যেভাবে মুসলিম মেয়েদের ফাঁদে ফেলছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:২২ এম, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ঘটনার সূত্রে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, মুসলিম নারীদের লক্ষ্য করে কি কোনো সংগঠিত ফাঁদ পেতেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা? ভোলায় মুসলিম পরিচয়ে বিয়ে করে ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ, গাজীপুরে ১৩ বছরের কিশোরীর ওপর বর্বর নির্যাতন, বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়ের বিকৃত যৌন বর্ণনা, আর টঙ্গি থেকে মসজিদের এক খতিব অপহরণের পর পঞ্চগড়ে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার, এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলো এখন জনমনে এক প্রশ্ন তুলেছে: এসব কি কেবল বিচ্ছিন্ন অপরাধ, নাকি সুপরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত?
স্থানীয় সূত্র ও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একদল উগ্র হিন্দুত্ববাদী চক্র মুসলিম মেয়েদের টার্গেট করে তথাকথিত ‘ভাগোয়া লাভ ট্র্যাপ’ বা ‘গেরুয়া প্রেমের ফাঁদ’ নামের একটি কৌশল চালাচ্ছে। তাঁদের মতে, এটি শুধুমাত্র প্রেমের সম্পর্ক নয়, বরং এক ধরনের সাম্প্রদায়িক যৌন সহিংসতা, যার উদ্দেশ্য মুসলিম নারীদের মানহানি, ধর্মান্তর এমনকি পাচারের দিকে ঠেলে দেওয়া।
অপহৃত খতিব অভিযোগ করেছেন, মসজিদে ইসকন ও ভাগোয়া লাভ ট্র্যাপ বিষয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেওয়ার পর থেকেই তিনি হুমকি পাচ্ছিলেন। তার ভাষায়, “ইসকন নেতার পক্ষে কথা বলার জন্য আমাকে চাপ দেওয়া হয়েছিল, অস্বীকার করায় অপহরণ করা হয়।” পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটির তদন্ত চলছে এবং বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকরা আরও বলছেন, ধর্মীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সাধারণত গণমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, কিন্তু যখন অভিযুক্ত হন হিন্দু ধর্মাবলম্বী কেউ, তখন নীরবতা লক্ষ করা যায়, যা সন্দেহকে আরও ঘনীভূত করছে।
গাজীপুরের ১৩ বছরের কিশোরীর নির্যাতনের ঘটনাতেও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, দুই মাস ধরে নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরীর ঘটনাকে ‘সম্মতিপূর্ণ সম্পর্ক’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা ন্যায়বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যদিকে, বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি নিষিদ্ধ এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছদ্মনামে নারীসহপাঠীকে ধর্ষণ ও বিকৃত যৌনাচারের বর্ণনা দেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই বিকৃত মানসিকতা একই উগ্র সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার ফল, যেখানে মুসলিম নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখা হয়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত কিছু হিন্দুত্ববাদী গ্রুপের স্ক্রিনশটে মুসলিম নারীদের নিয়ে অশালীন ও অবমাননাকর মন্তব্য দেখা গেছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরনের আচরণ কেবল নারী নির্যাতনের দৃষ্টান্ত নয়, বরং বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্যও একটি গুরুতর হুমকি।
আইন ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। তাঁদের মতে, যদি প্রমাণিত হয় যে এর পেছনে সংগঠিত নেটওয়ার্ক কাজ করছে, তাহলে তা দেশের সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে। একইসঙ্গে তাঁরা অপ্রমাণিত গুজব বা উসকানিমূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।