এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন
দাবি মানা না হলে রোববার যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১১:২৭ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

বাড়িভাড়া ও অন্যান্য ভাতার দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন গড়িয়েছে সপ্তম দিনে। শনিবার রাজধানীতে বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালো পতাকা মিছিল করেছে তারা। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে রোববার তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার বাসভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।
শনিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া মিছিল দোয়েল চত্বর ঘুরে কদম ফোয়ারা পর্যন্ত গড়ায়। সেখানে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও আমলাদের শুধু বাড়িভাড়া নয়, পুরো বাড়ি লাগে। কিন্তু আমরা ন্যায্য বাড়িভাড়া পাচ্ছি না। এক সপ্তাহ ধরে রাস্তায় বসে ঘুমিয়ে আন্দোলন করছি; তবুও কেউ শুনছে না।”
তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণ না হলে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরারের পদত্যাগ দাবি করা হবে।
মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের হাতে ছিল কালো পতাকা, মাথায় বাঁধা ছিল ‘২০ শতাংশ বাড়িভাড়া চাই’ লেখা ব্যান্ড। তারা স্লোগানে মুখর ছিলেন- “তুমি কে, আমি কে, শিক্ষক! শিক্ষক!”, “শিক্ষকদের এক দাবি, ২০ পার্সেন্ট, ২০ পার্সেন্ট”, “আমাদের ন্যায্য দাবি, মানতে হবে মানতে হবে”, “সি আর আবরার, আর নেই দরকার”।
সমাবেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না। কালো পতাকা মিছিলের পরও যদি সরকার নীরব থাকে, তাহলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হবে।”
শিক্ষকদের এই বিক্ষোভে কদম ফোয়ারায় একাত্মতা প্রকাশ করে যোগ দেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, “শিক্ষকরা কোনো দুর্নীতি করেন না; দুর্নীতি করেন আমলারা। অথচ শিক্ষকরাই রাস্তায় বসে ন্যায্য অধিকার চাচ্ছেন; এটা জাতির জন্য লজ্জা। আমলাদের চেয়ে শিক্ষকদের বেতন বেশি হওয়া উচিত। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গণঅধিকার পরিষদ পাশে থাকবে।”
এদিকে, শহীদ মিনারে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের একটি অংশ গত দুই দিন ধরে আমরণ অনশনে রয়েছেন। আন্দোলনের সপ্তম দিনে তারা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবিগুলোর নিষ্পত্তি না হলে রোববার ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে পদযাত্রা করবেন।
এর আগে, গত রোববার শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার থেকে সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে টানা কর্মবিরতি।
শিক্ষকদের তিনটি প্রধান দাবি হলো- মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা। এর সঙ্গে তারা বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিও যুক্ত করেছেন।
সরকার এরইমধ্যে বাড়িভাড়া ভাতা ৫০০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, যা ৫ অক্টোবর প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু শিক্ষকরা এই প্রস্তাবকে ‘অপর্যাপ্ত’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন। পরদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাড়িভাড়া ভাতা ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা করার একটি প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠালেও তাতেও শিক্ষকরা সন্তুষ্ট নন।
অন্যদিকে, শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি শতভাগ জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। সংগঠনটির সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, “শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে এখন যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা শুধু স্ট্যান্ডবাজি করছেন, আমরা কোনো শতাংশের হিসাবে বেতন-ভাতা চাই না। আমরা চাই, জাতীয়করণ করে শতভাগ সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।”
শনিবার রাজধানীর মহাখালীতে গাউসূল আজম কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের উদ্যোগে ‘মাদ্রাসা শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষিকাদের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমান এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক শাহনেওয়াজ দিলরুবা খান।