সেকেন্ড রিপাবলিক ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি আরেক ষড়যন্ত্র: সালাহ উদ্দিন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৮:৩৬ পিএম, ০১ মার্চ ২০২৫

নয়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ও ‘গণপরিষদ নির্বাচন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘যারা সেকেন্ড রিপাবলিক ও গণপরিষদের বিষয় সামনে আনছে- এটা হয় তারা বুঝে না অথবা বুঝে; এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আরও দীর্ঘায়িত অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র আছে।’
শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে ‘ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনে’র (এনআরএফ) উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ত্যাগ ও নেতৃত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং সৈয়দ আবদাল আহমেদে সম্পাদিত ‘নন্দিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে সালাহ উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
এনসিপির নবযাত্রাকে স্বাগতম জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দলটি লক্ষ্যের বিষয়ে বলেছে- ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠায় গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন। এটা নিয়ে সমালোচনা করতে চাই না। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই তার নিজস্ব কর্মপন্থা, আদর্শ থাকবে, গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্রে এ রকম ঘোষণা থাকে। কেউ সমাজতন্ত্র চায়, কেউ অন্যকিছু, কেউ হয়ত ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এরকম অনেক কিছু থাকে; বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রে।’
সালাহ উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ‘নতুন বন্ধুদের বলতে চাই, আমাদের বর্তমান রিপাবলিক কি অসুস্থ হয়ে গেছে? সেকেন্ড রিপাবলিক কখন হয়? রিপাবলিক হচ্ছে- যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, তাদের একটা নমিন্যাল অথবা ‘ইলেক্টেড হেড দি স্টেট’ থাকবে। সেটা কি আমাদের নেই?’
গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এনসিপি নতুন সংবিধানের জন্য কথা বলছে। নতুন সংবিধান যেটা হবে সেটা সংশোধনের মাধ্যমে ব্যাপক সংশোধনী প্রস্তাব আপনারা তো দিয়েছেন সংস্কার কমিশনে, আমরাও দিয়েছি। সেই সংবিধানের নাম যদি আপনারা নতুন সংবিধান দেন, ঠিক আছে। কিন্তু গণপরিষদ কেনো বললেন- তা বুঝলাম না। যে সময়ে দেশে কোনো সংবিধান থাকে না, একটা নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন গণপরিষদের প্রয়োজন হয়। গণপরিষদের সদস্যরা সংবিধান প্রণয়ন করেন। যে সংবিধানের ভিত্তিতে পরে পার্লামেন্ট ইলেকশন হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য আমরা কি নতুনভাবে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। রাষ্ট্র তো স্বাধীন আছে। আমাদের যেভাবেই হোক একটা সংবিধান আছে। এটার ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন আছে। যে সংবিধানকে শেখ হাসিনা দলীয়করণ করে গণতন্ত্রের বিপক্ষে নিজেদের পক্ষে সাজিয়েছিলেন সেজন্য সেটার সংস্কার দরকার।’
রোডম্যাপের জন্য এক মাসের আল্টিমেটাম: নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আপনাকে অতি শিগগিরই জাতীয় সংসদের নির্বাচনী রোডম্যাপ দিতে হবে। যদি আপনি কোনো বাহানায় এই মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেন, তাহলে সেটা আমরা রাজনৈতিকভাবে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো বসে সিদ্ধান্ত নেবো। আমাদেরকে পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে, আমরা কোন প্রক্রিয়ায় এগোব।’
ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যকে টিকিয়ে রাখতে হবে: সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যারা দলীয় ঘোষণাপত্রে সেকেন্ড রিপাবলিক আর গণপরিষদের মধ্যে দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে চান, সেটা আপনারা যখন পারবেন করবেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে আর যাতে কোনো বিলম্ব না হয়, সেজন্য সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে- এটাই আমাদের আহ্বান। যে কোনো মূল্যে রাজপথে গড়ে উঠা ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং এনআরএফের সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাবির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, স্বেচছাসেবকবিষয়ক সহ-সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সহধর্মিণী বিথীকা বিনতে হোসাইন, এনআরএফের আহ্বায়ক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বক্তব্য দেন।