আপাতত এতটুকুই সরকারের সফলতা!

হাসনাতকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ: এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার পূর্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিবাদী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে ‘দেখে নেওয়ার এবং হামলার হুমকি দিয়েছিল বলে জানিয়েছে দলটি। রোববার (৪ মে) মধ্যরাতে দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক প্রস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে এনসিপি জানায়, আমরা আরও উদ্বেগের সঙ্গে ঙ্গ্যে করেছি, প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাফ্যাক্ট’ এর জরিপে উঠে এসেছে যে, গত ৯ মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে জড়িত ব্যক্তি ও পরিবারের ওপর ৩৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। যাতে ৮৯ জন আহত এবং ১ জন শহীদ হয়েছেন। দলটি জানায়, এসব হামলাকারীদের এবং জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে তড়িৎ ও কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এই ঘটনাসমূহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অপেশাদারত্ব এবং অবহেলার চিত্র ফুটে উঠেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি মনে করে জুলাই গণহত্যার দায়ে একটি ফ্যাসিবাদী দল হিসাবে আওয়ামী লীগের দলগত বিচার নিশ্চিতে গড়িমসি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতাই আজকের হামলার অন্যতম মূল কারণ। এদিকে, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে ঢাকা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, বগুড়া, রংপুর মহানগর, কেরাণীগঞ্জ উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাৎক্ষণিক মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এনসিপি। দলটি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই হামলার সুস্পষ্ট তদন্তপূর্বক জড়িত ব্যক্তিদের এবং জুলাই গণহত্যাকারীদের অতিদ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে।

হাসনাতের ওপর হামলা, শিবির সভাপতির হুঁশিয়ারি

গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ঘোষণা দিয়েছেন, আন্দোলনের সাথীদের ওপর হামলা হলে জুলাই বিপ্লবের সহযোদ্ধাদের একসঙ্গে প্রতিরোধ করবে। ফ্যাসিস্টদের ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। রোববার (৪ মে) এক বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা আমাদের সহযাত্রী, তাদের ওপর হামলা হলে আমরা জুলাই যোদ্ধারা একসঙ্গে তা প্রতিরোধ করব ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, ৩৬ জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে পুরোনো হোক কিংবা নব্য ফ্যাসিস্ট-কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। ছাত্রশিবির সভাপতি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এর আগে, রোববার রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ গাড়িতে ১০ থেকে ১২ জন সন্ত্রাসী গাজীপুর এলাকায় হামলা করা হয়েছে বলে জানান এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

আন্তঃনদীর পানিকে যুদ্ধের অস্ত্র বানানো উচিত নয়: মির্জা আব্বাস

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, পানি মারণাস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। ‘আন্তঃনদীর পানিকে যুদ্ধের অস্ত্র বানানোও উচিত নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, একমাত্র ভারতই বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা ‘পানিকে’ যুদ্ধের মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। মির্জা আব্বাস আজ রোববার (৪ মে) বিকেলে রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বরে ‘তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত ‘গণপদযাত্রার’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপি’র রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে ‘গণপদযাত্রার’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, রংপুর মহানগর আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু ও দলীয় নেতা এমদাদুল হক ভরসা বক্তৃতা করেন। উত্তরাঞ্চলের প্রায় তিন কোটি মানুষের ‘জীবন-রেখা’ হিসেবে বিবেচিত আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার পানি ভারত একতরফাভাবে প্রত্যাহার করায় এই নদীটি প্রায় মৃত। তিস্তা নদী রক্ষায় দেশের বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। গণপদযাত্রায় অংশ নিয়ে বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা তিস্তা রক্ষায় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা ভারতের কাছে কিছু চাই না, শুধু পানি চাই। আমরা বকশিশ চাই না, ভিক্ষা চাই না, আমরা আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। আজ না হোক, কাল তা দিতেই হবে। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। পূর্ববর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে এই হিসাব-নিকাশ করেনি, কারণ, তারা সরকারে বার-বার থাকার ইচ্ছায় ভারতকে চাপে ফেলেনি।’ ‘আমাদের কাছে ভারতের স্বার্থজনিত অনেক কিছুই রয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়গুলো এখন হিসাব করতে হবে। হিসাব করার সময় এসেছে। আমাদের তিস্তার পানি চাই, ফারাক্কার পানি চাই। দেশের যেখানে পানি দরকার, সেখানে তা দিতে হবে।’ বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা বহু আগেই পানির ন্যায্য হিস্যা পেতাম যদি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার না আসতো। তারা ভারতের কাছে কোনো দিন পানির দাবি তুলতে পারেনি, তুলেওনি।’ শামছুজ্জামান দুদু বলেন, ‘পানির ন্যায্য হিস্যার প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না। তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা অবশ্যই আদায় করতে হবে।’ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, তিস্তাপাড়ের মানুষের আর্তনাদ কারো কানে পৌঁছায় না । তাই যতদিন পর্যন্ত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে । আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব । কারণ, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা উত্তরের মানুষের অধিকার, সেজন্যই এই আন্দোলন।’ এদিকে গণপদযাত্রাকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুর ১টা থেকে তিস্তা নদীবেষ্টিত বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে হাজার-হাজার মানুষ রংপুর শহরে আসতে শুরু করেন। গণপদযাত্রা শুরুর আগেই এই শহরে মানুষের ঢল নামে। ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ - এই স্লোগানে শুধু শাপলা চত্বরই নয়, পুরো রংপুর মহানগরী মুখরিত হয়ে ওঠে । সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে বিকেলের আগেই রংপুর মহানগরী পরিণত হয় জনস্রোতে। নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে মানুষের ঢলের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এই গণপদযাত্রা শাপলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে রংপুর জিলা স্কুল মাঠ গিয়ে শেষ হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষক সংগঠন, শ্রমজীবী মানুষ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই গণপদযাত্রাটি পরিণত হয় হয় গণমানুষের মহাসমুদ্রে। বলা যায়, পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এটি গণ-আন্দোলনের আরেক রূপ। ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষ এতে অংশ নেয়। এর আগে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার মানুষ গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দু’দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। দু’দিনের কর্মসূচির শেষ দিনে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে প্রধান অতিথির বক্তব্যও রাখেন। তিনি তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই স্লোগানে দেন ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’। ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ এই স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে একযোগে তাঁবু খাটিয়ে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ‘তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার’ দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।

মির্জা ফখরুলের সাথে জাপানি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি।আজ রোববার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।এসময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, তার দেশে ফেরা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, জাপান সবসময়ই বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার। তারা (জাপান) স্বাভাবিকভাবেই চায় ভবিষ্যতে নতুন সরকারের সাথেও কর্মপরিবেশ বজায় থাকুক। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে জাপানের বড় বিনিয়োগ রয়েছে এবং ভবিষ্যতে তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি এবং আমরা সবসময় জাপানি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করি।’ খসরু বলেন,‘সবাই নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহী। জাপানও নির্বাচনের সময় জানতে চায়। তারা চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরে আসুক, এটাই প্রত্যাশা করছে।'

হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনি আহত হয়েছেন। রোববার সন্ধ্যায় চান্দনা চৌরাস্তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ঢাকার দিকে আসার সময় গাজীপুরে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পেছন থেকে ১০-১২টা মোটরসাইকেল এসে হাসনাতের ওপর হামলা করে। এতে তিনি আহত হন। এখন হাসনাত ঢাকায় ফিরছেন। সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এনসিপির আরেক নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘গাজীপুরের চান্দনায় হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলা হয়েছে। আশপাশে যারা আছেন দ্রুত এগিয়ে আসেন, প্লিজ।’ একই তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘হাসনাতের গাড়িতে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী গাজীপুর এলাকায় হামলা করেছে। গাড়ির গ্লাস ভেঙে গিয়েছে, হাত রক্তাক্ত হয়েছে। আশেপাশে যারা আছেন হাসনাতকে প্রটেক্ট করুন।’

তারা মুলা ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতর থেকে মনে হয়, তারা তো নির্বাচন চায় না। তারা একটা মুলা ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ডিসেম্বরে, না হলে ফেব্রুয়ারিতে বা জুনে- এ রকম নানা কথা বলছেন। কিন্তু কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলছেন না, অমুক মাসেই নির্বাচন হবে। রোববার (৪ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকাস্থ নীলফামারী জেলা জাতীয়তাবাদী ফোরামের উদ্যোগে সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের মুক্তির দাবিতে এই কর্মসূচি পালিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে রিজভী বলেন, আজকে মানুষ কিন্তু নানা কথা ভাবছে, দোসরদেরকে দুধ-কলা দিয়ে পোষা হচ্ছে। তারা (দোসররা) হয়তো আপনার সরকারকে বিএনপির বিরুদ্ধে নানাভাবে বুঝাচ্ছে। তারা বুঝাচ্ছে যে, বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে হবে। বিএনপির প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে আপনার সরকারের ভূমিকা মনে হচ্ছে এ রকম। আপনার সরকারের ভেতর থেকে মনে হয়, তারা তো নির্বাচন চায় না। একটা মুলা ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ডিসেম্বরে, না হলে ফেব্রুয়ারিতে বা জুনে- এ রকম নানা কথা বলছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আজকে সরকার দিনকে দিন তালবাহানা করছে। কিন্তু দেশ তার যে ’৭১-এর অহংকার এবং ’২৪ এর ৫ আগস্টের যে অহংকার, সে অহংকার মিলিয়ে মানুষের যে প্রত্যাশা অর্থাৎ বহুদলীয়, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা- এটাতো এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি। সেই সুযোগ অনেকে নস্যাৎ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে রিজভী আরও বলেন, আজকে মানবিক করিডরের কথা বলছেন। এই মানবিক করিডরের কথা আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে বলতে হচ্ছে। আপনার জনগণের ম্যান্ডেট নেই, আপনি নির্বাচিত নন। আজকে সব দিক থেকে এই কথা ধ্বনিত হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, আমাদের সার্বভৌমত্বের অবস্থা কী হবে- এটা জনগণের কাছে কোনোভাবেই খোলাসা করেননি। অনির্বাচিত সরকার অনেক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আপনার সরকারের প্রতি প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু সেই সমর্থনের মধ্যে আপনাদের যে বলীয়ান হওয়ার কথা, সেই বলীয়ান আপনারা হতে পারেননি। কারণ, জনগণের সঙ্গে আপনারা কানামাছি খেলা খেলছেন। এত লুকোচুরি করছেন যে, কানামাছি খেলতে গিয়ে জনগণের কাছে আপনারা সন্দেহের মধ্যে পড়ছেন। তিনি বলেন, আজকে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করে দিয়েছে। আমাদের মালামাল ভারতের পোর্ট দিয়ে অন্য দেশে যেত। কেন করেছে? আমাদের সঙ্গে তো কোনো বৈরিতা নেই। আজকে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের (ভারত) সংকট তৈরি হয়েছে। সেটা তাদের দুই দেশের মধ্যকার বিষয়। তাহলে আজকে যে দিল্লি একের পর এক বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকা রাখছে, আমরা তো সেই শেখ হাসিনার মতোই দেখছি। আপনাদের কোনো প্রতিবাদ নেই, কোনো উচ্চকণ্ঠ নেই। একইসঙ্গে এটা করলে আমাদের বিকল্প কী, এটাও তো জনগণের কাছে খোলাসা করা উচিত। তাদের মালামাল যাবে আমাদের দেশের ওপর দিয়ে, আমাদের নৌপথ, সড়কপথ ব্যবহার করবে। কিন্তু আমাদের ট্রান্সশিপমেন্ট যে ব্যবস্থা ভারতের সঙ্গে ছিল, সেটা তারা বন্ধ করে দিল। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল যে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন, সে যে অবৈধভাবে ক্ষমতা নিয়েছিল- সেটা প্রমাণ করার জন্য বিএনপির সমর্থক কিছু নেতাদেরকে জনগণের সামনে কলঙ্কিত করার জন্য তারা নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল। তার মধ্যে ছিল মিথ্যা মামলা। সেই মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছিল শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের নামে। রাজনৈতিক কারণে তুহিনকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। একই রকম ঘটনায় অন্যরা রেহাই পেলে তুহিন কেন পাবে না? আইন মন্ত্রণালয় যেখানে বলেছে যে, কোনো অসুবিধা নেই, তাহলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে এটি আটকে থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, আমরা তো বারবার বলি- আওয়ামী দোসররা বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছে। যারা বিএনপিবিরোধী, বেগম খালেদা জিয়াবিরোধী, তারা প্রশাসনে আছে এবং তারা গিরগিটির মতো রঙ পরিবর্তন করছে। রং পরিবর্তন করে ওরা নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করছে এবং ওরা গণতন্ত্র, নির্বাচন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে দিতে চায় না। আমরা বলেছি, যারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ভেঙেছে, যারা সংবিধান থেকে মুছে দিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, তারা তো আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে, আজও চাকরি করছে। যে বিচারপতি আক্তারুজ্জামান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছেন, তিনি এখনো কীভাবে বিচারপতি থাকেন? অনুষ্ঠানে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ডা. তৌহিদ আউয়াল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সংকট হচ্ছে, গণতন্ত্রই নেই: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা বরাবরই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। এবার সরকারে থাকি আর না থাকি, আমরা কখনোই অন্যায়ভাবে অন্যের মত চাপিয়ে দেওয়াকে সমর্থন করবো না। আমরা আরেকজনের মতের স্বাধীনতাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দেবো। এটাই আমাদের চিন্তাভাবনা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য আমরা লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। রোববার (৪ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৫ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি নতুন নয়। আমরা যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছি, সেই ষাটের দশক থেকে, তখন থেকে এ বিষয়টি সবচেয়ে সামনে এসেছে। পাকিস্তান শাসকদের বিরুদ্ধে সে সময়েও আমরা কথা বলেছি, আন্দোলন করেছি, কাজ করেছি। একটি সুবিধা ছিল। তখন সংবাদমাধ্যমের একটি নিজস্ব স্বকীয়তা ছিল। যেখানে তাদের কোনো গোষ্ঠীভুক্ত করা অতটা সহজ হতো না। তাদের দেশপ্রেম, আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ অনেক উঁচু দরের ছিল। তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিঃসন্দেহে আগের চেয়ে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রায় ১৬ ভাগ বেড়েছে। সমস্যা দেখা দেয় তখনই, যখন দেখি কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠী আরেকটি গোষ্ঠীকে আক্রমণ করে। কোনো কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীও সেটার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং বিভিন্ন রকম রাজনৈতিক কর্মসূচিও প্রদান করে। আমি জানি না, একটি গণতান্ত্রিক মুক্ত সমাজে এটা কতটুকু গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে! সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমরা একটি ট্রানজিশন পিরিয়ডে আছি। অনেক রকমের ঘটনা চলছে, অনেক রকম টানা-হেঁচড়া চলছে। তবে যদি আমরা সত্যিকার অর্থে একটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, তাহলে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে, চিন্তাভাবনাগুলোকে গণতান্ত্রিক করতে হবে। সংকট হচ্ছে, গণতন্ত্রই তো নেই। ১৫ বছর ধরে লড়াই করলাম গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য। চব্বিশের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি ফ্যাসিস্ট রেজিমকে সরিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শুরু করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, জনগণের ওপর আস্থা রাখতে হবে। তার চিন্তাভাবনা, তার রায়, তার মতের ওপর আস্থা রাখতে হবে। 'আমি' চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার গণতন্ত্রের জন্য। আমাদের সংবাদমাধ্যমে এই চর্চাটা বেশি করা দরকার। গণতন্ত্র চর্চা করার জিনিস। তিনি আরও বলেন, আমাদের নিয়ে প্রচারণা চালানো হয়, আমরা নাকি সংস্কারের বিরুদ্ধে। আমরা সংস্কার নয়, নির্বাচন চাই। অথচ সংস্কার বিষয়টি শুরুই হয়েছে আমাদের দ্বারা। আমরাই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় আসছি। আমরাই প্রেসিডেন্ট ফর্ম সরকার থেকে পার্লামেন্ট ফর্ম সরকারে গেছি। অনেক অনেক আপত্তি সত্ত্বেও আমরা কেয়ারটেকার সরকারকে সংবিধানে নিয়ে এসেছি। এগুলো বাস্তবতা। ওই বাস্তবতা থেকে অযথা আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে অন্যভাবে দেখানোর চেষ্টা করা এটার পেছনে কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকলেও থাকতে পারে। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালণায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক পরিষদের সহ-সভাপতি ও ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির, সম্পাদক পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ প্রমুখ।

বিএনপি আমলে সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন কম হতো : মির্জা ফখরুল

বিএনপি আমলে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের পরিমাণ অনেক কম ছিল বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (৪ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সময়ে নিঃসন্দেহে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আগের চেয়ে অনেক বেশি। তবে সমস্যাটা হয়ে গেছে এমন যে, একটি সংবাদ গোষ্ঠী আরেকটি গোষ্ঠীকে আক্রমণ করে….এবং তাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীও যুক্ত হয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় সে নানা কিছু বলবে। কিন্তু সেটা গ্রহণ না করে সংবাদপত্র গুঁড়িয়ে দেওয়াটা আমরা সমর্থন করি না। তিনি বলেন, বিএনপি প্রথম সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ১৯৭৫ সালে ওপেন করেছিল। তার আগে বাকশালের মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করা হয়েছিল। তাই বলে আমরা ধোয়া তুলসিপাতা নই, কিন্তু এটা বলতে পারি যে, বিএনপি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সময় সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন অনেকটাই কম হয়েছে। তবে এখন একটা ট্রানজিশন পিরিয়ড যাচ্ছে, নানা রকম ঘটনা ঘটছে। তবে আমি বলতে চাই, একটা গণতান্ত্রিক দেশ গড়ে তুলতে হলে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তার জন্য আমাদের চিন্তাভাবনাকেও গণতান্ত্রিক করতে হবে। এমন যদি হয় যে আমি যা ভাবছি বা যা বলছি সেটাই ঠিক, এমনটা হলে হবে না। তেমনি একইভাবে কোনো গণমাধ্যম যদি আমার কথা বলে, তাহলে ঠিক আছে, আর আমার কথা না বললে ঠিক নেই, তাহলেও হবে না। সভায় উপস্থিত ছিলেন— ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী প্রমুখ।

অনতিবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন: ফারুক

সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক বলেছেন, আমাদের দাবি সারা দেশের জনগণের দাবি অনতিবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। রোববার (৪ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন। ফারুক বলেন, দেশের পরিস্থিতি কি? দেশের অবস্থা কি? যখনই বিএনপি দেশ নিয়ে নির্বাচন নিয়ে কথা বলা তখনই একদল আছে তারা বলে বিএনপি শুধু নির্বাচনের নির্বাচন করে। বিএনপি তো নির্বাচনমুখী দল। তিনি বলেন, যারা খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে নিয়ে কথা বলে তাদেরকে বলি তারেক রহমান বা বিএনপি শেখ হাসিনার মত করে ক্ষমতায় আসতে চান না। ২০১৪ সালে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে সরকার গঠন করেছিল ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সেরকম করে বিএনপি সরকার গঠন করতে চায় না। বিরোধী দলের সাবেক এই চিফ হুইপ বলেন, মৃত ব্যক্তি ভোট দেবে এরকম নির্বাচন বিএনপি চায় না। বিএনপি দিনের ভোট রাতে হোক এটা চায় না। বিএনপি চায় একটি নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর উদ্দেশ্য তিনি বলেন, দেশের ৭৫ ভাগ মানুষ নির্বাচন চাই। তাই নির্বাচনের রোডম্যাপ আপনাকে দিতে হবে। আমরা হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদ হতে চাই না। দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চাই না। আমরা দেশকে ভালবাসি দেশের জনগণকে ভালোবাসি। দেশের জনগণের ভালোবাসায় আমরা ক্ষমতায় এসেছিলাম। আবার এ দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশের জনগণের ভালোবাসায় বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্যজীবী দলের সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী, কর্মজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আলতাব সরদারসহ প্রমুখ।

নির্বাচন সম্পর্কে বিএনপির কাছে জানতে চেয়েছে রাশিয়া: আমীর খসরু

বাংলাদেশে কবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা জানতে চেয়েছে রাশিয়া। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে এমনটাই জানতে চেয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার গ্রিগোরিভিচ খোজিন। রোববার (৪ মে) সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎ হয়। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমীর খসরু বলেন, দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক সেটাকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের (রাশিয়ার) বাংলাদেশে বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আগ্রহ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তারা (রাশিয়ার) বলেছেন, কত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছেন। আলোচনায় রাশিয়া-বাংলাদেশের জ্বালানি খাতেও সহযোগিতার বিষয় উঠে এসেছে জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, রাশিয়া একটি এনার্জি রিচ কান্ট্রি। এ খাতে দুই দেশের মধ্যে কী ধরনের সহযোগিতা হতে পারে, তা নিয়ে কথা হয়েছে। রাশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিকটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কালচারালি রাশিয়া অনেক সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের সঙ্গে সেই সম্পর্ক কীভাবে আরও জোরদার করা যায়, তা-ও আলোচনায় এসেছে।

খালেদা জিয়ার আসার দিনে সবাইকে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের অনুরোধ

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সোমবার (৫ মে) সকালে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এদিন বিএনপি নেতাকর্মীদের যানজট সৃষ্টি না করে এক হাতে জাতীয় পতাকা, অন্যহাতে দলীয় পতাকা নিয়ে রাস্তার দুই ধারে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানানোর নির্দেশনা দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আসা বিমানের ফ্লাইট বিমানবন্দরে নামার আগে-পরে নিচের সড়ক এড়িয়ে এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের অনুরোধ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।শনিবার (৩ মে) সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে গুলশানে যৌথ সভা শেষে এই অনুরোধ জানান মির্জা ফখরুল।চিকিৎসা শেষে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাংলাদশ বিমানে নয়, কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে ফিরবেন। তবে কখন বাংলাদেশে নামবেন তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে যান বেগম খালেদা জিয়া। টানা ১৭ দিন দ্য লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা শেষে ২৫ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন।তবে খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রার দিনে নেতাকর্মীদের ঢলে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েন উত্তরের দিকের মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকতে হয় সাধারণ মানুষকে। এমনকি নির্ধারিত সময়ে উড়তে পারেনি খালেদা জিয়াকে বহন করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স।ফখরুল বলেন, আমরা আশা করছি ৫ মে বেগম খালেদা জিয়া একটি বিশেষ বিমানে অর্থাৎ তিনি যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে গিয়েছিলেন সেটাতে দেশে ফিরবেন। সময়টা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। আমরা যখন নিশ্চিত হবো তখন গণমাধ্যমের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দেব। আমরা আগে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত ছিলাম না।মির্জা ফখরুল বলেন, চেয়ারপারসরেন দেশে ফেরার বিষয় নিয়ে আমরা যৌথসভা করেছি। যাতে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে জনগণ তাকে অভ্যর্থনা জানাতে পারেন সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে অত্যন্ত শৃঙ্খলার সঙ্গে রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে কোনো যানজট সৃষ্টি না করে তারা তাদের নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবে। এক হাতে জাতীয় পতাকা-অন্যহাতে দলীয় পতাকা দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাবো। এটা হচ্ছে দলীয় সিদ্ধান্ত। আমাদের নেতৃবৃন্দ দায়িত্ব নিয়েছেন তারা শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে এই অভ্যর্থনা যেন জানাতে পারি সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন।চার মাস পর দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীতসাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে এই ফ্লাইটটি আসার পরে বা আগে তারা যেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যেটা আছে সেটা যেন ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ তারা যেন বিমানবন্দর থেকে কাকলী পর্যন্ত এই জায়গাটা এড়িয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করেন। এটা আমাদের অনুরোধ থাকবে। আমরা আশা করি জনগণ আমাদের সহযোগিতা করবেন। দলীয় নেতাকর্মীদের বলবো যেইভাবে আলোচনা করেছি সেইভাবে যেন সবাই কাজ করি। শৃঙ্খলা নিশ্চিত করি।গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশেষ করে সাংবাদিকদের বলবো, আপনারা সবসময় সহযোগিতা করেন। কিন্তু আপনারা যে গাড়ি নিয়ে সামনে গিয়ে কভার করার চেষ্টা করেন তাতে করে হয় কি আমাদের লোকজন ম্যাডামের গাড়ির সামনে চলে আসে। এটা একটা বড় সমস্যা। তাই বারবার করে বলার চেষ্টা করছি। উনি আসবেন প্রায় ৭ -৮ ঘণ্টা জার্নি করে। এরপর যদি বাসায় ফিরতেই চার-পাঁচ ঘণ্টা লাগে তাহলে তো এমনিতেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তাই বিমানবন্দর থেকে দ্রুত যাতে তিনি বাসায় ফিরতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে।খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয় নিয়ে ফখরুল বলেন, চার মাস লন্ডনে চিকিৎসা শেষে তিনি ভালো পরিবেশ, একইসঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে উন্নত চিকিৎসার কারণে অনেকটা ভালোবোধ করছেন। যে কারণে চেয়ারপারসন দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।ফখরুল বলেন, এশিয়ার মধ্যে যেসব নারী নেত্রী বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন, কারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া অন্যতম। তিনি কখনো অন্যায়ের কাছে বিশেষ করে ফ্যাসিবাদের কাছে মাথানত করেননি। আপনারা জানেন, ১৯৯১সালে স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় বেগম খালেদা জিয়া তার স্বামী আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন তিনি দুই শিশু সন্তানের হাত ধরে ঢাকায় চলে এসেছিলেন।

এনসিপির সমাবেশের অর্ধেক লোক ছিল ভাড়া করা: যুবদল সভাপতি

জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেছেন, ‘এনসিপির শুক্রবারের সমাবেশ আপনারা দেখেছেন। ওই সমাবেশে সবমিলিয়ে এক হাজারের মতো লোক হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক লোক ছিল ভাড়া করা ভদ্রমহিলা। তারা যে নিজেদেরকে এত মেধাবী ও তারুণ্যদীপ্ত দাবি করেন, তাদের সমাবেশ দেখে কী তারুণ্যদীপ্ত মনে হয়েছে?’ তিনি শনিবার দুপুরে নগরীর একটি হোটেলে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ সভায় এসব কথা বলেন। মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘রেলওয়ের সংস্কারে ৩ জন ছাত্র প্রতিনিধিকে যুক্ত করা হয়েছে। তারা প্রতিনিধি হওয়ার পর থেকে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ট্রেন ভ্রমণ করছে। তারা একটা পিকনিকের আমেজে আছে।’ তিনি বলেন, ‘একাত্তরে যারা স্বাধীনতা বিরোধী ছিল এখন তারা অনেক ধরনের আস্ফালন করছে। কাউকে ক্ষমা করছে, কাউকে বুকে টেনে নিচ্ছে, সকালে একটা বলছে, বিকেলে আরেকটা বলছে।’ বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় ছিল, দেশ পরিচালনা করেছে। অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দল হিসেবে এই দেশের ভালো-মন্দ, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া-এটা ভালোভাবেই বিএনপি করতে পারবে। বাংলাদেশের মানুষ এটা বিশ্বাস করে।’ খুলনায় আগামী ১৬ মে ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার বিষয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। সভা পরিচালনা করেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। সভায় যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিনসহ খুলনা বিভাগের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে ভারত: আখতার হোসেন

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, গত ১৬ বছরে দেশকে পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ। পররাষ্ট্রনীতিতে এমন এক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার বার্তা আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারতের কাছে যথাযথভাবে উপস্থাপিত হয়নি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে যখন এ দেশের মানুষ তাদের হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে নেমেছে, ঠিক তখনই ভারত সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। শনিবার দুপুরে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার দেউতি পুরোনো মাঠে যুবসমাজের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারতের আগ্রাসনবাদী মনোভাব এমনভাবে কাজ করেছে, তারা এ দেশের মানুষকে মানুষ মনে করেনি। কারণ বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা পুরোপুরি ভারতের কাছে বিকিয়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দেশের মানুষ এখন মর্যাদার প্রশ্নে একাট্টা। সীমান্তে উত্তেজনা বা অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে বিজিবির পাশাপাশি স্থানীয় জনতাও সাহসিকতার সঙ্গে ভূমিকা রাখছে। এটি ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের শিক্ষা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদের অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষায় এনসিপি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিস্তা ইস্যু নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘উত্তরের তিস্তা নদী নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে বাঁধ নির্মাণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এসব বাস্তবায়িত হলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে।’ পাশাপাশি এখানকার অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো দৃশ্যমান করতে সরকারকে দ্রুত মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচিত সরকার ছাড়া করিডোর নয় : সালাউদ্দিন টুকু

রোহিঙ্গা ইস্যুতে করিডোর নিয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেছেন, দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমির মালিক জনগণ। সেটি আপনি যদি কাউকে ব্যবহার করতে দেন জনগণের অনুমতি লাগবে। এই জমি আপনি অন্যকে ব্যবহার করতে দিবেন কিনা অবশ্যই যারা মালিক তাদের জিজ্ঞাসা করা উচিত। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। শনিবার (৩ মে) দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাব অডিটরিয়ামে পুলিশ লাইন্স ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, দেশের করিডোর কেউ ব্যবহার করবে জনগণ জানবে না, সেটি হতে পারে না। দেশ সবার, দেশের স্বার্থ আমরা সবাই মিলে রক্ষা করবো। তিনি বলেন, দেশের মালিক এ দেশের জনগণ। দেশের মালিকানা, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার মানুষ ফেরত চায়। বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তিন কোটি ৬০ লাখ নতুন ভোটার, তারা ভোট দিতে পারেনি। এই দেশের মালিক কেউ এককভাবে নয়। ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে। বিদায় হওয়ার পর একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে এটাই মানুষের প্রত্যাশা। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন, সেটিই বিএনপি চাচ্ছে। এসময় পুলিশ লাইন্স আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মাহমুদুল হক সানু ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুর রহমান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির সমর্থনে ড. ইউনূস টিকে আছেন: দুদু

বিএনপির সমর্থনের কারণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস টিকে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যাকে সমর্থন দিচ্ছি তিনি হচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছেন বিএনপির সমর্থনের কারণে। বিএনপি সমর্থন প্রত্যাহার করলে, তারপর কী হবে, তিনি কিন্তু তা বুঝতে পারছেন না বা তাকে বুঝতে দেওয়া হচ্ছে না। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সাবেক মন্ত্রী সুনীল গুপ্তের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সুনীল গুপ্ত স্মৃতি সংসদ আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।ৎ শামসুজ্জামান দুদু বলেন, দেশে গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য আমরা তাকে (ড. ইউনূস) সমর্থন করি, যেন দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু এখন নির্বাচনের কথা বললে মনে হচ্ছে বড় অপরাধ। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গত ১৫-১৬ বছর ধরে লড়াই করেছি। লড়াইটা এখনও আছে, এখনও রাজপথে আছি। সেই লড়াইটা শেষ হবে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। নির্বাচন যে পর্যন্ত না হয় সে পর্যন্ত আমাদের লড়াইটা চালু আছে। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, কেউ কেউ বলেন- কোনো দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য গণঅভ্যুত্থান হয়নি। তাদের বলি- কোনো দল বাংলাদেশের ক্ষমতায় না এলে কে আসবে, সামরিক? তারা যদি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে তাহলে দেখবে, নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রে উত্তরণে আর দ্বিতীয় কোনো পথ নাই। দুদু বলেন, বাংলাদেশকে বহিঃশত্রু থেকে বাঁচাতে, দেশের ভেতরে যেসব শত্রু আছে, তাদের মোকাবিলায়, দেশকে বিকশিত ও সত্যিকারের বাংলাদেশের রূপান্তরিত করতে হলে একটি রাজনৈতিক সরকার দরকার। সেই রাজনৈতিক সরকার আসবে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। তিনি আরও বলেন, আমি বলছি না বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। যে দলই ক্ষমতায় আসুক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে হতে হবে এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তারা কাজ করবে। কারও নাম উল্লেখ করে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, একদল আছে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মানতে চায়নি। মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছে। তারা যেন বাংলাদেশের এখন সবকিছু। ‘দেশের সবাই জানে, আমরাও জানি বিএনপি ছাড়া এ দেশে আর দ্বিতীয় কোনো দল নাই, যারা ক্ষমতায় আসবে। যারা দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে। যারা বিএনপিকে বাদ দিতে চায়, তাদের বলব- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং সুনীল গুপ্ত- এদের দিকে তাকান তাহলে বুঝবেন রাস্তা সোজা নাকি আঁকাবাঁকা।’ সাবেক মন্ত্রী সুনীল গুপ্তের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সুনীল গুপ্ত ইতিহাসের পাতায় জাতীয়তাবাদীর প্রগতিশীল রাজনীতির অন্যতম দিকপাল। তাকে স্মরণ করা, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করার মতোই। মাওলানা ভাসানী, সুনীল গুপ্ত, মশিউর রহমান যাদু মিয়া- তাদের রাজনৈতিক জীবন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। তাদের বিষয়গুলোকে আমরা যত এড়িয়ে যাব আড়াল করব বাংলাদেশ তত ভঙ্গুর হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নাজমুল হক নান্নু, বিজন কান্তি সরকার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।

হেফাজতে ইসলামের ১২ দফা দাবি, কঠোর বার্তা

জাতীয় নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও তার চিহ্নিত দোসরদের বিচার নিশ্চিত করাসহ ১২ দফা দাবি পেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।শনিবার (৩ মে) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে সংগঠনটির নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক এসব দাবি পেশ করেন। এ সময় আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ দেশের শীর্ষ নেতারাসহ দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম উপস্থিতি ছিলেন। হেফাজতের ১২ দফা দাবি ১. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও তাদের কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিলপূর্বক আলেম-ওলামাদের পরামর্শক্রমে ধর্মপ্রাণ বৃহত্তর নারী সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। নারীর সামাজিক উন্নয়নে পশ্চিমা মূল্যবোধ নয়, বরং আমাদের নিজস্ব সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোকেই বাস্তবমুখী সংস্কারের দিকে যেতে হবে। ২. সংবিধানে আল্লাহর ওপরে পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে হবে। ধর্মপ্রাণ গণমানুষের ঈমান ও আমল রক্ষার্থে বহুত্ববাদ নামক আত্মঘাতী ধারণা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। এছাড়া লিঙ্গ পরিচয়, লিঙ্গ বৈচিত্র্য, লিঙ্গ সমতা, তৃতীয় লিঙ্গ বা থার্ড জেন্ডার ইত্যাদি শব্দের মারপ্যাঁচে, কাউকে বাদ দিয়ে নয় এমন ধোঁয়াশাপূর্ণ স্লোগানের অন্তরালে এবং অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শব্দের আড়ালে এলজিবিটি ও ট্রান্সজেন্ডারবাদের স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমাজবিধ্বংসী ধর্মবিরুদ্ধ সমকামীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠার পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে। ৩. শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যার বিচারে গতি আনতে ট্রাইব্যুনালের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও তার চিহ্নিত দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। হেফাজতে ইসলামের ১২ দফা দাবি, সমাবেশ থেকে কঠোর বার্তা৪. গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম ও তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে। ৫. আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর নামে কটূক্তিকারী ও বিষোদ্‌গার বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ধর্মীয় অবমাননা সংক্রান্ত শাস্তির আইনি ধারাগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। ৬. চট্টগ্রামে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে শহীদ সাইফুল ইসলাম হত্যার উসকানিদাতা চিন্ময় দাসের জামিন প্রত্যাহারপূর্বক তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। ৭. ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে সারা দেশে প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও ইসলামমনা তরুণদের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা ও বানোয়াট সব মামলা অতিসত্বর প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। সেই সঙ্গে জঙ্গি নাটক বা জঙ্গি কার্ড খেলে বাংলাদেশকে ইসলামপন্থি ও আলেম-ওলামাদের গত ১৫ বছর যারা নির্যাতন চালিয়েছিল তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ৮. গাজার মুসলমানদের ওপর অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা ও ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই সরকারকে কূটনৈতিকভাবে আরও উচ্চকণ্ঠ হতে হবে এবং দেশের সর্বস্তরের জনতাকে ইসরায়েলি ও ভারতীয় পণ্য বয়কট করতে হবে। ৯. ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। শিক্ষার প্রাথমিক থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ১০. রাখাইনকে মানবিক করিডোর প্রদানে সরকারের সম্মত হওয়া সম্পূর্ণরূপে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আমাদের ভৌগোলিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে অবশ্যই অনতিবিলম্বে ফিরে আসতে হবে। ১১. চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে ভিনদেশি মিশনারি অপতৎপরতা ও দৌরাত্ম্য বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা সংকট কমাতে আলেম সমাজের দাওয়াতি কার্যক্রমকে আরও নিরাপদ এবং সুযোগ করে দিতে হবে। সেখানে সামরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বৃদ্ধি করা ছাড়াও পাহাড়ি ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমঝোতা ও স্থিতিশীলতা বিনির্মাণে রাষ্ট্রীয় তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। ১২. কাদিয়ানীদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আকিদা রক্ষার্থে কাদিয়ানীদের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। এসব দাবি পেশকালে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গণহত্যাসহ জুলাই আন্দোলনে ৮৪ মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকসহ সব শহীদকে স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। একইসঙ্গে আহত ও পঙ্গুত্ব বরণকারীদের দ্রুত সুস্থতা কামনা ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

বিভাগীয় সমাবেশসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হেফাজতের

নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ। নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে তিন মাসব্যাপী বিভাগীয় সম্মেলন এবং আগামী ২৩ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল করবে সংগঠনটি। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমান। এদিন সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এই মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবু নগরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। দুপুর ১টা ১১ মিনিটে আমিরের মুনাজাতের মাধ্যমে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে হেফাজতের মহাসচিব বলেন, ‘নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ২৩ মে বাদ জুমা চার দফা দাবির ভিত্তিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।’ সমাবেশে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী আমিরের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গেলে আমরা কিছুটা হলেও স্বাধীনতার স্বাদ পাই। কিন্তু ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। তাই আগামীর আন্দোলনে আরও দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’ আজিজুল হক ইসলামাবাদী হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এনজিওদের প্ররোচনায় ইসলামবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে হেফাজত তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।’ তিনি দাবি করেন, ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং ধর্ম অবমাননা আইন বাতিলের সুপারিশ প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি ধর্ম অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’ সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন হেফাজতের নায়েবে আমির এবং বেফাকুল মাদারেসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি বলেন, ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও কোরআনবিরোধী প্রতিবেদক বাতিল করে আলেমদের সমন্বয়ে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং ‘বহুত্ববাদ’ শব্দটি বাদ দিতে হবে।’ মাহফুজুল হক আরও বলেন, ‘শাপলা চত্বরে ও জুলাইয়ের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্ত বৃথা যাবে না। সেই গণহত্যার বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগকে ‘খুনি দল’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।’ গণমাধ্যম সংস্কারের কথাও তুলে ধরেন হেফাজতের নেতারা। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় এমন সংবাদ ও প্রচার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানান তারা।

অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘস্থায়ী হলে সমস্যা বাড়ে: ফরিদুজ্জামান ফরহাদ

অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে দেশে নানা সমস্যা তৈরি হয় বলে মনে করেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। শনিবার (৩ মে) জাতীয় সংসদের এলডি হলে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর সঙ্গে এক সংলাপে তিনি বলেন, আমরা চাই, দেশের মানুষ যেন নিজের ভোট নিজে দিতে পারে। কেউ যেন ভোট দিতে বাধ্য করতে না পারে। কেউ যেন টাকার বিনিময়ে ভোট কিনতে না পারে। তিনি বলেন, আমরা এমন একটা ভোট চাই—যেখানে মানুষ দীর্ঘ ১৫ বছর পর বলতে পারে, আমি স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পেরেছি। নিজের পছন্দে সরকার গঠন করতে পেরেছি। ফরহাদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন নিয়ে প্রস্তাবগুলো আমরা পুরোপুরি সমর্থন করি। দেশের গণতন্ত্র গঠনে যতটুকু পারি, আমরা আমাদের ভূমিকা রাখব। সংলাপের শুরুতে বক্তব্য দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে একটি জাতীয় সনদ তৈরির লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য থাকবেই। কিন্তু যেসব বিষয়ে সংবিধান, রাষ্ট্র পুনর্গঠন এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে সেখানে ঐকমত্য গড়ে তুলতে পারলেই জাতীয়ভাবে উপকৃত হব। এই আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার ও ইফতেখারুজ্জামান। সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। কমিশনের কাজ শুরু হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। উদ্দেশ্য একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতের রাষ্ট্র কাঠামোর রূপরেখা তৈরি।

আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলে নির্বাচন হওয়া উচিত

দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছেন উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের আবহাওয়া ও অবস্থার দিকে তাকিয়ে ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিলে নির্বাচন হওয়া উচিত। শনিবার (৩ মে) সকালে ঢাকার মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা দুটি সময়কে উপযুক্ত মনে করি। একটি ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে। তবে যদি এ সময়ের মধ্যে সংস্কারগুলো এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা সৃষ্টির পর্যায়ে না আসে তাহলে সর্বোচ্চ এপ্রিল পার হওয়া উচিত না।’ এখানে আমাদের দেশের আবহাওয়া এবং পারিপার্শ্বিকতার বিষয় আছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ এবং মার্চ মাসের তিন ভাগের দুই ভাগ রোজা থাকবে। সে সময়ে নির্বাচন সম্ভব নয়।’ তিনি আরও বলেন, সংস্কার কার্যক্রম যেটা হাতে নেওয়া হয়েছে তা যদি আক্ষরিকভাবেই গতিশীল করা হয় এবং অংশীজনরা সেরকম সহযোগিতা করেন তাহলে সরকারের ঘোষিত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচন সম্ভব। ফ্যাসিবাদের পতন হলো নাকি ফ্যাসিবাদীদের পতন হলো তা নিয়েও আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে। আমাদের দুঃখের ইতিহাসে জাতি হিসেবে আমরা এখনো ইতি টানতে পারিনি। জামায়াত আমির বলেন, ২০১১ সালের এপ্রিল মাসের পর এমন একটি সম্মেলন একত্রে বসে করার সুযোগ পাইনি। ২০০৯ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের সঙ্গীরা দেশকে শাসন এবং শোসন করেছে। তারা এ দেশের বিরোধী দল-মত বিশেষ করে ইসলামপন্থিদের ওপর বিভিন্নভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে। কমপক্ষে তিনটি গণহত্যা তারা চালিয়েছে। প্রথমটি তৎকালীন বিডিয়ারদের হেডকোয়ার্টারে পিলখানায় ৫৭ জন চৌকস দেশপ্রেমিক সেনাদের হত্যা করে। এরপরের হত্যা হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে। হেফাজতের আহ্বানে সমাবেশে রাতের বেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে ঘুটঘুটে অন্ধকারে মানুষগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। আরেকটি গণহত্যা ২০২৪ এর জুলাই মাসের অর্ধেক ও আগস্টের ৫ তারিখ পর্যন্ত। এতে শহীদ হয়েছে অনেকে, পঙ্গু হয়ে আছে অনেকজন। জামায়াত আমির বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না। আমরা আমদের দলীয় সহকর্মীদের অনুরোধ করেছিলাম, সবাই যেন ধৈর্য ধরে, শান্ত থাকে। এর পাশাপাশি আমরা সাধারণ মানুষকেও আহ্বান জানিয়েছি। অন্যান্য দলও সেই আহ্বান জানিয়েছে। অন্যান্য দেশে এ সময়ে যা ঘটেছে তার তুলনায় তেমন কিছুই ঘটেনি। যা ঘটেছে তাও আমরা সমর্থন করি না। সেদিনই আমরা বলেছিলাম আমরা আইন হাতে তুলে নেবো না। প্রতিকার চাইতে হবে আইনি প্রক্রিয়ায়। আমাদের সহকর্মীরা এই ডাকে সাড়া দিয়েছে। কিছু জায়গায় এমন ঘটলেও সে জায়গায় আমরা চেহারার দিকে না দেখে ব্যবস্থা নিয়েছি। এরপর আমাদের শহীদ পরিবার ও আহতদের কাছে যাওয়া। শহীদদের পরিবারের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আহতদের জন্য অনেক বেশি করতে পারিনি। তবে তাদের জন্য যতটুকু পেরেছি তা করেছি, এর বাইরে সরকারকে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছি। এরপর থেকে ফেনীতে যে বন্যা হয়েছে সেখানে আমরা শুরু থেকে অবস্থানের চেষ্টা করেছি। আমাদের চেষ্টায় যদি কিছুটা হলেও তাদের সান্তনার কারণ হয় তার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করতে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য যেখানে জনগণের ভোগান্তি সেখানে সবার আগে সাড়া দেওয়া হয়তো সবসময় সম্ভব হয় না। আওয়ামী লীগের পতনের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা যাতে বিঘ্ন না ঘটে এবং যে ধরনের ভয়াবহতা বন্ধে জামায়াত ইসলাম কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভলেন্টিয়ার ভাইয়েরা সে সময় যারা মাঠে ছিল তারা টানা ১৫ দিন অমুসলিমদের বাড়িঘর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যে চেয়েছে তার ব্যবসা আমরা রক্ষা করেছি। এর পাশাপাশি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা এগিয়ে এসেছেন। অন্যান্য কিছু সংগঠনের লোকদেরও আমরা দেখেছি। এ সময় যারা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেছি। এছাড়া সাড়ে ১৫ বছরের সময় ধরে যারা হত্যা, গণহত্যা গুম, খুন, ধর্ষণ করেছে, দেশের মানুষের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে তাদের যাতে আইনের আওতায় আনা হয় তার দাবি আমরা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করে যাবো। তাদের প্রাপ্য শাস্তি অবশ্যই ভোগ করতে হবে। এই সরকার জন-আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছি৷ তবে এর মাঝে সরকারের কিছু উপদেষ্টা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে। যা থেকে তাদের দূরে থাকার আহ্বান জানাই।

যাত্রীদের কষ্ট বিবেচনায় সিলেট হয়েই ঢাকায় আসছেন খালেদা জিয়া

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে আগামী ৫ মে দেশে ফিরছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাধারণ একটি ফ্লাইটে তিনি দেশে ফিরবেন। তার সুবিধার্থে বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের ফ্লাইটের রুট লন্ডন-সিলেট-ঢাকার পরিবর্তে লন্ডন-ঢাকা-সিলেট করার প্রস্তাব করে। কিন্তু তিনি যাত্রীদের কষ্ট বিবেচনায় আগে সিলেটেই অবতরণের কথা বললেন। শুক্রবার বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার বিষয়টি জানান। শামসুদ্দিন দিদার বলেন, লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে আগামী ৫ মে দেশে ফিরছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন তিনি। আগামী ৪ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়াকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি উড্ডয়নের কথা রয়েছে। তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি লন্ডন থেকে ছেড়ে সিলেট হয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। বিমান কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে বিমানের রুট লন্ডন-সিলেট-ঢাকার পরিবর্তে লন্ডন-ঢাকা-সিলেট করার প্রস্তাব করে। বিষয়টি খালেদা জিয়ার কাছে পৌঁছালে ওই ফ্লাইটের অন্য যাত্রীদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে তিনি বিমান কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবটি নাকচ করেন।

জোবাইদার ৪ ধরনের নিরাপত্তা চেয়ে আইজিপিকে চিঠি বিএনপির

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডা. জোবাইদা রহমানের চার ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি দিয়েছে দলটি। গত সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার স্বাক্ষরে এই চিঠি দেওয়া হয়। আবদুস সাত্তার চিঠি দেওয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেন, ডা. জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা শেষে আগামী সোমবার দেশে ফিরবেন। ডা. জোবাইদা রহমান তার সফর সঙ্গী হিসাবে দেশে আসবেন এবং ধানমন্ডিস্থ তার বাবার বাসায় অবস্থান করবেন। জিয়া পরিবারের সদস্য এবং তারেক রহমানের সহধর্মিনী হিসেবে তার জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। সেই কারণে তার ঢাকাস্থ বাসায় অবস্থানকালীন এবং যাতায়াতের সময় একজন স্বশস্ত্র গানম্যান, গাড়িসহ পুলিশ প্রটেক্টশন, বাসায় পুলিশ পাহারা এবং বাসায় আর্চওয়ে স্থাপনের মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা শেষে আগামী ৫ মে সকালে দেশে ফিরবেন বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে। তার সঙ্গে দুই পূত্রবধু (তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান) থাকবেন। সাবেক নৌ বাহিনী প্রধান রিয়ার এ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের মেয়ে জোবাইদা রহমান ২০০৭ সালে স্বামী তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার লন্ডনে নিয়ে যান। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছিল।

‘আ.লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে দেশে কোনো নির্বাচন নয়’

আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। শুক্রবার (২ মে) জুমার নামাজের পর থেকে বায়তুল মোকাররমের সামনে চলা সমাবেশে এই ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতারা। সমাবেশে এনসিপির ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানার নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। যা বলছেন এনসিপি নেতারা এনসিপির নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টালবাহানা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হবে, এই সিদ্ধান্ত জনগণ গত বছরের ৫ আগস্টই দিয়েছে। এরপরও কেউ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে জুলাই যোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করবে। এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আমরা টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি, এটা লজ্জার। আমাদের হাইকোর্ট দেখাবেন না। হাইকোর্ট দেখে জুলাই বিপ্লব হয়নি।’ আওয়ামী লীগকে কেন নিষিদ্ধ করা হবে না, তা জুলাই প্রজন্ম জানতে চায় উল্লেখ করে তারিকুল বলেন, অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে তারা কোনো আমলাতন্ত্রিক জটিলতা দেখতে চান না। সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আগে আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের পর নির্বাচনে যেতে হবে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবীন বলেন, ‘খুনি হাসিনাকে আমরা বিদায় করেছি। এই বিজয় আমাদের ধরে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না, ইনশা আল্লাহ।’ যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী বলেন, ‘খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলাতে হবে। এ ছাড়া মৌলিক সংস্কার ছাড়া আবারও একটি নির্বাচনের দিকে যাওয়া হলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি করা হবে।’ আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ বলেছেন, ‘আমাদেহ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আওয়ামী লীগ ও হাসিনার দোসররা হুমকি। এরা বাংলাদেশে থাকতে পারে না।’ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৫ বছর দেশের মানুষকে শোষণ করেছে। দেশের মানুষকে তারা ভোট দিতে দেয়নি উল্লেখ করে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নূর বলেন, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য অবশ্যই দুর্নীতিপরায়ণ, খুনি-গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। দিল্লির ‘প্রেসক্রিপশনে’ বাংলাদেশ আর চলবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে ন্যূনতম টালবাহানা করবেন না। মৌলিক সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন নয়। দলের যুগ্ম সদস্য সচিব তাহসীন রিয়াজ বলেন, ‘আগামীর রাজনীতি হবে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ থেকে ছুড়ে ফেলার রাজনীতি। যে সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করছে, তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার রাজনীতি।’ এনসিপির সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনী বলেন, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হতে হবে। এটাই হবে এই সরকারের অন্যতম সংস্কার। এনসিপির সংগঠক মোস্তাক আহমেদ শিশির বলেন, এই দেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে, সেই সিদ্ধান্ত জনগণ ৫ আগস্টই দিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে জুলাই যোদ্ধারা তা প্রতিহত করবে। সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। দলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলবে কি চলবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। দলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার বলেন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। সংস্কারের আগে কোনো জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। কয়েকটি দল এনসিপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আতাউল্লাহ বলেন, এনসিপির বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করবে, তারা শেষ হবে। এনসিপির একজন কর্মী জীবিত থাকতে বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না। সমাবেশে বক্তব্য দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ খালেদ সাইফুল্লাহর বাবা কামরুল হাসান। তিনি বলেন, আমার ছেলের বুকে ৭০টা গুলি করা হয়েছিল। একটা মানুষকে মারতে কত গুলি করতে হয়? হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী হাসিনা ও তার দোসরদের কোনো স্থান হবে না। আজ পৌনে ৫টার দিকে সমাবেশে যোগ দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। মঞ্চে আছেন দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।

ইসির নিবন্ধন কেটে আ.লীগের নাম সন্ত্রাসীর খাতায় লিখতে হবে: আখতার হোসেন

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন থেকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন কেটে সন্ত্রাসী খাতায় লিখতে হবে। কারণ এটি একটি গণহত্যাকারী দল। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ নেই। শুক্রবার (২ মে) বিকালে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিক্ষোভ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ড ও আশপাশের জেলাগুলোর বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে আখতার বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধা কোথায়? তিনি অবিলম্বে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানান। এ ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য কামনা করেন। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি এই দুই দলের বিরুদ্ধে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।