আপনাদের জাতির পিতা মুজিব হতে পারে, আমাদের নয়: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী


আপনাদের জাতির পিতা মুজিব হতে পারে, আমাদের নয়: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী শুক্রবার রাজধানীতে এক সমন্বয় সভায় দেশীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো এবং ১৯৭২ সালের সংবিধান নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে, তবে তা তাদের জন্যই প্রযোজ্য। “আপনাদের জাতির পিতা মুজিব হতে পারে, আমাদের জাতির পিতা মুজিব নয়। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের সৈনিকেরা এখনো জেগে আছে,” বলেন তিনি।

শুক্রবার বিকেলে শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) এবং ঢাকা জেলার সমন্বয় সভায় এসব কথা বলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর এনসিপি একটি সংবেদনশীল সময় পার করছে। “আমরা যখন সংস্কারের কথা বলেছি, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা বলেছি, তখন আমরা দেখেছি বিভিন্ন এস্টাবলিশমেন্টের তীব্র প্রতিবাদ। তবে আমরা সুচিন্তিত মতামতের মাধ্যমে সংস্কার কমিশনে আমাদের প্রস্তাবগুলো দিয়েছি, যেখানে আমাদের দলের সদস্য সচিব সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে জুলাই সনদের স্বাক্ষর নিয়ে দেশের অনেক রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। আমরা বলব, বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম শুধুমাত্র এনসিপির ভাবনা নয়। লাখ কোটি মানুষ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের দাবি জানিয়েছে। এটি কোনো একক দল, ব্যক্তিগোষ্ঠী, পরিবার বা ধর্মীয় দলে সীমাবদ্ধ নয়, এটি বাংলাদেশের জনগণের দাবি।”

পাটওয়ারী আরও বলেন, “ভবিষ্যতে জনগণ সেই দলকে ভোট দেবে, যারা সংস্কার বাস্তবায়নে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের দাবি মেনে নেবে। যারা এটি করবে না, তারা ভোটে জনগণের শাস্তি ভোগ করবে।” তিনি বলেন, জনগণের অধিকার আইনিভাবে নিশ্চিত হওয়ার আগে তারা কোনো স্বাক্ষর দেবেন না।

তিনি সমালোচনা করে বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান এবং মুজিবীয় কায়দাকানুন নতুনভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলে পরিণতি হবে বর্তমান সরকারের মতো। “আগামী রাজনৈতিক জোটে আমরা সেই পক্ষের সঙ্গে থাকব যারা জনগণের দাবির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। যদি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা বিএনপি এগিয়ে আসে, আমরা দুপা এগিয়ে যাব।”

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এনসিপি চায় আগামীর সংসদে জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধি থাকবে না। তিনি বলেন, “এ কারণে ভোট ব্যাংকে আমরা কাজ চালাব। যে দল সরকার গঠনের চেষ্টা করবে, সেখানে এনসিপি নির্ণায়ক ভূমিকা রাখবে। এই ভোট ব্যাংক একটি নীরব বিপ্লব হিসেবে কাজ করবে। আগামী সপ্তাহে আমরা প্রার্থিতা কার্যক্রম শুরু করব।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক দল এবং এস্টাবলিশমেন্টের কারণে আমাদের খুনের দায়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের চুপ্পু এখনো আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বঙ্গভবনে আছে। আমরা চুপ্পুর স্বাক্ষর চাই না, কিন্তু এই আদেশে অবশ্যই ইউনূসের সাইন চাই। জনগণ আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, সম্মান দিয়েছে। জনগণের স্বীকৃতি অনুযায়ী, আপনি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিতে সাইন দিয়ে শহীদদের বিচার নিশ্চিত করবেন।”

পাটওয়ারী বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বলেন, “গত ৫২ বছরে বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বলে জিয়া তন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইসলামের নামে মওদুদী তন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। আমরা আপনার বিরোধী নই, আমরা চাই বাংলাদেশে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হোক। ছাত্ররা ভোট দিয়েছে আপনাদেরকে, সুতরাং আপনাদের গণতন্ত্র এবং শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×