
দেশের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের অবস্থান এক হওয়া উচিত - তারেক রহমান
দেশের স্বার্থের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এক হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শুক্রবার (২ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। তারেক রহমান বলেন, বিগত বছর গুলোতে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে আবারও স্বৈরাচার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অবজ্ঞা ও অবহেলামূলক বক্তব্য অপশক্তিকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে সহায়তা করবে। এছাড়া করিডোরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে নির্বাচিত সংসদ থেকে। তিনি বলেন, দেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের আদালতে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, জনগণকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দেবার জন্য জনগণের নির্বাচিত সরকার দরকার। সেজন্য দেশে স্বাধীনভাবে ভোট প্রদানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

আহতরা এখনো কাতরাচ্ছে অথচ আ. লীগ নির্বাচনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে: তাসনিম জারা
গত জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করা রোগীরা এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে আর আহাজারি করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের হাতে যারা নিপীড়িত হয়েছেন, তাদের কেউ এখনো বিচার পায়নি। দলটির মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং তারা আবার নির্বাচনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।শুক্রবার (২ মে) বিকেলে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।ডা. তাসনিম জারা বলেন, জুলাই-আগস্টের সেই দুঃসহ সময়ের ক্ষত এখনো শুকায়নি। হাসপাতালগুলোতে এখনও আমাদের ভাইয়েরা কাতরাচ্ছে। কেউ চোখের আলো হারিয়েছে, কেউ আর কখনও হাঁটতে পারবে না। এতসব ঘটনার পরও এখন বলা হচ্ছে, সেই দল নির্বাচনে যাবে। এটা কি কোনো দেশের সঙ্গে, কোনো জাতির সঙ্গে উপহাস নয়?তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের হাতে যারা নিপীড়িত হয়েছেন, তাদের কেউ এখনো বিচার পায়নি। দলটির মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং তারা আবার নির্বাচনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। আমাদের প্রশ্ন—আর কত মানুষকে গুম-খুন করলে, কতজন পঙ্গু হলে একটা দলের নিবন্ধন বাতিল হবে? আর কত দমন-পীড়নের পর সেই দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে? হুঁশিয়ার করে ডা. তাসনিম জারা আরও বলেন, আমরা হাল ছাড়ছি না। আওয়ামী লীগের বিচার বাংলাদেশেই হতে হবে। শুধু দল নয়—ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর যেসব নেতা এসব অপরাধে জড়িত, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।এনসিপি নেত্রী বলেন, আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি, গত ১৬ বছরের গুম-খুন আর ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেসবের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে ফিরতে পারবে না। এই দেশে তাদের রাজনীতি হবে না—হবে না, হবে না, হবে না।প্রসঙ্গত, এদিনের বিক্ষোভে এনসিপির অন্য নেতারাও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য দেন। তারা দলটির নিবন্ধন বাতিল, বিচার নিশ্চিত করা এবং আগামী নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসী রাজনীতি বন্ধ করার দাবি জানান।

ফাঁসির দড়ি ছাড়া হাসিনার দেশে ফেরা নয় : এনসিপি নেতা মাহিন
ফাঁসির দড়ি ছাড়া হাসিনার দেশে ফেরার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার।তিনি বলেন, যারা মনে করছেন শেখ হাসিনা দ্রুতই দেশে ফিরবে, তাদের জন্য বলতে চাই- শেখ হাসিনা শুধু একটি কারণেই বাংলাদেশে ফিরতে পারেন তা হলো ফাঁসির দড়ি গলায় ঝোলাতে।শুক্রবার (২ মে) বিকেল ৪টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।মাহিন বলেন, যাদের হাতে হাজারো সাধারণ মানুষের রক্ত, তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ গণহত্যা ও স্বৈরশাসনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার বিচার এখন সময়ের দাবি।তিনি আরও বলেন, যেদিন শেখ হাসিনা আমাদের ‘রাজাকার’বলেছিলেন, সেদিন থেকেই অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল। জাতিকে অপমান করার পরিণতি ইতিহাসে কখনো ভালো হয়নি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সংবিধানের নামে যদি বাঙালি জাতীয়তাবাদকে মুছে ফেলা হয়, তবে মানবিক অধিকার বলে কিছু থাকবে না।মাহিন সরকার ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম ইলেকট্রনিক বিপ্লব’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, এই বিপ্লব কেবল বাংলাদেশের নয়, কাশ্মীর ও ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষদের প্রতিও এক ধরনের আশার বার্তা।অতীত ইতিহাসের দৃষ্টান্ত টেনে তিনি বলেন, ইতিহাস বলে—ইব্রাহিম (আ.) এর কাছে নমরুদের, মুসা (আ.)-এর কাছে ফেরাউনের পতন হয়েছিল। এবার ছাত্র-জনতার হাতেই পতন হয়েছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার।এর আগে একই দিন বেলা ৩টায় বায়তুল মোকাররম গেটে আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে এনসিপি। দলটির নেতারা অভিযোগ করেন, গত জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার ওপর ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদিন শিশির বলেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।বক্তারা আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা রায় দিয়েছেন—আওয়ামী লীগ আর রাজনীতি করতে পারবে না। দলটির নেতাদের মাঠে নামতে দেওয়া হবে না, প্রতিহত করা হবে।বিক্ষোভে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন এনসিপির নেতাকর্মীরা। উত্তরের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা থেকে বিক্ষোভকারীরা এতে যোগ দেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চাইলেন তারেক রহমান
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শুক্রবার (২ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে এবি পার্টির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আবারও বলতে চাই, সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের আদালতের মুখোমুখি করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সংসদ… সরকার গঠিত হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুসংহত থাকবে। রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে সরকার গঠন ও পরিবর্তনে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যস্ত হয়ে উঠলে আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে আর কেউ তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে সক্ষম হবে না।তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। রাজনীতির ময়দানে আমরা তাদের স্বাগত জানাই। গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি দেশের স্বার্থের প্রশ্নে বাংলাদেশের পক্ষের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান এক ও অভিন্ন। উদ্দেশ্য এবং গন্তব্য এক ও অভিন্ন। কী সেটি? সেটি হচ্ছে দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং অবশ্যই জনগণের কল্যাণ সাধন। তবে যে রাজনৈতিক দলটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে, গণতন্ত্র হারিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্ম দিয়েছিল, সংবিধান, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছিল, গুম-খুন-অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল, বাংলাদেশকে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। গণতন্ত্রকামী জনগণ দেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তিকে কখনোই মেনে নেবে না। তিনি বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে পলাতক স্বৈরাচার জনগণের ভোট ছাড়াই তিনবার অবৈধ সরকার গঠন করে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আজ জানতে চায় সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের আগামী দিনের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বা নিয়েছে। ব্লেইম গেম দিয়ে কিন্তু দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার আগামী দিনে অবশ্যই সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছেন তাদের আমি বলতে চাই, লুটপাট ও দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা হাতে নিয়ে সারা দেশে স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার অপেক্ষায়। স্থানীয় নির্বাচন পলাতক স্বৈরাচারের জন্য পুনর্বাসিত হওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ। যারা বলেছেন তারা হয়ত এই বিষয়টি বিবেচনা করেননি। আমি অনুরোধ করব বিষয়টিকে এভাবে বিবেচনা করার জন্য।তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণের স্বাধীনতার বার্তা উপেক্ষা করে পতিত পলাতক স্বৈরাচার দীর্ঘ দেড় দশক স্বাধীন বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়, পরাজিত তাঁবেদার অপশক্তি ও তাদের দোসররা আর যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেটিই হোক বাংলাদেশের আজ এবং আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।তিনি বলেন, জনগণকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করা না গেলে শেষ পর্যন্ত কোনো সংস্কারই হয়ত টেকসই হবে না। এ কারণেই রাষ্ট্র-রাজনীতির গুণগত সংস্কার এবং নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবসময় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবি জানাবে এটাই স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রীতি। অথচ আমরা খেয়াল করছি গত কিছুদিন ধরে অত্যন্ত সুকৌশলে দেশে এমন একটি আবহ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানোই যেন এক অপরাধ। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অবজ্ঞা সূচক বক্তব্য-মন্তব্য কিন্তু পলাতক স্বৈরাচারকে আনন্দ দেয়। অপরপক্ষে এটি গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য অপমানজনক। রাষ্ট্র-রাজনীতি মেরামতের জন্য সংস্কারের কর্মযজ্ঞ চলছে। তবে চলমান সংস্কারের জন্য যদি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে অবজ্ঞা করতে হয় তাহলে সংস্কারের তাৎপর্যটা কি? এটি বহু মানুষের প্রশ্ন আজ।তারেক রহমান বলেন, দেশের প্রতিটি দল সংস্কারের পক্ষে। তারপরও সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন এত সময়ক্ষেপণ করছে। এই নিয়েও জনগণের মনে ধীরে ধীরে প্রশ্ন বেড়ে চলেছে।এসময় আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হকসহ এবি পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীরা।

আ. লীগের নিবন্ধন বাতিল করে সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শুক্রবার (২ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।নাহিদ বলেন, যে আলোচনা নিয়ে রাজনীতি সামনে আগাচ্ছে, সেটা হলো : সংস্কার, নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের বিচার। এর কোনোটিই একে অন্যের বিরোধী নয়, বরং এ তিনটির মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক রুপান্তর হওয়া সম্ভব। ৫ই আগস্টে বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি রায় দিয়েছে যে, তারা এ দেশে আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না। ফলে জনগণই আওয়ামী লীগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপায় হচ্ছে, একটি ভোটের মাধ্যমে, অন্যটি রাজপথে তাদের অবস্থান জানান দিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। একই ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হতে পারবে নাতিনি বলেন, একটি গণ অভ্যুত্থান দেশে হয়েছে, সেখানে এ দেশের জনগণ মুজিববাদ ও আওয়ামী লীগকে অস্বীকার করেছে। জনরোষে পড়ে আওয়ামিলীগের নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এরপরে আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না এ আলোচনা আসতে পারে না। তারা রাজনীতির নৈতিক ভিত্তি হারিয়েছে। এখন তার আইনি বন্দোবস্ত কি হবে, কোন প্রক্রিয়ায় তাদের রাজনীতি থেকে বের করবো। অতএব আওয়ামিলীগের নিবন্ধন বাতিল অতি দ্রুত করা উচিত এবং তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।নাহিদ আরও বলেন, সংস্কারের কথা সব রাজনৈতিক দলই বলছে। একটি মৌলিক সংস্কারের জায়গায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যার মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা ও ক্ষমতা হস্তান্তর হতে পারে। তা পরিবর্তন না হলে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হবে না।তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সবসময় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের বাহিরেও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা প্রয়োজন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা অর্জন করা। তা নাহলে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের যে চেষ্টা তা সম্ভব হবে না।

যারা ৭২ এর সংবিধান বাতিল চায় না, তারা কি জিয়ার অনুসারী: কবি ফরহাদ মজহার
বিএনপি বলছে- ৭২ এর সংবিধান বাতিল করা যাবে না। কেন যাবে না, যারা বাতিল চাচ্ছে না, তারা কি জিয়াউর রহমানের অনুসারী। প্রশ্ন তুলেছেন কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার।বৃহস্পতিবার (১ মে) সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ভাববৈঠকী আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান: রাষ্ট্র গঠন ও আমাদের দায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।ফরহাদ মজহার বলেন, সাম্য, মানবিক ন্যায় বিচারসহ তিনটা নীতি কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক করা যায়, তার জন্য আমরা লড়াই করি। কিন্তু আওয়ামী লীগ এসে দিল্লির প্রয়োজনে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিল ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ। এগুলো আমাদের দাবি ছিল না। এই যে চাপিয়ে দেওয়া তিনটা তথ্যের মধ্যে সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ একত্রে হলে এইটাকে বলে ফ্যাসিবাদ। এটা হিটলারও বিশ্বাস করত। জার্মান জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। জেনেশুনে ফ্যাসিস্ট সংবিধান আমরা রাখছি। এই জুলাই আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানের পরও আমরা এই সংবিধান বাতিল করতে পারি নাই। এই দায় কার। আমরাও দায়ী। তিনি আরও বলেন, তরুণরা যখন এই সংবিধান বাতিল চাইল, তারা বললো, এই সংবিধান তো আমাদের চাপিয়ে দেওয়া সংবিধান। তখন বলতে শুরু করল, যারা ৭২ এর সংবিধান বাতিল চায়, তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ মানে না। এই প্রপাগান্ডা আওয়ামী লীগ শুরু করল, শেষ পর্যন্ত বিএনপিও শুরু করল। এই প্রজন্ম কখনও ৭১ অস্বীকার করে নাই। বরং তারা ৭১ কে পুনরায় দাখিল করতে চায়। যেটা হরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণের যে গৌরব ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। যার নেতৃত্বে ছিলেন, জিয়াউর রহমানসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা।ফরহাদ মজহার বলেন, বিএনপি বলছে ৭২ এর সংবিধান বাতিল করা যাবে না। এরা কি জিয়াউর রহমানের অনুসারী। আমাকে কেউ খারাপ ভাবে নিবেন না। আমি বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠভাবে পক্ষে থেকেছি। বিএনপির বিরুদ্ধে হামলা, মামলার বিরুদ্ধে থেকেছি। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছে জিয়াউর রহমান সাম্য ও ন্যায় বিচারের জন্য।‘গণঅভ্যুত্থান: রাষ্ট্র গঠন ও আমাদের দায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন কবি ও রাজনৈতিক চিনু কবির, লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, ভাববৈঠকির সংগঠক মোহাম্মদ রোমেল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাড. রায়হান কবীর, বেরোবি শিক্ষক ড. ইলিয়াস প্রামাণিক, ফরিদুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন কনক রহমান।

‘আমার লাখ লাখ শ্রমিক ভোটের দাবিতে ক্ষুধার্ত’
আমার লাখ লাখ শ্রমিক ভোটের দাবিতে ক্ষুধার্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমবিয়ষক সহসম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন মোল্লা। বৃহস্পতিবার (১ মে) ঢাকার নয়াপল্টনে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি। নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরোধ করে বলেন, আমার লাখ লাখ শ্রমিক আজকে তারা ক্ষুধার্ত। তবে ভাতের জন্য নয়, কাপড়ের জন্য নয়, লবণের জন্য নয়, ভোটের দাবিতে তারা ক্ষুধার্ত। বিগত ১৭ বছর এই শ্রমিক ভোট দিতে পারেনি। ফিরোজ উজ জামান মামুন মোল্লা প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অনুরোধ করব অবিলম্বে আপনি নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করুন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন। ভোটের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠন হবে সেই সরকার বিএনপি সরকার আবার শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তনে লড়াই করবে। ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করি তিনি আরও বলেন, অন্যথায় যদি কোনো কৌশলের আশ্রয় নেন, এই ক্ষুধার্ত শ্রমিক যদি আবার জেগে ওঠে আপনিও বাংলাদেশে থাকতে পারবেন না। আমার শ্রমিক ভোট চাই, আমার শ্রমিক ভোট দিতে চাই, আমার শ্রমিক ভোটের জন্য ক্ষুধার্ত। সর্বশেষ তিনি অবিলম্বে ভোটের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।

বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন চুক্তি করবেন না : ফখরুল
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দয়া করে রাজনৈতিক দল ও জনগণকে অবহেলা করে এমন কোনো চুক্তি করবেন না, যেটি বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়। বৃহস্পতিবার (০১ মে) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে শ্রমিক দল আয়োজিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিকভাবে একটা অস্বস্তিকর প্রস্তুতির মধ্যে বসবাস করছি। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও গণতন্ত্র ফিরে আসেনি। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যে সংস্কারের পক্ষে একমত হয়েছে, সেগুলো সংস্কার করুন, সেগুলো সামনে নিয়ে আসুন। নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। যেগুলো হয়নি সেগুলো নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে পার্লামেন্টে আইন পাস হবে। বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংস্কার তো প্রথম শুরু করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সংস্কার তো আমাদের দাবি। সংস্কার আমাদের সন্তান। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দেশের অস্তিত্ব নির্ভর করছে গণতন্ত্রের ওপর। নির্বাচনই গণতন্ত্র উত্তরণের পথ। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেই সব সমস্যা দূর হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, অনেকে বলেন, ১৭ বছর ধরে আপনারা কী করেছেন? আরে, আমরা ১৭ বছর ধরে গাছের গোড়ায় পানি দিয়ে গাছের গোড়া নরম করেছি, দুই দিনের আন্দোলনে শেখ হাসিনা যায়নি। যারা বলেন, ১৭ বছর কী করেছেন? তারা মিথ্যার সাগরে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, কেউ একা সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে বিপদে ফেলছেন কিনা এটা খেয়াল রাখবেন। দেশে দুর্ভোগ ধেয়ে আসছে। আমাদের মধ্যে মতনৈক্য দেশটাকে খেয়ে ফেলবে। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো গোপন চুক্তি করবেন আর এটা বলবেন না, এটা হবে না। মানবিক করিডোর দিতে গিয়ে দেশটাকে বিপদে ফেলবেন না। কারণ আফগানিস্তানকে মানবিক করিডোর দিতে গিয়ে পাকিস্তান এখনো দুর্ভোগে ভুগছে। তিনি আরও বলেন, যেটা বাংলাদেশের প্রয়োজন নেই, সেই চুক্তি প্রয়োজন নেই। দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে সেই চুক্তি করতে চাইলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ফ্যাসিবাদ চলে গেলেও গণতন্ত্র এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তারেক রহমানের ওপর বিশ্বাস রেখে বলছি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলে বিএনপির বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র তা থামবে। মানুষ তার ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস করি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংস্কার কমিশনে বিএনপি যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে, তা নির্বাচনের আগে আইন করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এগুলো বাস্তবায়ন হলেই কোন সমস্যা থাকবে না।

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ হবেন: শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে নারীরা কর্মক্ষেত্রে আরও নিরাপদ হবেন বলে দাবি করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা নিরাপত্তার সঙ্গে তাদের পছন্দের কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ পাবেন।’ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস উপলক্ষে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেছেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, অনেকে গুজব ছড়ায় জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের কর্মক্ষেত্রে যেতে দেবে না। স্পষ্ট করে বলছি, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের কাজের সুযোগ করে দেব। নারীরা তাদের যোগ্যতা ও যথাযথ সম্মান নিয়ে কাজ করবে। সেই সঙ্গে, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে কর্মক্ষেত্রে তারা বেশি নিরাপদ থাকবে। নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেছেন, পুরুষের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে নামাজসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়। তবে নারীদের জন্য তেমন সুযোগ-সুবিধা দেখা যায় না। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে নারীদের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা রাখতে হবে। ডা. শফিক বলেন, শ্রমিকরা আজও ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত। ন্যূনতম মজুরি না পাওয়ায় একাধিক জায়গায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক কারখানায় শ্রমিকরা এতো কম বেতন পান যে, ওভারটাইম করতে হয়। এই অমানবিক জীবনের অবসান ঘটাতে হবে। একই সঙ্গে শ্রমিকরা চাঁদাবাজদের জুলুমেরও শিকার। মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষকেই একে অপরের জন্য কাজ করতে হবে। পারস্পরিক ভালোবাসার ভিত্তিতে দেশ গড়তে হবে। জামায়াতের আমির বলেন, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ মানুষ শ্রমজীবী। মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব আর চাই না। শ্রমিক বাঁচলে শিল্প বাঁচবে, ব্যবসা বাঁচবে। আবার শ্রমিককে বুঝতে হবে, শিল্প বা মালিক ধ্বংস হয়ে গেলে শ্রমিকদের কাজও বন্ধ হয়ে যাবে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ইসলামী শ্রম নীতি ছাড়া বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত সম্ভব নয়। মালিক শ্রমিক দ্বন্দ্ব লাগিয়ে নাস্তিক্যবাদী নতুন এক ধারা তৈরি হয়েছিল দেশে। সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, ১৭ বছর শ্রমিক সমাবেশ করতে পারিনি। শ্রমিকরা নির্মম বঞ্চনা, হত্যার শিকার হয়েছেন। আজ সেই সুযোগ হয়েছে। তাই এখনই সময় শ্রমিকদের অধিকার সুসংগঠিত করার। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ও আ ন ম শামসুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ। পল্টন মোড় থেকে বিজয়নগর মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল জামায়াতের শ্রমিক সমাবেশ। এতে হাজার হাজার শ্রমিক এবং নেতাকর্মী অংশ নেন। এর আগে শ্রমিক র্যালি করে জামায়াতের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। কাকরাইল মোড় থেকে শুরু হয়ে পল্টনে গিয়ে শেষ হয় র্যালিটি।

শ্রমিকদের গায়ের ঘাম আতরের মতো লাগে: জামায়াত আমির
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শ্রমিকদের রক্ত আর ঘামে শিল্প গড়ে ওঠে। শ্রমিকদের বলবো, আপনাদের গায়ের ঘাম আমার কাছে আতরের মতো লাগে। তিনি বলেন, কোথাও গেলে অনেক শ্রমিক গায়ে ঘামের কারণে আমাদের সঙ্গে হাত মেলাতে লজ্জাবোধ করেন। আমি তাদের বুকে টেনে বুক মেলাই। শ্রমিকদের গায়ের ঘাম আতর, সুগন্ধি, সৌরভের কারণ। বৃহস্পতিবার (১ মে) রাজধানীর পল্টন মোড়ে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াত আমির বলেন, আমরা আসলে মানুষের মাঝে বৈষম্য দেখতে চাই না। সব পেশার মানুষকে আমরা এক চোখে দেখি। মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব আর চাই না। শ্রমিক বাঁচলে শিল্প বাঁচবে, ব্যবসা বাঁচবে। আবার শ্রমিককে বুঝতে হবে, শিল্প বা মালিক ধ্বংস হয়ে গেলে শ্রমিকদের কাজও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই মালিক-শ্রমিক উভয়ের দায়িত্ব অনেক। তিনি বলেন, যেদিন মালিক তার শ্রমিককে দরদ-ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নেবে, সেই শ্রমিক জীবন দিয়ে হলেও তার শ্রমের শতভাগ দেবে। মালিক-শ্রমিকের সমন্বয়ে একটা কর্মউপযোগী সমাজ গড়ে তুলতে হবে। এটা নিয়েই কাজ করছে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্য নামাজের জায়গা রাখার দাবি জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পুরুষের জন্য মিল-ফ্যাক্টরি বা ইন্ডাস্ট্রিতে ছোট্ট হলেও নামাজের জায়গা রাখা হয়। কিন্তু আমাদের নারীদের জন্য নামাজের জায়গা রাখা হয় না। আমি কারখানা মালিকদের উদ্দেশে বলবো, নারীদের জন্য নামাজের জায়গার ব্যবস্থা করুন। তাদের জন্য নিরাপদ কর্মস্থল গড়ে তুলুন। সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, ১৭ বছর শ্রমিক সমাবেশ করতে পারিনি। আমাদের শ্রমিকরা নির্মম বঞ্চনা, হত্যার শিকার হয়েছেন। আজ সেই সুযোগ হয়েছে। তাই এখনি সময় শ্রমিকদের অধিকার সুসংগঠিত করার। আমরা এমন এক শ্রমনীতি কায়েম করতে চাই, যা চলবে ইসলামের আইন অনুযায়ী। যেখানে মালিক-শ্রমিক কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, যে আইনে কোনো শ্রমিক না খেয়ে থাকবে না। তাই কোরআনের বিধান অনুযায়ী ইসলামী শ্রমনীতি চালু করতে হবে। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলসহ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।

নারী সংস্কার কমিশন বাতিলে জামায়াত-এনসিপি-এবি পার্টিসহ ইসলামি দলগুলো একমঞ্চে
নারী সংস্কার কমিশন বাতিলে একমঞ্চে এসে দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসহ বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতারা। ইসলামী আন্দোলনের ‘জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের’ উদ্যোগে বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামফোবিয়া: করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এই মত প্রকাশ করেন তারা। সেমিনারে নেতারা বলেন, সরকার পতিত স্বৈরাচারের জঞ্জাল পরিষ্কারের লক্ষ্যে যে সামগ্রিক সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা জনসমর্থনপুষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল বটে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের মতো কিছু কমিশন জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। কিন্তু নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা দেশের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থি এবং সরাসরি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। বক্তারা বলেন, এই কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ এমন, যা পশ্চিমা মতবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা, নারীসমাজের প্রকৃত চাহিদা ও জীবনসংগ্রামের সম্পূর্ণ বিপরীত। নারীপাচার, যৌন নিপীড়ন ও দারিদ্র্যজনিত কারণে যারা পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের পুনর্বাসন ও সমাজে স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করার কথা থাকলেও কমিশন বরং এই ব্যাধিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নারীর জন্য অভিশপ্ত জীবনকে আইনি বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে। সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, নারীর জন্য কল্যাণকর প্রস্তাবনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত, তাদের সম্মান, নিরাপত্তা ও পারিবারিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। অথচ কমিশন যে ভাষায় ও যুক্তিতে তাদের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে, তা পশ্চিমা দর্শনেরই বিকৃত প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের নারীরা এ ধরনের ভাষা ও মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে না। বক্তারা প্রশ্ন করেন, সরকার যে নারীদের কল্যাণে কমিশন গঠন করেছে, সেখানে কীভাবে সবাই একমুখী, ইসলামবিরোধী এবং পাশ্চাত্য চিন্তায় প্রভাবিত হলো? সেমিনারে সর্বসম্মতিক্রমে কিছু দাবি পেশ করা হয়। সেগুলো হলো– নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে; কমিশন সরকারিভাবে বাতিল করতে হবে; নতুন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দীনদার, শিক্ষিত, দেশীয় চিন্তায় বিশ্বাসী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; পরিবার ও নারী বিষয়ে প্রস্তাবের ভিত্তি হতে হবে কুরআন-সুন্নাহ, সংবিধান এবং সামাজিক বাস্তবতা। মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজির সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন– মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম, ডা. শফিকুর রহমান, মাওলানা মামুনুল হক, মুজিবুর রহমান মঞ্জু, নুরুল হক নুর, মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, ড. আহমদ আব্দুল কাদের, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ; মাওলানা গাজী আতাউর রহমান; মাওলানা আশরাফ মাহদি, মাওলানা রুহুল আমীন সাদি; মুফতি সাকিবুল ইসলাম কাসেমি, আরিফুল ইসলাম অপু, মুফতি আবু মুহাম্মাদ রাহমানি, মুফতি লুতফুর রহমান ফারায়েজি, হাফেজ আব্দুল বাসিত আল হাসসানি, পীর জুলফিকার নকশবন্দি; মাওলানা হানজালা; শায়খ আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক হাফি; নুরুল ইসলাম বুলবুল, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী প্রমুখ।

নির্বাচনী জোটে আগ্রহী নয় এনসিপি
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এজেন্ডার ভিত্তিতে মাঠের ঐক্য বা রাজনৈতিক ঐক্য হতে পারে। তবে নির্বাচনী বিষয়ে কোনো ঐক্য বা জোট গঠনে আলোচনা করতে আমরা আগ্রহী নই। বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানান তিনি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এনসিপির আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে কোনো জোট গঠন নিয়ে আমরা এখনো আলোচনা করিনি। তবে রাজনৈতিক ঐক্য কিংবা আমাদের যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে এজেন্ডা রয়েছে সেই বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করছি। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের মৌলিক বিধান পরিবর্তন করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে সেটা টেকসই হবে। নির্বাচনী রোডম্যাপ বিষয়ে নাহিদ বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সরকার যে টাইমফ্রেম প্রস্তাব করেছে আমরা প্রাথমিকভাবে সেটা সমর্থন করি। তবে তার আগে মৌলিক সংস্কারের প্রশ্ন ও আওয়ামী লীগের বিচারের প্রশ্নের বিষয়ে সুরাহা করতে হবে। এসময় তিনি দুইটি স্পষ্ট দাবি তুলেন। বলেন, সংস্কারের বিষয়ে আমরা জুলাই সনদের কথা বলছি। নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমাদের দাবি গণপরিষদ নির্বাচন। দল হিসেবে আমরা এই বিষয়গুলোতেই ফোকাস করতে চাই। আমরা যেহেতু জুলাই অভ্যুত্থান থেকে উঠে এসেছি তাই আমরা মনে করি আমাদের এজেন্ডা মৌলিক সংস্কার ও ন্যায়বিচার।

টানা তিন দিনের ছুটিতে রাজধানীতে তিন বড় সমাবেশ
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ মে) থেকে শুরু হচ্ছে টানা তিন দিনের সরকারি ছুটি। এই ছুটিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় তিনটি দল ও সংগঠন পৃথকভাবে জনসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে ছুটির এই সময়ে শহরে জনসমাগম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে কাল বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বড় পরিসরে শ্রমিক সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া উপস্থিত থাকবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। সমাবেশ আয়োজন করছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। সমাবেশে রাজধানী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। এর পরের দিন শুক্রবার (২ মে) বিকেল ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।দলটির ঢাকা মহানগর শাখার ব্যানারে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এতে ১০-১৫ হাজার মানুষের উপস্থিতি হতে পারে। ছুটির তৃতীয় দিন, শনিবার (৩ মে) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এক মাস ধরে এ কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠনটি। মহাসমাবেশে হেফাজতের প্রধান দাবি হলো- তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় ৩০০টি মামলা প্রত্যাহার। এছাড়াও ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর, ২০২১ সালের মার্চ এবং ২০২৪ সালের বিভিন্ন ঘটনায় ‘নিহতদের হত্যাকাণ্ডের বিচার’, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপনসহ ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম নিপীড়নের প্রতিবাদ থাকবে আলোচনায়।

বিএনপি বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ ও নির্ভরশীল দল: মির্জা ফখরুল
বিএনপি বাংলাদেশের মানুষের কাছে সব থেকে নিরাপদ ও নির্ভরশীল দল বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলানী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা তিনি একথা বলেন।ফেসবুক ইউটিউবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিভাজন নয়, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি৷ একটা ভালবাসার বাংলাদেশ চায়। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।তিনি আরও বলেন, মানুষের মুখ দেখে বুঝতে পারবেন সবাই পরিবর্তন ও সবাই ভোট দিয়ে সরকার গঠন করতে চায়। আর বাংলাদেশের মানুষের কাছে সব থেকে নিরাপদ ও নিভর্রশীল দল হচ্ছে বিএনপি।নিজের দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কেউ অন্যায় করবেন না। যদি করে অন্যায় করেন তাহলে আওয়ামী লীগের মতন অবস্থা হবে৷ কেউ অন্যায় করলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেবেন৷ দল আপনাদের, ধানের শীষ আপনাদের, তাই দলকে রক্ষা করার দায়িত্বও আপনাদের। আয়নাঘর ও শেখ হাসিনা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ যাদের ভয় পেয়েছে তাদের গুম করেছে। ১৭০০ মানুষকে গুম করা হয়েছে। সাত থেকে আট বছর পর্যন্ত তাদের আটকে রাখা হয়েছে। গোলাম আজমের ছেলে ফারুক ই আজমকে আট বছর গুম করে রাখা হয়েছ। সিলেটের এমপি ইলিয়াসের এখনও খবর পায়নি তার পরিবার। আমরা ভয়াবহ ডাইনির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি৷ এখন হাসিনা ভারতে বসে গুতোগুতি করছে৷বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনা আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। মানুষ তাকে আর ক্ষমতায় আসতে দেবে না। আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে আমরা ভয়াবহ ওই ডাইনির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। এটা আমাদের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। এখন পাশের দেশ ভারতে গিয়ে বসে গুঁতাগুঁতি করছে তিনি।তিনি শেখ হাসিনাকে দেশে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরাও মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি। মামলায় লড়েছি। কিন্তু আমরা তো পালায় কোথাও যাইনি। আপনি এতোই যদি গণমানুষের রাজনীতি করে থাকেন তাহলে দেশে আসেন। যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলো লড়েন। এতো জনপ্রিয় মানুষ পালায় গেছেন কেন, দেশে আসেন।এসময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন সহ দলটির বিভিন্ন নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই: উমামা ফাতেমা
নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী উমামা ফাতেমা। গতকাল সোমবার নিজের ফেসবুক একাউন্টে একটি পোস্ট দিয়ে বিষয়টি খোলাসা করেন তিনি। পোস্টে উমামা ফাতেমা লেখেন, ‘সবার উদ্দেশে একটা ছোট ঘোষণা, আমি নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির সাথে সম্পৃক্ত নই। আমার অনেক পরিচিত ব্যক্তিবর্গ এই দলটির সাথে আছে। ব্যক্তিগতভাবে এনসিপির সাথে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। তাই এনসিপি সংক্রান্ত পরামর্শ, সাংগঠনিক আলাপ বা প্রস্তাবনা আমার কাছে উপস্থাপন না করার অনুরোধ রইল। এতে আপনার, আমার দুইজনেরই সময় বাঁচবে।’উমামা ফাতেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সমন্বয়কের দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলনের ছাত্রসংগঠন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর গত বছরের অক্টোবরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করা হলে উমামা মুখপাত্রের দায়িত্ব পান। ওই সময়তিনি ছাত্র ফেডারেশনের পদ থেকে অব্যাহতি নেন।প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ ঘটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় অংশ এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু উমামা দলটিতে যোগ দেননি। উমামা এখনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় আছেন। প্ল্যাটফর্মটির সাংগঠনিক কাঠামো আবারও পুনর্গঠিত হতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পুনর্গঠিত কমিটিতে উমামা শীর্ষ পদপ্রত্যাশী বলে সূত্রে জানা গেছে।

প্রবাসীদের অবশ্যই ভোটাধিকারের বাইরে রাখা যাবে না: রাশেদ খান
প্রবাসীদের অবশ্যই ভোটের অধিকারের বাইরে রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোটদানের জন্য আমরা সবসময়ই সংগ্রাম করেছি। প্রবাসীদের ভোটের আওতায় না আনলে আমরা মানবো না। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার বিষয়ে অংশীজনদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এক সেমিনার শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। রাশেদ খান বলেন, প্রবাসীদের ভোটের ক্ষেত্রে প্রক্সি সিস্টেমটা আগামী নির্বাচনে অ্যাপ্লাই করা যেতে পারে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে আমরা গণধিকার পরিষদ থেকে সবসময় সংগ্রাম করেছি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বলেছি, এই অভ্যুত্থানে প্রবাসীরা কীভাবে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং শুরুতেই তারা প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনতে কীভাবে কাজ করতে চায়, সে বিষয়ে উপস্থাপন করেছে। তারা তিনটি পদ্ধতি আমাদের দেখিয়েছে। প্রথমত অনলাইন পদ্ধতি, এরপর প্রক্সি পদ্ধতি এবং পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি দেখিয়েছে। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে তিনটা পদ্ধতির সমস্যা রয়েছে। কোনোটির একটু বেশি, কোনোটির একটু কম, মানে ত্রুটিমুক্ত কোনো পদ্ধতি নেই। যেমন অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে জালিয়াতি করা সম্ভব। রাশেদ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই পোস্টাল পদ্ধতি ছিল, কিন্তু আজ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে এখন পর্যন্ত পোস্টাল ব্যালটে কেউ কখনো ভোট দেয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে তারা প্রক্সি সিস্টেমের ওপর জোর দিয়েছে। যদিও এখানে সিকিউরিটি কনসার্ন রয়েছে। তারপরও এই তিনটি পদ্ধতির মধ্যে সব থেকে সহজ এবং মোটামুটি রিলায়েবল হলো প্রক্সি পদ্ধতি। তিনি বলেন, আমাদের কথা হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় দুই কোটি প্রবাসী রয়েছেন। তারা আমাদের দেশের সম্পদ। এই যে বাংলাদেশ এতটুকু টিকে রয়েছে, অর্থনৈতিক গতিশীলতা রয়েছে, এর একমাত্র কারণ হলো আমাদের প্রবাসীরা, তারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশ গঠনে তাদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। অবশ্যই তাদের ভোটের অধিকারের বাইরে রাখা যাবে না।

‘কোন মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম করে নাই’
‘কোনো মহামানবকে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম করে নাই, ত্যাগ শিকার করে নাই। আর কোনো মহামানব দেশের গণতন্ত্রের সমাধান দেবে তার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নাই।’ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না। এ বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসব কথা বলেন তিনি। আমীর খসরু বলেন, ‘জনগণ বলতে যদি কোনো একটি বিশেষ গোষ্ঠী, সুবিধাভোগী যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে, জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে গণতন্ত্রকে সংস্কারের মুখোমুখি করছে অথবা কোনো বিশেষ সুযোগ সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধাচারণ করছে। ১৬ বছরের যুদ্ধটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অর্ডার ফিরিয়ে আনার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। সেটা যেই সরকারই হোক।’ আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকে যে প্রতিশ্রুতি বা বক্তব্য দিয়েছেন তার ব্যত্যয় হবে না। তিনি বিএনপি সাথে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকের বক্তব্যকেই পুনরায় ঘোষণা দিয়েছেন জুনের মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিফলিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই। জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে সরকার গঠন করে কার্যকরী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দিয়েছে, কোনো মহামানবের প্রতিষ্ঠার জন্য নয়।’ নির্বাচন প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় ছিল, ইতিমধ্যে প্রায় ৫০টি দল পরিষ্কারভাবে বলেছে ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের জন্য।’ তিনি বলেন, ‘সংস্কারের যে কথাগুলো বলা হয়, যে সংস্কারের বিষয়ে যেখানে ঐকমত্য হয়, সেই সংস্কার ইমিডিয়েটলি করে নির্বাচন কমিশনকে বলা হোক নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার জন্য।’ সোমবার ন্যাপ ভাসানী, আমজতার দল ও পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠকে করেন বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন দলের ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।

ড. ইউনূস ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছেন: সারজিস আলম
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে মন্তব্য করে ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছেন- এমন বার্তা সামাজিক সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ড. ইউনূস যদি আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে আমরা ‘এক সেকেন্ডও সময় নেব না’। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ফেসবুকে নিজ ভেরিফায়েড প্রোফাইলে একটি স্ট্যাটাস দেন সারজিস। স্ট্যাটাসের নিচের দিকে লেখার জন্য সাদিকুর রহমান খান নামের একজনেকে ক্রেডিট দেন তিনি। স্ট্যাটাসে লেখা হয়, ‘ডক্টর ইউনূস গতকাল একটা রেড লাইন ক্রস করেছেন। উনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ইলেকশনে আসবে কি না, এইটা তারা ডিসিশন নেবে। এই কথা বলার কোনো অধিকার ডক্টর ইউনূসের নাই। কারণ, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, সেই ডিসিশন এই দেশের মানুষ নেবে। ৫ আগস্ট মানুষ আওয়ামী লীগের ব্যাপারে তাদের ডিসিশন জানাইয়া দিছে। তারপরও যদি আরও প্রয়োজন হয় গণভোট হোক। গণভোটে মানুষ বলুক আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত কি না। বাট কোনোভাবেই আওয়ামী লীগকে এই ডিসিশন নেওয়ার অধিকার দেওয়া যাবে না।’ ‘ডক্টর ইউনূসকে মনে রাখতে হবে, তাকে আমেরিকা বা ইউরোপের অ্যাম্বাসি ক্ষমতায় বসায়নি, ক্ষমতায় বসাইছে এই দেশের মানুষ। তাকে এই দেশের মানুষের কথা মতোই দেশ চালাতে হবে, আমেরিকা বা ইউরোপের কথা মতো না।’ ‘আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল না। এইটা একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। আওয়ামী লীগের ফিরে আসার ব্যাপারে যে বা যারা হেল্প করতে চাইবে, তারাই জুলাই গাদ্দার হিসেবে পরিচিত হবে।’ ‘ইউনূস নিজেও যদি আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলে, ইউনূসের বিরুদ্ধে দাঁড়াইতে আমরা এক সেকেন্ডও সময় নেব না।’

নাহিদকে আগামীর প্রধানমন্ত্রী বললেন হাসনাত
অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে ‘আগামীর প্রধানমন্ত্রী’ বলেছেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। সোমবার (২৮ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন হাসনাত। ওই পোস্টের সঙ্গে নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বসা একটি ছবি জুড়ে দিয়েছেন তিনি। মূলত নাহিদ ইসলামের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে এই পোস্টটি করেন হাসনাত। হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন। বাংলাদেশের আগামীর প্রধানমন্ত্রী নাহিদ ইসলাম।’ ওই পোস্টের কমেন্টে মো. বাবু নামের একজন লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন, বাংলাদেশের আগামীর প্রধানমন্ত্রী নাহিদ ইসলাম! ভবিষ্যতে তো আপনিই হবেন আমাদের দেশ সেরা হিরো, যে এক হাতে দেশের উন্নতি আর আরেক হাতে কেক কাটবেন!’ রহমাতুল্লাহ লেখেন, ‘নাহিদ ভাইয়ের হাতে পড়লে বাংলাদেশ নিরাপদে থাকবে।’ জাহেদুল হক মানিক লেখেন, ‘জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ হোক নিরাপদ ও বরকতময়। শুভ জন্মদিন।’ এম নুর হাসান লেখেন, শুভ জন্মদিন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক’। আয়েশা শর্মিলা লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন। জুলাই বিপ্লবে যেমন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে যদি সঠিক পথে দেশ পরিচালনায় যোগ্য হন তবে আমরাও আপনাদের সমর্থন করে যাব। তবে বিভিন্ন সময়ে সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদসহ অনেকের নামে অর্থ লোপাট, সুপারিশ সম্পর্কিত বিষয়গুলো ধোঁয়াশার জন্ম দিয়েছে এসব বিষয়ে আমরা খুবই হতাশ।’ এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এক দিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বলে মন্তব্য করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফেসবুকে প্রেস সচিব লিখেছিলেন, দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ধারালো রাজনৈতিক মন নাহিদ ইসলাম। তার বয়স মাত্র ২৬ এবং ইতিমধ্যে একজন নৃশংস স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে একটি জনপ্রিয় বিদ্রোহ নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি দেশের রাজনীতিতে আরো কয়েক দশক বড় বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকবেন। আরও লিখেছিলেন, ‘আর আল্লাহ জানে, এক দিন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।’

রোহিঙ্গাদের স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব থেকে সরে এলো জামায়াত
মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে স্বাধীন দেশ গঠনের প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল রোববার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ সফরে আসা চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বৈঠকে এ প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানিয়েছিল জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। তবে সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিবৃতিতে তিনি আগের দিনের বক্তব্যের ব্যাখা দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, যে বক্তব্য দিয়েছি তাতে মূলত বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদভাবে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করার ব্যবস্থা ও তাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়টি বুঝাতে চেয়েছি। আমার বক্তব্যের মাধ্যমে কোনো ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হলে তা এ বিবৃতির মাধ্যমে নিরসন হবে বলে আমি আশা করি। এটিই বাংলাদেশ জামায়াতের দৃষ্টিভঙ্গি। গত রোববার ব্রিফিংয়ে মো. তাহের বলেন, ‘জামায়াত আরাকানে রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে। চীন এখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের বড় ধরনের অংশীদারিত্ব রয়েছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিরা বলেছেন, জামায়াতের প্রস্তাবের বিষয়ে বেইজিং সরকারকে বলবেন।’

আওয়ামী লীগ এখন জামায়াত-এনসিপির ছায়াতলে
আওয়ামী লীগ এখন জামায়াত-এনসিপির ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না। সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৩ দলের যৌথ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন তিনি। যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত সজাগ দৃষ্টি রাখছি। আমাদের দল থেকে কোন অপরাধ সংগঠিত হলে সেখানে আমরা টেলিফোন করছি এবং তদন্ত টিম পাঠাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যেই ব্যাপকভাবে পানিশমেন্টের আওতায় অনেককে নিয়ে এসেছি যারা অসাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত। তিনি বলেন, তারেক রহমানের সুদৃষ্টি থাকার কারণে ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা মসজিদে মন্দিরে পাহারা দিয়েছি। এমনকি আমাদের দলের নেতাকর্মীরা পুলিশ স্টেশনেও পাহারা দিয়েছে। দলের মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে তা আমরা অস্বীকার করছি না। তবে আমরা বহিষ্কারসহ শাস্তির আওতায় তাদেরকে আনছি।

চীনা কমিউনিস্টদের সঙ্গে বৈঠক, আরাকানে মুসলিম রাজ্য চাইল জামায়াত
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপন কোনো সমাধান নয়; এর সমাধান হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন। সেজন্য আরাকান কেন্দ্রিক স্বাধীন আরাকান মুসলিম স্টেট চায় জামায়াতে ইসলামী।’ রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কাছে নতুন স্বাধীন আরাকান স্টেট গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। মতবিনিময় সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমাদের বেশ খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে চায়না সরকারের আমন্ত্রণে আমরা একটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়েছিলাম। ওই সফরটা অনেকটা সরকারি ছিল, তবে আজ আমাদের যে বৈঠকটা হলো সেটা পার্টি টু পার্টি বৈঠক।’ তিনি বলেন, ‘শুধু আমাদের এই অঞ্চলে নয়, পুরো বিশ্বে চীন একটি ইমার্জিং ফোর্স। রাজনীতি, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে চীনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জামায়াতে ইসলামী যেহেতু ইনক্লুসিভ ডেমোক্রেটিক লিবারেল পার্টি। আমাদের প্রধান পলিসি হচ্ছে, সবার সাথে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সুসম্পর্ক করা। সেই হিসেবে আমরা আজ চায়না কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। খোলামেলা আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কতিপয় বিষয়ে আলোচনা করেছি।’ তাহের বলেন, ‘তারা আমাদের প্রধান উপদেষ্টাকে দাওয়াত দিয়েছেন। কতিপয় চুক্তি করেছেন, আশ্বাস দিয়েছেন, সেজন্য আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। বাংলাদেশে এখন চীন হচ্ছে প্রধান বিনিয়োগকারী। সেটা আমরা আরও অনেক পরিসরে বাড়াতে অনুরোধ করেছি।’ তিস্তা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে চীনকে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তাহের বলেন, ‘আমরা তিস্তা ব্যারেজ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করে বলেছি। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর জন্য বিনিয়োগ করার কথা বলেছি। গভীর সমুদ্রে যে বন্দর হচ্ছে সেখানে অর্থায়ন করার কথা বলেছি। গভীর সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে আমাদের যে ব্লু ইকোনমি, সেটা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে কথা হয়েছে। এই অঞ্চলে যাতে করে কেউ কারো প্রতি রক্তচক্ষু দেখাতে না পারে, ভারসাম্যমূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপারে আমরা তাদের সাথে আলোচনা করেছি এবং বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকভাবে ছাত্রদের স্কলারশিপ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। এসব বিষয়ে তারা আমাদের সাথে ঐক্যমত হয়েছেন। তারা তাদের সরকারকে এ ব্যাপারে অবহিত করবেন এবং প্রয়োজনে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন।’ তাহের বলেন, ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং সরকার একই সত্তা। সুতরাং আমরা আশা করি চীন সরকারের সঙ্গে গভর্মেন্ট টু গভর্মেন্ট, পিপলস টু পিপলস এবং পার্টি টু পার্টি সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। তারা তাদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে দাওয়াত দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরাও জামায়াতের পক্ষ থেকে চায়না কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশ সফর করার জন্য আমন্ত্রণ জানাব বলেছি, যেটার হোস্ট হবে জামায়াত।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর জন্য কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আজকের এই বৈঠক আমরা একটি সুযোগ বলে মনে করি। কারণ চায়না সরকার বা চায়না কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আমাদের খুব একটা ইন্টার-অ্যাকশন ছিল না। কিন্তু এটি এখন অনেক ব্যাপকভাবে হচ্ছে। খুব দ্রুততার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বা ইন্টার-অ্যাকশন বৃদ্ধি পেয়েছে।’ রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাংলাদেশের জন্য সমস্যা উল্লেখ করে সমাধানে একটি আলাদা স্বাধীন মুসলিম আরাকান স্টেট গঠনের প্রস্তাবনা তুলে ধরে তাহের বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছি, সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। ১১ বা ১২ লাখের রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে, তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা বলেছি, এভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবেতর অবস্থান কোনো সমাধান নয়। সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন করা। সেজন্য আমরা একটি প্রস্তাবও দিয়েছি, সেটি হচ্ছে আরাকান কেন্দ্রিক রোহিঙ্গা মেজরিটি যে এরিয়া আছে, সেই এরিয়াতে একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট আরাকান স্টেট করার। এখানে চীন অনেক বেশি বা বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। কারণ মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের খুবই ভালো সম্পর্ক রয়েছে।’ তাহের বলেন, ‘যদি ইন্টারন্যাশনাল একটি রিপ্যাট্রিয়েট কমিটি থাকে, তাহলে সকলে মিলে এখানে সমস্যা সমাধান করতে পারবে। আমরা বলেছি, সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে একটি মুসলিম আরাকান স্টেট গঠন করতে। এই প্রস্তাবে চায়না কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দল বলেছে, তারা এই প্রস্তাব চীন সরকারের কাছে উত্থাপন করবে এবং এ ব্যাপারে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করার চেষ্টা তারা চালাবে।’ চলমান সংস্কার প্রস্তাবনা ও নির্বাচন বিষয়েও চায়না কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর এ সিনিয়র নায়েবে আমির বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে তারা কথা বলেছেন। সংস্কারের ব্যাপারে আমাদের যে পয়েন্টগুলো ছিল, সেগুলো আমরা বলেছি। গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে, সেখানে দিনব্যাপী আলোচনা হয়েছে। এটা অব্যাহত আছে, আমাদের হয়তো আরও দুদিন সময় লাগতে পারে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, ‘নির্বাচিত কিংবা অনির্বাচিত সরকার প্রসঙ্গ নয়। চায়না কমিউনিস্ট পার্টি তথা চীন সরকার তো আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন, দাওয়াত দিয়েছিলেন, চুক্তিও করেছেন। রিলেশনশিপ যদি আমরা মেইনটেইন করতে পারি, তাহলে তাদেরও লাভ, আমাদেরও লাভ। এখনকার ফরেন পলিসি বা ফরেন ইনভেস্টমেন্ট তো মিউচ্যুয়াল ইন্টারেস্টের জায়গা থেকেই। আর তারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশের নির্বাচন কবে, কীভাবে হতে পারে? আমরা বলেছি, আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তো একটা লাইন দিয়েছেন যে, নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে পারে, বেশি সংস্কার চাইলে আগামী জুনে হতে পারে। আমরা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টার এই প্রস্তাবের ব্যাপারে আমরা ঐকমত্য পোষণ করি।’ চায়না কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দল নির্বাচন সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো মতামত দেননি। তারা বলেছেন, ‘আমরা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না, বাংলাদেশের বিষয়েও আমরা হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করি না। আমাদের কাজ হচ্ছে আপনাদের প্রোগ্রাম ও পলিসির বিষয়ে সহযোগিতা করা।’ সভায় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।

ঐকমত্যের বাইরে সংস্কারের প্রয়োজন নেই: আমীর খসরু
ঐকমত্যের বাইরে সংস্কারের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মিত্র দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ মন্তব্য করেন। আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে তো আমরা বাকশাল করতে যাচ্ছি না। সবাইকে একমত হতে হবে- এটা যারা চিন্তা করে, এটা বাকশালী চিন্তা- যেটা শেখ হাসিনার পিতা করেছিলেন। কারণ, বিভিন্ন দলের বিভিন্ন দর্শন, বিভিন্ন চিন্তা থাকবে, ভিন্নমত থাকবে। বিষয়টা হচ্ছে যে, যেখানে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর বাইরে সংস্কার করার সুযোগ নেই। এর বাইরে যেটা করতে যাবে, সেটা ডেমোক্রেটিক প্রসেসের মাধ্যমে আসতে হবে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যেগুলো (সংস্কার প্রস্তাব) নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে, এই বিষয়গুলো জাতির সামনে কেন তুলে ধরা হচ্ছে না- এটাই প্রশ্ন। অলরেডি সবাই (সব রাজনৈতিক দল) সাবমিট করে দিয়েছে, অনেক দিন সময় চলে গেছে, আলোচনা শেষ। কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, এটার জন্য এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগে না। আমি বলব, কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, জাতিকে জানান। জাতি জানুক এবং ওই ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা সনদ সই করে দিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাই। এর বাইরে যাওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই।’ আমীর খসরু আরও বলেন, ‘নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেওয়ার জন্য আজকে জনগণের মধ্যে যে সংশয় তৈরি হয়েছে, যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে- এটা আগামী দিনের নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্যে ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে আশ্বস্ত করতে হবে- জাতি গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে, জাতি গণতন্ত্র ফিরে পেতে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের বাহক হচ্ছে নির্বাচন। এর মাধ্যমে আপনি গণতান্ত্রিক ট্রানজিশনে যে যাবেন, এটা জাতিকে জানাতে হবে। এর জন্য দেশের ভেতরে প্রস্তুতি আছে, দেশের বাইরে প্রস্তুতি আছে। বিনিয়োগকারীরা যারা বাংলাদেশে আসছেন, সবার একটাই প্রশ্ন- নির্বাচন কবে হবে?’ বিকেল সাড়ে ৪টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বৈঠকে বিএনপির পক্ষে আমীর খসরু ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ছিলেন। অন্যদিকে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বৈঠকে তার দলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন দলটির মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মোস্তফা তামজিদ, ওয়াশিকুর রহমান, সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, সোহেল আসিফ, এবিএম আজিজুল হক, গোলাম রাব্বানী, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান ও ফয়সাল তাহের। আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘আমাদের কথা হলো- যে সংস্কারের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে, তা নিয়ে ন্যাশনাল সনদ করে নির্বাচনমুখী হয়ে গেলেই তো হয়। আপনার ৫০টা রাজনৈতিক দলের অনেক বিষয়ে অনেক রকম মতামত থাকতেই পারে। তার ওপর ভিত্তি করে একমত হবো- এই চিন্তা করে আপনি তো আর নির্বাচনকে পিছিয়ে নিতে পারেন না কিংবা একটা ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন করা সম্ভব। আমার মনে হয়, কালক্ষেপণ না করে নির্বাচনী রোডম্যাপটা এখন জনগণের দাবি। এখন সেটাতে কনসেনট্রেটেড করা উচিত এই সরকারের।’ গত ১৯ এপ্রিল থেকে বিএনপি তার শরিক জোট ও মিত্রদের সাথে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আলোচনা শুরু করে। এখন পর্যন্ত তারা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এনডিএম, গণফোরাম, জন অধিকার পার্টি প্রভৃতি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে।

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র হিসেবে বিএনপির নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের নাম ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার (২৭ এপ্রিল) কমিশন গেজেট জারি করেছে, যা আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতে হয়েছে বলে ইসির সূত্র জানিয়েছে।এর আগে গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে ইশরাককে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে কি না এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চেয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেখানে থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর প্রধান নির্বাহী কমিশনার (সিইসি) অন্যান্য কমিশনার ও কর্মকর্তাদের নিয়ে এক সভা করেন, যেখানে রাতেই গেজেট জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ডিএসসিসির নির্বাচনের ফল বাতিল করে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন আদালত।প্রসঙ্গ: ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে উত্তরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণে আরেক আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন।নির্বাচনে ফজলে নূর পেয়েছিলেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট এবং ইশরাক ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট পেয়েছিলেন। এরপর ইশরাক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আদালতে মামলা করেন।নির্বাচন কমিশন ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর থেকে তারা শপথ নিয়ে মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।