এক সপ্তাহের ব্যবধানে লোহিত সাগরে দ্বিতীয় জাহাজ ডুবিয়ে দিলো হুথিরা


saurav/image_203086_1751990568.webp

ইয়েমেনের হুথিদের আক্রমণে লোহিত সাগরে একটি পণ্যবাহী জাহাজ ডুবে যাওয়ার পর ছয়জন ক্রুকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় কমপক্ষে তিনজন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে একটি ইউরোপীয় নৌ মিশন।

যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস (ইউকেএমটিও) সংস্থার তথ্য অনুসারে, সোমবার গ্রিস পরিচালিত, লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ 'ইটারর্নিটি সি' ২৫ জন ক্রু সহ হামলার শিকার হয়।

ইউকেএমটি'র দাবি, ছোট একটি নৌযান থেকে ছোড়া রকেট-চালিত গ্রেনেডের আঘাতে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাহাজটি।

মঙ্গলবারও আক্রমণ অব্যাহত ছিল। এর মধ্যেই রাতভর অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছিল।

ইরান-সমর্থিত হুথিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছিল বলেই তারা ইটারর্নিটি সি জাহাজে আক্রমণ করেছে এবং তারা অনির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রুকে "নিরাপদ স্থানে" নিয়ে গেছে।

হুথিরা "জীবিত অনেক ক্রু সদস্যকে অপহরণ করেছে" বলে জানিয়েছে ইয়েমেনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।

ফিলিপাইনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজটির ক্রুদের মধ্যে ২১ জন তাদের নাগরিক ছিলেন। এছাড়া বাকিদের মধ্যে একজন রাশিয়ান নাগরিক যিনি আক্রমণে গুরুতর আহত হয়েছেন এবং একটি পা হারিয়েছেন।

রবিবার লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী, গ্রীক-পরিচালিত আরেকটি পণ্যবাহী জাহাজ, 'ম্যাজিক সিজে'তে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছিল হুথিরা। গত এক সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জাহাজ ডোবালো হুথিরা।

তারা দাবি করেছে, জাহাজটি এমন একটি কোম্পানির মালিকানাধীন যারা "অধিকৃত ফিলিস্তিনের বন্দরে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে।"

মঙ্গলবার হুথিদের প্রকাশিত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সশস্ত্র ব্যক্তিরা জাহাজে উঠে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে যার ফলে জাহাজটি ডুবে যায়।

এর আগে গত রবিবার আক্রান্ত হওয়া জাহাজ 'ম্যাজিক সিজে'র ২২ জন ক্রুকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছিল। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি বাণিজ্যিক জাহাজ তাদেরকে উদ্ধার করে।

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে, হুথিরা লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং ছোট নৌকার মাধ্যমে হামলা চালিয়ে প্রায় ৭০টি বাণিজ্যিক জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

তারা এখন পর্যন্ত চারটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে, জব্দ করেছে পাঁচটি জাহাজ এবং কমপক্ষে সাতজন ক্রু সদস্যকে হত্যা করেছে।

গোষ্ঠীটি বলেছে, তারা গাজায় ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে কাজ করছে।

তারা দাবি করেছে (যা প্রায়শই মিথ্যা) যে তারা কেবল ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের সাথে যুক্ত জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করছে। এর প্রতিক্রিয়ায় এসব দেশ ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়েছে।

বুধবার লোহিত সাগরে ইইউর নৌ মিশন, অপারেশন অ্যাসপাইডস বলেছে যে তারা ইটারর্নিটি সি-তে হামলার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছে এবং "এখন পর্যন্ত ছয়জন নিখোঁজ ক্রু সদস্যকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে"।

একজন অ্যাসপাইডস কর্মকর্তা এএফপি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, ফিলিপাইনের পাঁচজন ও একজন ভারতীয়সহ আরও ১৯ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স অনুসারে, গ্রীস-ভিত্তিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংস্থা ডায়াপ্লাস বুধবার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে কমপক্ষে পাঁচজন নাবিককে উদ্ধারের দৃশ্য দেখানো হয়েছে যারা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পানিতে কাটিয়েছেন বলে জানিয়েছে।

ডায়াপ্লাস বলছে, "শেষ আলো না আসা পর্যন্ত আমরা বাকি ক্রুদের অনুসন্ধান চালিয়ে যাব।"

সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে উদ্ধৃত করে চারজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।

ম্যাজিক সীস অ্যান্ড ইটারনিটি সি-তে হামলার নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

তারা বলেছে, এই ঘটনা "নৌ চলাচলের স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের চলমান হুমকি প্রদর্শন করে"।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে বলেছে, ''হুথি সন্ত্রাসী হামলা থেকে নৌ চলাচল এবং বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখব, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকল সদস্যের এই ঘটনার নিন্দা জানানো উচিত।"

মে মাসে, আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের ওপর হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনে সাত সপ্তাহের তীব্র মার্কিন হামলার পর হুথিরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়।

তবে, তারা বলেছে যে ওই চুক্তিতে ইসরায়েলের ওপর হামলা বন্ধ করার কথা অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যারা ইয়েমেনে কয়েক দফা প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে।

নতুন করে ধারাবাহিকভাবে জাহাজে এই ধরনের আক্রমণের ঘটনার পর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরো বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থার (আইএমও) মহাসচিব।

"কয়েক মাস শান্ত থাকার পর, লোহিত সাগরে শোচনীয় হামলা পুনরায় শুরু করা আন্তর্জাতিক আইন এবং নৌ চলাচলের স্বাধীনতার একটি নতুন লঙ্ঘন," আর্সেনিও ডোমিঙ্গুয়েজ বলেছেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, "এই আক্রমণ এবং তাদের সৃষ্ট দূষণের প্রধান শিকার হলেন নিরীহ নাবিক এবং স্থানীয় জনগণ।"

সূত্রঃ বিবিসি 

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×