কয়েক মুহূর্তের সহানুভূতই একটি জীবন বদলে দিতে পারে
- লাইফস্টাইল ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:৫৩ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জীবনের পথে বাধা, হতাশা ও অপ্রকাশিত কষ্ট কখনও কখনও মানুষের মনোবল ভেঙে দিতে পারে। কখনো কেউ জীবনের প্রতি আস্থা হারিয়ে এমন ভয়ংকর সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় যা আত্মহত্যা হিসেবে প্রকাশ পায়। সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিনই এমন খবর আসে। তবে, খোলামেলা আলোচনা, সহানুভূতি এবং সময়মতো সহায়তা অনেক সময় জীবন বাঁচাতে পারে। এই বিষয়টি আলোচনা করেছেন সাইকোলজিস্ট ওয়াহিদা পারভীন।
আত্মহত্যা: বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট
বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন। অর্থাৎ, প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একজন মানুষ জীবন ত্যাগ করছেন। বাংলাদেশেও আত্মহত্যার হার উদ্বেগজনক, যেখানে গ্রামে শহরের তুলনায় এই হার বেশি।
ওয়াহিদা পারভীন বলেন, আত্মহত্যা কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি নয় এর প্রভাব পরিবার, সমাজ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পড়ে। এর পেছনে মানসিক সমস্যা, ডিপ্রেশন, অ্যানজাইটি, সামাজিক চাপ, একাকিত্ব, প্রিয়জনের মৃত্যু, আসক্তি বা ভুল ধারণা প্রভাব ফেলে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আত্মহত্যা নিয়ে সমাজে প্রচলিত অনেক ভুল ধারণা আছে। যেমন, একবার আত্মহত্যার চিন্তা হলে তা সারাজীবন থাকে, গুরুতর মানসিক রোগীদের মধ্যেই ঘটে, পরিবারের একজন করলে অন্যরাও করবে, বা যারা চেষ্টা করে তারা কেবল ‘অ্যাটেনশন সিকার। এসব ধারণা ভুল। সঠিক সহায়তা ও চিকিৎসায় আত্মহত্যার প্রবণতা পরিবর্তন করা সম্ভব।
সতর্কবার্তা ও ওয়ার্নিং সাইন:
সাইকোলজিস্ট ওয়াহিদা পারভীন জানান, কিছু সতর্ক সংকেত থেকে কারো আত্মহত্যার প্রবণতা বোঝা যায়। এর মধ্যে রয়েছে:
প্রিয় জিনিসপত্র অন্যকে দেওয়া
নিজেকে আলাদা রাখা, একাকিত্ব বোধ
হঠাৎ ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বা ক্ষতি করার প্রবণতা
আক্রমণাত্মক ব্যবহার বা মৃত্যুর প্রসঙ্গে কথা বলা
নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা, যেমন আমি কিছু পারি না বা আমাকে দিয়ে কিছু হবে না
সহানুভূতির গল্প
ওয়াহিদা পারভীন একটি ঘটনা শেয়ার করেন। এক রাতে ১১টার দিকে একজন ক্লায়েন্ট ফোন করেন কথা শেষ করেই হয়তো আমি জীবন শেষ করব। ২০–২৫ মিনিটের সংলাপে ওয়াহিদা পারভীন তার সঙ্গে বসে কথা বলেন, তাকে শোনা এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন। কেবল এই সংক্ষিপ্ত সময়ের সহানুভূতিপূর্ণ কথাবার্তাই ক্লায়েন্টকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরিয়ে আনে। পরের দিন তিনি স্বাভাবিকভাবে ঘুমোতে সক্ষম হন এবং পরবর্তীতে চিকিৎসা সেশনে অংশ নেন।
মনোবিদের পরামর্শ
ওয়াহিদা পারভীন বলেন, আমাদের আশেপাশের মানুষ কেমন আছে তা খেয়াল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাঝে মাঝে শুধুমাত্র তুমি কেমন আছো? এই ছোট্ট প্রশ্নও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। মানুষটি কষ্ট বা সমস্যা ভাগ করতে পারবে এবং জীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পাবে।
তিনি সতর্ক করেছেন, কোনও পরিস্থিতিতেই নিন্দামূলক বা জাজমেন্টাল ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়। বরং সহানুভূতিশীল মনোভাব, মন দিয়ে শোনা এবং অনুভূতিকে বোঝা অপরিহার্য।
যদি সমস্যা আমাদের সক্ষমতার বাইরে থাকে, তবে প্রফেশনাল মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে পাঠানোই সর্বোত্তম উপায়। কখনও কখনও কেবল সঠিক সময়ে প্রদত্ত সহানুভূতিশীল মনোযোগ একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।
ওয়াহিদার কথায়, আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ, খোলামেলা আলোচনা ও সহানুভূতিশীল ব্যবহার একজন মানুষকে নতুন করে বাঁচার পথ দেখাতে পারে। প্রতিটি যত্নশীল প্রশ্ন, প্রতিটি সহানুভূতির মুহূর্ত জীবন রক্ষা করতে সক্ষম।