আর্থিক সংকটে জাতিসংঘ মিশন থেকে ১৩১৩ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রত্যাহার
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৪:৩৭ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

জাতিসংঘের বাজেট সংকটে পড়েছে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ। মিশনের ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে পাঁচটি ভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে ১,৩১৩ জন বাংলাদেশি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যকে।
১৪ অক্টোবর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সামরিক শাখা অফিস অব মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স (ওএমএ) থেকে পাঠানো এক অফিসিয়াল চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। চিঠিটি পাঠানো হয় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সামরিক উপদেষ্টা এবং স্থায়ী মিশনের কাছে।
ওএমএ’র ভারপ্রাপ্ত সামরিক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল শেরিল পিয়ার্সের পক্ষে প্রেরিত এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন চিফ অব স্টাফ ক্যাপ্টেন লনি ফিল্ডস জুনিয়র। খসড়াটি প্রস্তুত করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানবির আলম, যিনি বর্তমানে জাতিসংঘের মিলিটারি পিস অপারেশন সাপোর্ট বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, "জাতিসংঘ মহাসচিবের নির্দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চলমান আর্থিক সংকটের কারণে ১৫ শতাংশ বাজেট হ্রাসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে ইউনিফর্মধারী সদস্যদের জন্য বরাদ্দ অর্থও কমানো হচ্ছে, যা সরাসরি মাঠপর্যায়ের শান্তিরক্ষীর সংখ্যায় প্রভাবিত করবে।"
সবচেয়ে বড় আকারে প্রত্যাহার ঘটছে দক্ষিণ সুদানের মিশন ‘ইউএনমিস’ থেকে, যেখান থেকে ফেরত আনা হবে ৬১৭ জন সদস্যকে। মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ‘মিনুসকা’ থেকে ফিরছেন ৩৪১ জন, সুদানের আবেই অঞ্চলের ‘ইউনিসফা’ থেকে ২৬৮ জন, কঙ্গোর ‘মনুসকো’ থেকে ৭৯ জন এবং পশ্চিম সাহারার ‘মিনুরসো’ থেকে ৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে প্রত্যাহার করা হবে।
জাতিসংঘ হেডকোয়ার্টার থেকে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে একমাত্র কারণ হলো বাজেট ঘাটতি। পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন হলে তা অবিলম্বে জানানো হবে বলেও জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে, আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ও ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব বজায় রাখার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
এর আগে কঙ্গোতে নিযুক্ত বাংলাদেশ পুলিশের সর্বশেষ ইউনিটকেও প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় জাতিসংঘ। ওই কন্টিনজেন্টে ১৮০ জন সদস্যের মধ্যে ৭০ জন ছিলেন নারী পুলিশ কর্মকর্তা, যাদের দেশে ফেরার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী নভেম্বর মাসে।
বাংলাদেশ ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়, যখন মাত্র ১৫ জন সামরিক পর্যবেক্ষক পাঠানো হয়েছিল। এরপর থেকে তিন বাহিনীর সদস্যরা একত্রে অংশ নিয়েছেন ৪৩টি দেশের ৬৩টি মিশনে। বর্তমানে ১০টি ভিন্ন ভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন মোট ৫ হাজার ৬১৯ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী।