ভোট সুষ্ঠু না হলে বাতিল করা হবে, প্রধান উপদেষ্টার কাছে এমন ঘোষণা চায় জামায়াত
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৭:৪৫ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
জামায়াতে ইসলামী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দাবি জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তা বাতিল করা হোক। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে একশনএইড বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর আয়োজনে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এ আহ্বান জানান।
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন: রাজনৈতিক দলের কাছে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আবদুল্লাহ তাহের বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হোক। এই আলোচনায় সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো আচরণবিধি লঙ্ঘন না করার অঙ্গীকার মেনে টেলিভিশনে প্রচার করা হয়, তবেই নির্বাচন স্বচ্ছ হবে। তারপরও যদি নির্বাচন সুষ্ঠু না হয়, প্রধান উপদেষ্টা সেটি বাতিল করে নতুন নির্বাচন করার নির্দেশ দেবেন। জনগণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যত্যয় হলে তা খেয়াল রাখবে।”
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। যদি দলগুলো আন্তরিক থাকে এবং প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকে, তাহলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। নির্বাচনে যারা জিতবে, তাদের আমরা স্বীকৃতি দেব।”
জামায়াতের এই নেতা দেশের গত ৫৪ বছরের ব্যর্থতার পেছনে সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়াকে বড় কারণ হিসেবে দেখান। তিনি বলেন, “নির্বাচনের আচরণবিধি সব দলকে মেনে চলতে হবে। সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজস্ব অঙ্গীকারের সঙ্গে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ এবং ভেতরে পরিবর্তন আনতেও গুরুত্ব দিতে হবে।”
তাহের নেতৃত্ব সংকটকেও উল্লেখ করে বলেন, “দেশে বহু পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু ক্ষমতায় যেসব নেতা এসেছেন তারা জন–আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করেননি। বরং দুর্নীতি ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে পরিবর্তনের সুযোগ নষ্ট হয়েছে, বৈষম্য ও সামাজিক অবক্ষয় তৈরি হয়েছে।”
জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যতিক্রম হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশ মানুষই কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুর। কিন্তু পরবর্তীতে এই শ্রেণির মানুষের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেওয়া হয়নি।”
সভায় তিনি জামায়াত ক্ষমতায় এলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন। তাহের বলেন, “দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন নিশ্চিত করলে দারিদ্র্য কমানো সম্ভব হবে। আমাদের লক্ষ্য মৌলিক পরিবর্তন।”
এর আগে দেশের ৯টি জেলায় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকের সুপারিশ আজকের আলোচনায় উপস্থাপন করেন একশনএইড বাংলাদেশ উইমেন রাইটস লিড মরিয়ম নেছা। সভা পরিচালনা করেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ, এনসিপি সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আখতার, ২০০৭–০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন এবং ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাজিফা জান্নাত প্রমুখ।