চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে স্বাচিপ নেতাকে পুলিশে দেন রিয়াদ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১২:৪৭ এম, ২৯ জুলাই ২০২৫

ঢাকার গুলশানে চাঁদা তোলার সময় হাতেনাতে ধরা পড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, সবসময় নিজেকে একটি ‘দলবল’সহ পরিচিত করিয়ে এলাকায় দাপট দেখাতেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিজেকে ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করতেন তিনি। বনানী, গুলশান ও বসুন্ধরার বিভিন্ন বাড়িতে তিনি আওয়ামী লীগের ‘দোসরদের’ বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে অভিযান চালাতেন গত ছয় মাস ধরে।
রিয়াদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য ও ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তার এসব অপতৎপরতার বিষয়গুলো তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিয়াদ বিভিন্ন সময়ে পুলিশের ওপরও প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। কোনো কর্মকর্তা তার নির্দেশে কাজ না করলে তিনি হুমকি দিতেন এবং পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলির ব্যবস্থা করতেন। এমনই একটি ঘটনার পরিণতিতে, সম্প্রতি এক তদন্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়।
এক তদন্ত সূত্রের তথ্য মতে, আওয়ামী লীগের এক সাবেক সংসদ সদস্যের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করেছেন রিয়াদ। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।
গুলশান বিভাগের কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত এপ্রিল মাসে স্বাচিপের একজন নেতাকে ভাটারা থানার এলাকায় আটকে রেখে রিয়াদ ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই চিকিৎসক দুই লাখ টাকা দিতে রাজি হন, কিন্তু রিয়াদ পুরো টাকাটাই চান। এরপর তাকে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা মামলা না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না—এমন কথা বললেও, রিয়াদ তাকে গ্রেপ্তারের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
পরবর্তীতে, পুলিশ কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞেস করেন, “রাস্তা থেকে কাউকে আটক করার ক্ষমতা আপনার কোথা থেকে এলো?” উত্তরে রিয়াদ বলেন, “আমি আন্দোলন করেছি। আমি দোসরদের ধরতে পারবো না? আমি একজন জুলাই যোদ্ধা।” পরে তৎকালীন ভাটারা থানার তদন্ত কর্মকর্তা সুজন হক তাকে ও তার চার-পাঁচজন সহযোগীকে থানায় নিয়ে যান। পরে রিয়াদ ক্ষমা চেয়ে ছাড়া পান।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ রয়েছে এমন অভিযোগে রিয়াদ নিজেই সহযোগীদের নিয়ে বাসায় গিয়ে পরিস্থিতি তৈরি করতেন, এরপর পুলিশকে খবর দিতেন। একটি ঘটনায়, গত ফেব্রুয়ারিতে বনানীতে সাবেক এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটনের বাসায় গিয়ে মব তৈরি করেন রিয়াদ ও তার দল।
আরেকটি ঘটনার বর্ণনা দেন এক থানা কর্মকর্তা। মার্চ মাসে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় একইভাবে মব তৈরি করে রিয়াদ। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার শর্ত হিসেবে বলেন, বাসায় ঢোকার পুরো কার্যক্রম ভিডিও করা হবে যাতে কোনো বেআইনি সুবিধা গ্রহণ না করা যায়।
এপ্রিলেও বসুন্ধরার এক বাসায় প্রবেশ করেন রিয়াদ ও তার সহযোগীরা, আওয়ামী লীগের লোকজন আছে এমন অভিযোগ তুলে। সেখানে চাঁদা আদায় করতে না পারায়, পরে পুলিশকে ডেকে নেন। একইভাবে খিলবাড়ির টেকে একটি জমি দখলের নাম করে এক নারীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন রিয়াদ। ওই নারী ২০ হাজার টাকা আগাম দিয়েছিলেন। পরে জমি দখলে সহায়তা করতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে চাপ দেন রিয়াদ। তবে আদালতের আদেশ ছাড়া জমি দখল করা যাবে না—এই যুক্তিতে সাড়া না দেওয়ায়, তিনি সেই কর্মকর্তার ওপর চড়াও হন।
সবশেষ গত শনিবার, গুলশান-২ এর ৮৩ নম্বর সড়কে সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শাম্মী আহমেদের বাসায় ৪০ লাখ টাকা চাঁদা নিতে গিয়ে রিয়াদ এবং তার চার সহযোগী পুলিশের হাতে আটক হন। এর আগে ওই বাসা থেকেই ১০ লাখ টাকা আদায় করেছিলেন বলে জানা গেছে।
গ্রেপ্তার হওয়া বাকি চারজন হলেন—ঢাকা মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং কিশোর আমিনুল ইসলাম। কিশোর হওয়ায় আমিনুলকে রিমান্ডে নেওয়া হয়নি। অন্য চারজনকে রিমান্ডে নিয়ে মিন্টো রোডে ডিবির কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তদন্ত সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাম্মীর বাসা থেকে চাঁদা তোলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন রিয়াদ ও তার সহযোগীরা।
গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, “চাঁদাবাজির বিষয়ে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”