
শরিফ ওসমান হাদির ওপর হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যেই সরকারকে কড়া বার্তা দিলেন ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম। অবিলম্বে দাবি পূরণ না হলে স্বরাষ্ট্র, আইন ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদ ছাড়তে হবে বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িত সরাসরি হামলাকারী ও নেপথ্য পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তারসহ তিন দফা দাবি তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি। এসব দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দৃশ্যমান উন্নতি না ঘটলে সংশ্লিষ্ট তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হবে বলে জানান তিনি।
সোমবার ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে তিন দফা দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচি শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন সাদিক কায়েম। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এসব বক্তব্য দেন।
এর আগে সাদিক কায়েমের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিন দফা দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হয়েছে। দাবি দ্রুত মানা না হলে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পরিবর্তন চোখে না পড়লে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।
সাদিক কায়েম আরও বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ওসমান হাদির ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি এই বক্তব্যের নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করেন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় গণকমিটি গঠনের আহ্বান জানান ডাকসু ভিপি। তিনি বলেন, এসব কমিটির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের দোসরদের শনাক্ত করে থানায় সোপর্দ করা উচিত।
এদিন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ৩ দফা দাবি তুলে ধরেন ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম। দাবিগুলো হলো -
১) ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষ হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী ও সহায়তাকারী সব সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাসহ রাষ্ট্রের সব সংশ্লিষ্ট অর্গানকে দ্রুত জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং যাদের গাফিলতি প্রমাণিত হবে তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। পাশাপাশি যারা এই হামলাকে সমর্থন যুগিয়েছে, যারা ওসমান হাদি ও জুলাই বিপ্লবীদের হত্যাযোগ্য করে তুলেছে, সেই কালচারাল ফ্যাসিস্টদের সামাজিকভাবে সম্পূর্ণ বয়কট করতে হবে। এসব ব্যবস্থা অনতিবিলম্বে দৃশ্যমান করতে হবে।
২) আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এলাকাভিত্তিক চিরুনি অভিযান শুরু করতে হবে। সেই সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের সব সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং সব ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের অবহেলা সহ্য করা হবে না।
৩) ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম ও অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে খুনি হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রদত্ত রায় কার্যকর করতে হবে। সেই সঙ্গে গণহত্যাকারী সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়ার প্রতিবাদে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং অভিযুক্তদের ফেরত না দেয়া পর্যন্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা যাবে না।