
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত পুতিন-এরদোয়ান
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে গত চারদিন ধরে যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে, সেটি বন্ধে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ দেখিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। খবর বিবিসি বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয়ই আলাদাভাবে জানিয়েছেন- সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে তারা মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, সংঘাত নিরসনের জন্য রাশিয়ার আগের প্রস্তাব এখনও বহাল রয়েছে। যদিও পরিস্থিতি এখন আরও জটিল হয়ে পড়েছে। সমস্যার সমাধানে রাশিয়া বিবাদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলেও জানিয়েছে ক্রেমলিন। এদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সোমবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের অবসান ঘটাতে তুরস্ক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনেও প্রস্তুত বলে ইরানকে জানিয়েছেন এরদোয়ান।

ইরানে আবারও ইসরায়েলি হামলা
ইরানে আবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে এ হামলা চালানো হয়েছে। সোমবার ( ১৬ জুন) ফারস নিউজ এজেন্সির বরাতে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ফারস নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, পশ্চিম তেহরানের একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। ইসরায়েল এ অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটিকে নিশানা করে এ হামলা চালিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের গণমাধ্যমও পূর্বাঞ্চলে বিস্ফোরণের খবর জানিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রাজধানীর কিছু অংশে হুমকি দেওয়ার পর এ হামলা হয়েছে। এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তেহরানের বাসিন্দারা শিগগিরই এ হামলার মূল্য দেবে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরান রাতভর ১০০টিরও কম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে এর মধ্যে মাত্র সাতটি ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে। সামরিক এক মুখপাত্র জানান, ইসরায়েল ইরানের ওপর আকাশে আধিপত্য অর্জন করেছে এবং ইরানের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সারফেস-টু-সারফেস ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এ পর্যন্ত ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের সকলে বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে ইসরায়েলের হামলায় ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে গঠিত আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি)’ থেকে সরে যাচ্ছে ইরান। সোমবার (১৭ জুন) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এনপিটি চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে তারা।

ইরানের পুনর্গঠন সক্ষমতায় বিস্মিত ইসরায়েল : মার্কিন বিশ্লেষক
ইসরায়েলের হামলায় একাধিক সামরিক কমান্ডার নিহত হওয়ার পরও অবিরাম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের হারানোর পরও তেহরানের এই পুনর্গঠন সক্ষমতা ইসরায়েলকেও বিস্মিত করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশ্লেষক। -সিএনএন কোয়েন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্রাফটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাইটা পার্সি বলেন, ইসরায়েলিরা ইরানের পুনর্গঠন সক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করেছে। কারণ তারা (ইসরায়েলিরা) অত্যন্ত সফলভাবে ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি বলেন, ইসরায়েল বিশ্বাস করেছিল যে তারা ইরানের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করেছে। কিন্তু সেই ধারণা দ্রুত বদলে গেছে। এখন আমরা যা দেখছি তা হলো, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সমস্ত স্তর ভেদ করতে সফল হচ্ছে। এদিকে সোমবার ভোরেও ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলায় রাজধানী তেল আবিব ও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও অনেক আহত হয়েছেন। হামলায় ঘরবাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রসঙ্গত, টানা কয়েকদিন ধরে ইরান ও ইসরায়েলের হামলা ও পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। গত ১৩ জুন ভোরে তেহরানসহ ইরানের বেশ কিছু স্থানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েল। পরে তীব্র শক্তি নিয়ে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরানও। দফায় দফায় চলছে এই হামলা ও পাল্টা হামলা। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

ইরানের সঙ্গে সব সীমান্ত বন্ধ করলো পাকিস্তান
ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের মধ্যেই—পাকিস্তান ইরানের সঙ্গে সব সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। খবর আল জাজিরার। বেলুচিস্তান প্রদেশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কাদির বখ্শ পিরকানি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, চাগাই, ওয়াশুক, পাঞ্জগুর, কেচ এবং গওয়াদার—এই পাঁচটি জেলার সব সীমান্ত কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। চাগাই জেলার সীমান্ত কর্মকর্তা আতাউল মুনিম জানান, ইরানে প্রবেশ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তা স্থগিত থাকবে। তিনি আরও বলেন, সীমান্তে বাণিজ্য কার্যক্রমে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এমনকি যেসব পাকিস্তানি নাগরিক ইরানে অবস্থান করছেন, তারা দেশে ফিরতে পারবেন। আজ প্রায় ২০০ জন পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ফেরার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ইরানের ভূখণ্ডে একযোগে বিমান-ড্রোন-মিসাইল হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েল। এতে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনা, তেল শোধনাগারসহ বহু স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। হতাহত হয় বহু মানুষ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহত বেড়ে অন্তত ২২০ জনে দাঁড়িয়েছে। সেইসাথে আহত হয়েছে আরও ৯শ’ জনের মতো। অপরদিকে, ইসরায়েলের অপারেশন রাইজিং লায়নের জবাবে গত দু’দিন ধরেই দেশটির বিভিন্ন স্থাপনায় মুহুর্মুহু মিসাইল ও ড্রোন ছুঁড়েছে তেহরান। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে এখন পর্যন্ত তেলআবিবে ইরানের হামলায় প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। সেইসাথে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। এরমধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। ফলে প্রাণহানি আরও বাড়ার শঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।

তেহরানের বাসিন্দাদের ক্ষতি করার ইচ্ছা নেই: ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী
ইরান ও ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান হামলা-পাল্টা হামলার মাঝে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ মন্তব্য করেছেন, ইরানের রাজধানী তেহরানের বাসিন্দাদের শারীরিকভাবে কোনো ক্ষতি করার ইচ্ছা নেই। আজ সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ওই মন্তব্য করেছেন তিনি। যদিও এর আগে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ইসরাইলিদের ওপর ইরানের হামলার জন্য তেহরানের বাসিন্দাদের ‘মূল্য দিতে হবে’। তবে ইসরায়েল কাৎজ এক্সে দেওয়া পোস্টে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘তেহরানের বাসিন্দাদের শারীরিকভাবে ক্ষতি করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।’ ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ‘তারা (তেহরানের বাসিন্দারা) একনায়কতন্ত্রের খেসারত দিতে বাধ্য হবে। যেখানে ইরানি শাসকগোষ্ঠীর সামরিক ও নিরাপত্তা কাঠামোতে আঘাত হানা আমাদের জন্য জরুরি হবে, সেসব এলাকা থেকে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া লাগতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের নাগরিকদের রক্ষার কাজ চালিয়ে যাবো।’

নেতানিয়াহুর ওপর আস্থা হারাচ্ছে ইসরায়েলিরা
ইরানে চলমান হামলা নিয়ে ইসরায়েলিরা কী ভাবছেন এ বিষয়ে জানিয়েছেন ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ। তিনি জানান, ইসরায়েলিরা ইরানে হামলার পক্ষে, তবে তারা নেতানিয়াহুর ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। ওরি গোল্ডবার্গ জানান, অনেক দিন ধরেই ইসরায়েলিরা ইরানকে তাদের প্রধান শত্রু বলে মনে করে। এর প্রধান কারণ, ইরান দীর্ঘদিন ধরে হামাস ও হিজবুল্লাহকে অর্থ ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। তাই ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধকে সাধারণভাবে ইসরায়েলি জনগণ অনেকটা সমর্থন করে। তিনি বলেন, ‘অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর সরকারের ওপর মানুষের খুব একটা বিশ্বাস নেই। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে তিনি অনেক সমস্যায় আছেন।’ গোল্ডবার্গ বলেন, ‘এই যুদ্ধের শেষ কোথায় বা কীভাবে- সেটা নিয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা নেই কারও এখনও।’ তিনি আরও বলেন, যদিও সাধারণ মানুষের নেতানিয়াহুর ওপর আস্থা নেই, তবে তারা বিশ্বাস করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সঠিকভাবে এ অভিযান চালাতে পারবে। এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চাইছিলেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করতে, কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানান। সংঘাতে ইরানে কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত ও ১ হাজার ২৭৭ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। অপরদিকে, ইসরায়েলে ১৪ জন নিহত ও ৩৮০ জন আহত হয়েছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, পাল্টা হুঁশিয়ারি ইসরায়েলের
তেল আবিব ও ইসরায়েলের বন্দরনগরী হাইফাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। দেশটির এ হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ হামলায় বাড়িঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর জবাবে পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার (১৬ জুন) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তেহরানের বাসিন্দারা শিগগিরই এ হামলার মূল্য দেবে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরান রাতভর ১০০টিরও কম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে এর মধ্যে মাত্র সাতটি ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে। সামরিক এক মুখপাত্র জানান, ইসরায়েল ইরানের ওপর আকাশে আধিপত্য অর্জন করেছে এবং ইরানের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সারফেস-টু-সারফেস ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এ পর্যন্ত ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের সকলে বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে ইসরায়েলের হামলায় ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে গঠিত আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি)’ থেকে সরে যাচ্ছে ইরান। সোমবার (১৭ জুন) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এনপিটি চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে তারা। এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তেহরান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাঈ হামানে বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে এবং পরবর্তী ধাপে সরকার ও পার্লামেন্ট একযোগে কাজ করবে।

তেহরানের আকাশসীমা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি ইসরায়েলের
ইরানের রাজধানী তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইডিএফ মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন এই দাবি করেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে। আইডিএফ মুখপাত্র বলেন, আমরা তেহরানের ওপর পূর্ণ বিমান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছি। ইরানের এক-তৃতীয়াংশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করে দিয়েছি। তাদের বড় অংশের হামলা ব্যাহত করা সম্ভব হয়েছে। ডেফরিন জানান, রোববার রাত ও সোমবার ভোরে ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে দুই ধাপে ৬৫টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ডজনখানেক ড্রোন ছোড়া হয়। এর বেশিরভাগই মাঝপথে ভূপাতিত হলেও তিনটির আঘাতে আটজন নিহত হন। আইডিএফ মুখপাত্রের দাবি, ইরান ওই রাতে এর দ্বিগুণ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরিকল্পনা করেছিল। তবে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী আগেভাগেই ইরানের অভ্যন্তরে ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্য করে হামলা চালায়। সেগুলো তখনও ছোড়া হয়নি। আইডিএফ আরও জানায়, প্রায় ৫০টি যুদ্ধবিমান ও ড্রোন একযোগে অভিযান চালিয়ে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র গুদাম, নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র ও সেনাদের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এর মধ্যে অনেকগুলো নিশানা ছিল ইরানের ইস্পাহান শহরে। সেখানেও শতাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে বলে জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ১২০টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করেছে বলে আইডিএফ দাবি করেছে। যা ইরানের মোট লাঞ্চারের এক-তৃতীয়াংশ বলে ধারণা করা হয়। তবে এসব দাবির বিষয়ে এখনও ইরান কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ইসরায়েল গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গুরুত্বপূর্ণ নথি এখন ইরানের কব্জায়
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বড় ধরনের গোয়েন্দা সাফল্য দাবি করেছে ইরান। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একটি অত্যন্ত জটিল অভিযানের মাধ্যমে তারা ইসরায়েলের মোসাদ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার বহু সংবেদনশীল ও কৌশলগত নথি হস্তগত করেছে। ইরান দাবি করেছে, তারা হাজার হাজার গোপন নথি, ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক পরিকল্পনা, দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে গোপন কার্যক্রম ও শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের তথ্য। এই খবর প্রকাশ করেছে পার্স টুডে ও আল-মায়াদিন। জর্ডানের সামরিক বিশ্লেষক ও কৌশলবিদ নাজাল আবু জায়েদ বলেন, ইরানের এই গোয়েন্দা অভিযান ছিল সময় ও স্থানভিত্তিক সমন্বিত এক সাইবার ও মাঠ পর্যায়ের হামলা। তারা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ও সক্ষমতার ‘মিথ’ ভেঙে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সংবেদনশীল আর্কাইভ সবসময় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে থাকে। তবুও ইরানি গোয়েন্দারা তা ভেদ করে ঢুকে পড়েছে। এটি ইসরায়েলের যুদ্ধমন্ত্রী ও সামরিক প্রধানদের বহুদিনের অহংকার ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সক্ষমতাকে মুছে দিয়েছে। আল-মায়াদিনকে দেওয়া তথ্যে একাধিক অভিজ্ঞ সূত্র জানায়, অনেক আগেই এই অভিযানের সূচনা হয়, তবে বিপুল সংখ্যক নথিপত্র নিরাপদভাবে ইরানের অভ্যন্তরে স্থানান্তরের পরই বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে। তারা জানায়, নথির পরিমাণ এত বেশি যে শুধু তা পর্যবেক্ষণ, ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণেই অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। সূত্রগুলো আরও দাবি করে, ইরান এখন মোসাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত সকল তথ্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অভিযানের মাধ্যমে শুধু কৌশলগত সুবিধা নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে গোয়েন্দা লড়াইয়ে ইরান এক ঐতিহাসিক বিজয় দাবি করতে পারে। তেলআবিব এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের চাপে পড়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনার এই সময় ইরানের এই দাবি এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা ভবিষ্যতের সংঘাতের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

এবার ইসরায়েলে ‘সুইসাইড ড্রোন’ পাঠিয়েছে ইরান
ইসরায়েলে হামলার পর কঠোর জবাব দিতে শুরু করেছে ইরান। দেশটি এবার ইসরায়েলে ‘সুইসাইড ড্রোন’ পাঠিয়েছে। সোমবার (১৬ জুন) বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইরানের সেনাবাহিনীর গ্রাউন্ড ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কিয়ুমার্স হেইদারি বলেন, সেনাবাহিনী গত দুই দিনে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে কয়েক ডজন সুইসাইড ড্রোন’ নিক্ষেপ করেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় সেনাবাহিনী ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে বিস্ফোরণ ঘটাতে এই ড্রোনগুলো নিক্ষেপ করেছে। এই অভিযানে ব্যবহৃত ইরানের সেনাবাহিনীর শক্তিশালী আত্মঘাতী ড্রোনগুলোর মধ্যে ‘আরাশ’ অন্যতম। এই ড্রোনের পরিসর ২,০০০ কিলোমিটার। জেনারেল হেইদারি বলেন, সেনাবাহিনীর গ্রাউন্ড ফোর্সের ড্রোন ইউনিটগুলো ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) মহাকাশ বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। আইআরজিসি গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ঝাঁক নিক্ষেপ করেছে। গত শুক্রবার ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরানের এই প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু করেছে। ইসরায়েলের চালানো এ হামলায় সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং সাধারণ মানুষসহ কয়েক ডজন ইরানি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে ইরানের সর্বশেষ হামলা সোমবার ভোরে শুরু হয়। এ সময় আইআরজিসি দ্বারা নিক্ষেপিত বেশ কয়েকটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিব, হাইফা এবং অধিকৃত ভূখণ্ডের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের শহর যেমন ব্নেই ব্রাকের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।

পারমাণবিক অস্ত্র না বানানোর চুক্তি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে ইরান
বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে গঠিত আন্তর্জাতিক চুক্তি `নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি)’ থেকে সরে যাচ্ছে ইরান। সোমবার (১৭ জুন) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এনপিটি চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে তারা। খবর রয়টার্সের। এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তেহরান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাঈ হামানে বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে এবং পরবর্তী ধাপে সরকার ও পার্লামেন্ট একযোগে কাজ করবে।’ ১৯৭০ সালে ইরান এনপিটি স্বাক্ষর করে, যা বেসামরিক পরমাণু শক্তির অধিকার নিশ্চিত করলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) ইরানের বিরুদ্ধে এনপিটি চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে ইরানে বড় ধরনের বিমান হামলা চালায় তেলআবিব। তবে ইরান শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এমনকি দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান সোমবার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ইসলামি শরিয়াহ ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ির ফতোয়ার পরিপন্থি।’ তবে একই দিন দেশটির পার্লামেন্টে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে গঠিত আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তাবকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, চুক্তি থেকে বের হওয়ার মাধ্যমে ইরান আসলে তারে পরমাণু শক্তি প্রকাশ্যে আনার পথ উন্মুক্ত করছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরান তার পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা করতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তেহরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এনপিটি থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এবং সংসদে বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ইরান মনে করে, আইএইএ-এর সাম্প্রতিক প্রস্তাবনা ইসরায়েলের হামলার পথ সুগম করেছে। মুখপাত্র বাঘাঈ বলেন, ‘যারা এই প্রস্তাবে ভোট দিয়েছে, তারাই মূলত ইসরায়েলের হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে।’ উল্লেখ্য, ইসরায়েল কখনোই এনপিটি-তে যোগ দেয়নি এবং তাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকার ব্যাপারে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক ধারণা থাকলেও, দেশটি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার বা অস্বীকার করেনি। ইরানের দাবি, মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অধিকারী হচ্ছে জায়নিস্ট শাসকগোষ্ঠী। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যদি সত্যিই এনপিটি থেকে বেরিয়ে যায়, তবে তা হবে পরমাণু কূটনীতিতে এক নতুন উত্তাল অধ্যায়ের সূচনা, যা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় বিশ্ব রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, বিপাকে ৪০ হাজার পর্যটক
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘাত আরও বিস্তৃত ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে রূপ নিতে পারে, যার প্রভাব গোটা মধ্যপ্রাচ্য পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাজনক হুমকি আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন অন্তত ৪০ হাজার বিদেশি পর্যটক। ইসরায়েলে তারা আটকা পড়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রেক্ষাপটে আকাশপথ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। খবর রয়টার্সের। পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, তারা পর্যটকদের সহায়তায় ২৪ ঘণ্টার ভার্চুয়াল অফিস চালু করেছে, যা হিব্রু এবং ইংরেজি দুই ভাষায় তথ্যসেবা দিচ্ছে। মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, পর্যটন খাতের বিভিন্ন অংশীজন—যেমন হোটেল ও অন্যান্য আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখছে, যাতে পর্যটকরা আবাসনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে পারেন। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, আমরা পর্যটকদের দেশে ফেরার সুযোগ তৈরি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এজন্য বিদেশি পাসপোর্টধারীরা যাতে স্থলপথে জর্ডান ও মিশরের সীমান্ত পার হতে পারেন, সেই সুযোগগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। এসব সীমান্ত এখনও খোলা রয়েছে।

‘ইসরায়েলে পরমাণু হামলা চালাবে পাকিস্তান’
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ইসরায়েলের সম্ভাব্য পারমাণবিক হামলার জবাবে পাকিস্তানও ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের শীর্ষ এক সেনা কর্মকর্তা। তবে এ বিষয়ে এখনো পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)-এর একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য জেনারেল মোহসেন রেজাই এক সাক্ষাৎকারে জানান, ইসরায়েল যদি ইরানে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে তবে পাকিস্তানও ইসরায়েলে পারমাণবিক হামলা চালাবে, এমন প্রতিশ্রুতি তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান ইরানের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে এবং মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। এদিকে ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হয়েছে। গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালায়, যাতে তেহরানের দাবি অনুযায়ী অন্তত ২২৪ জন ইরানি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরাও। এর জবাবে ইরানও ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। সোমবার সকালেও ইরান নতুন করে হামলা চালালে তেলআবিবসহ বিভিন্ন শহরে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে। ইসরায়েলি জরুরি সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এসব হামলায় দেশটিতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

তুরস্ক-সৌদি-ইরান-পাকিস্তান মিলে ইসলামিক আর্মি গঠনের প্রস্তাব
মধ্যপ্রাচ্যে ‘ইসলামিক সেনাবাহিনী’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে ইরান। দেশটি বলেছে, সৌদি আরব, পাকিস্তান, তুরস্ক ও আরও কয়েকটি দেশ নিয়ে এই সেনাবাহিনী গঠন করা হতে পারে। ইরানি নেতা মহসেন রেজাই জানিয়েছেন, এই সেনাবাহিনী গঠন করা হলে তা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আত্মরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ইসলামিক সেনাবাহিনী গঠিত হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার সমীকরণে নতুন মোড় নিতে পারে এবং সংঘাত আরও বিস্তার লাভ করার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে সোমবার আবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এই হামলায় রাজধানী তেল আবিব ও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও অনেক আহত হয়েছেন। হামলায় ঘরবাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসও এই হামলায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দূতাবাসটি বন্ধ রাখা হয়েছে এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া প্রায় সাত লাখ মার্কিনিকে ঘরেই থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি মার্কিন ঘাঁটি বা স্বার্থে হামলা হয়, তাহলে ওয়াশিংটন সম্পূর্ণ শক্তিতে জবাব দেবে। সূত্র: ডেইলি মেইল, আল জাজিরা

ইরানের হামলায় পাগলপ্রায় ইসরায়েলিরা, নিচ্ছেন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা
ইরানের মুহূর্মুহু ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলায় পাগলপ্রায় ইসরায়েলিরা। আতঙ্কে নাজেহাল বাসিন্দাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার হিড়িক দেখা যাচ্ছে। মেন্টাল হেলথকেয়ার হটলাইনে গত ৪ দিনে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ফোনকল করা হয়েছে। এমনকি জুম মিটিং এর মাধ্যমেও মানসিক চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হচ্ছেন বিপর্যস্ত ইসরায়েলিরা। চোখের সামনে অবাস্তব এক নগরী দেখছেন ইসরায়েলিরা। ধসে পড়া ভবন, ভাঙা রাস্তা আর সড়কে অ্যাম্বুলেন্সের অনবরত শব্দে যেন এক ঘোরের মাঝে বাস করছেন তারা। নিজ বাড়ি ছেড়ে অনেকের ঠিকানা এখন স্থানীয় বম্ব শেলটার। এক ইসরায়েলি নাগরিক বলেন, আমার প্রথম বাড়ি এটি। ৩ দশকের বেশি সময় ধরে পরিবার নিয়ে ছিলাম। কিন্তু এমনটা কেন করলো? আমার বাড়ি কেন ধ্বংস করে দিলো? আমরা কী করেছি? আমি এখনও একবারের জন্যও কাঁদিনি। অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছি। ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ইরানের মিসাইল ওয়েভের সাথে যুক্ত হয়েছে নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির ওয়েভ। তেহরান-তেলআবিবের মাত্র ৪ দিনের হামলার জেরে পাগলপ্রায় ইসরায়েলিরা দ্বারস্থ হচ্ছেন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। দিনে-রাতে ইমোশনাল সাপোর্ট হটলাইনে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ফোনকল গিয়েছে। লাগাতার ফোন বেজে চলেছে স্থানীয় মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও। জনগণের সুবিধার্থে ২৪ ঘণ্টা এসব কেন্দ্রের কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হামলায় আক্রান্ত এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের অতিরিক্ত খোঁজখবর নিচ্ছে প্রশাসন। শুধু তাই নয় দুর্যোগের মাঝেই জুম মিটিং এ মানসিক চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। পুরো সেবাই দেয়া হবে বিনামূল্যে! পিটিএসডি বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস সিন্ড্রোম এর প্রভাব থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতেই নেয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ। আরেক ইসরায়েলি বলেন, এভাবে চলতে পারে না। পুরো ব্যাপারটার একটা শেষ হওয়া উচিত। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ইরানসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে এমন অস্থিরতা আর না। ইরান-ইসরায়েলি সংঘাতে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১৯ ইসরায়েলি। আহত আরও বহু মানুষ।

মোসাদের গুপ্তচরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল ইরান
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করার অভিযোগে ইরান ‘ইসমাইল ফিকরি’ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। সোমবার (১৬ জুন) এ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। ইরানের বিচার বিভাগের সংবাদমাধ্যম ‘মিজান অনলাইন’ জানায়, দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ফিকরির বিরুদ্ধে মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসমাইল ফিকরি ইরানের ‘শত্রু’ রাষ্ট্রগুলোর কাছে গোপন ও সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ করেছিলেন। তদন্তে জানা গেছে, তিনি মোসাদের দুটি কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছিলেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ফিকরিকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয়। মিজান অনলাইন আরও জানিয়েছে, এই মৃত্যুদণ্ড মোসাদের গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য একটি ‘গুরুতর ধাক্কা’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মার্কিন দূতাবাস ভবন ক্ষতিগ্রস্ত
তেল আবিবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মার্কিন দূতাবাসের একটি শাখা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এ তথ্য জানিয়েছেন। খবরআল জাজিরা সোমবার (১৬ জুন) এক্স পোস্টে তিনি বলেন, জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস এবং কনস্যুলেট আজ বন্ধ থাকবে। কারণ ইরানের হামলায় তেল আবিতে অবস্থিত দূতাবাসের একটি শাখা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলির জন্য নিরাপদ আশ্রয়ও খোলা রাখা রয়েছে। তিনি আরও বলন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কোনো মার্কিন কর্মকর্তা আহত হয়নি। আজ সকালে নতুন করে কেন্দ্রীয় ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এতে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় পাঁচ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ওই অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়েগত শুক্রবার থেকে আজ সোমবারপর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে। ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়,মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী। এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে,বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া,তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। রোববারইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়। সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে। ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে। সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজের বরাতে বিবিসিজানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’ তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল সরকার জানিয়েছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাতজনের অবস্থা গুরুতর।

ড্রোন, মিসাইলে ইসরায়েলের আকাশ দখলে নিচ্ছে ইরান, তেল আবিবে আতঙ্ক
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আবারও ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান, যা ইসরায়েলের হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে। গতাকাল রোববার (১৫ জুন) রাত থেকে এই নতুন হামলার ধাক্কায় ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খবর ইরনার। ইসরায়েলি সেন্সরশিপ কঠোর থাকা সত্ত্বেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার ভিডিওচিত্র। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমসের একটি স্থাপনা এবং বেঞ্জুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর কিছু সময় পরই ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে। তারা জানিয়েছে, এই হামলা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান ‘শাস্তিমূলক প্রতিরোধ অভিযানের’ অংশ। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসির গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার দুই সহকর্মী হাসান মোহাক্কেক ও মোহসেন বাকেরি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আইআরজিসি। তারা বলছে, এ ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলের গোয়েন্দা কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করে আঘাত হানা হচ্ছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম আরও জানায়, ইয়েমেন থেকেও দখলকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৩ জুন ভোরে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরানসহ কয়েকটি শহরে ভয়াবহ হামলা চালায়। আবাসিক এলাকায় হামলায় নিহত হন অনেক সাধারণ মানুষ এবং ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারাও প্রাণ হারান। ঘটনার পরপরই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি নতুন সামরিক কমান্ডার নিয়োগ দেন এবং বলেন, “ইসরায়েলের জন্য দিনগুলো অন্ধকার হতে চলেছে।” তার বক্তব্যের পরপরই ইরান তেল আবিব, জেরুজালেম ও হাইফাসহ ইসরায়েলের প্রধান শহরগুলোতে পাল্টা হামলা চালায়। ইসরায়েলি নাগরিকদের অনেকে এখন বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে পুরো দিন কাটাচ্ছেন, ফলে জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যতদিন প্রয়োজন এই প্রতিরোধমূলক অভিযান চলবে। যুদ্ধ বন্ধের কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।

খামেনি তেহরানের বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পরপরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনিকে রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লাভিজান এলাকায় অবস্থিত একটি গোপন বাঙ্কারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুটি নির্ভরযোগ্য ইরানি সূত্রের বরাতে এমনটাই দাবি করেছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, খামেনির পরিবারের সব সদস্যও তার সঙ্গে রয়েছেন বাঙ্কারটিতে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এর আগেও গত বছরের এপ্রিল ও অক্টোবরে ইসরায়েলে ইরানের হামলার পর তিনি একই বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েল প্রথম রাতেই খামেনিকে হত্যা করতে পারত, কিন্তু তারা তা না করে তাকে চূড়ান্ত একবারের জন্য সুযোগ দিয়েছে যেন তিনি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করেন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে এই তথ্য জানানো হয়। ইসরায়েল মনে করছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। খামেনি এই কর্মসূচির মূল পরিকল্পনাকারী ও পৃষ্ঠপোষক। এর আগেও ইসরায়েল ইরানের শীর্ষ সামরিক ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের টার্গেট করেছে। লাভিজান এলাকা দীর্ঘদিন ধরে সামরিক স্থাপনা ও গোপন গবেষণাগারের কারণে আলোচিত। এই খবরে আবারও স্পষ্ট হলো—চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাত শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা ছড়িয়ে পড়ছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে। খামেনিকে উদ্দেশ্য করে ইসরায়েলের এমন কৌশল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

আইআরজিসি'র সদরদপ্তরে ইসরায়েলি হামলা
ইরানের অভিজাত রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সদরদপ্তরে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সোমবার (১৬ জুন) ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, তারা তেহরানে আইআরজিসি' সদরদপ্তরে হামলা চালিয়েছে। খবর ইরান ইন্টারন্যাশনাল ও সিএনএনের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, এই সদরদপ্তরগুলোতে আইআরজিসির কর্মীরা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রক্সি শাখাগুলোর মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিকল্পনা করেছিল। তবে ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসির সদরদপ্তরে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে- সেই সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। এর আগে গত শুক্রবার ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসি'র কমান্ডার-ইন-চিফ হোসেইন সালামি নিহত হন। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসির গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানও নিহত হয়েছেন। আইআরজিসির নিহত গোয়েন্দাপ্রধানের নাম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি। রোববার ইসরায়েলি হামলায় তিনি নিহত হন।

বিচার ও সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার বিএনপির
লন্ডনে গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের সময় ছাড়াও জুলাই গণহত্যার বিচার ও সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের শাসনামলের অনিয়ম, গুম, খুন, অর্থ পাচার– এসব কিছুর বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছে বিএনপি। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছে দলটি। বৈঠক সূত্র সমকালকে জানায়, বৈঠকের প্রথমার্ধে উভয় পক্ষের প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে এবং পরে একান্ত বৈঠকেও বিচার ও সংস্কারের বিষয়ে বিস্তারিত মতামত উঠে আসে। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার যেসব সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলোকে দলের পক্ষ থেকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সব রকম সহায়তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঐকমত্য কমিশনকেও গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তাদের কাছে মতামত ও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সামনের বৈঠকগুলোতে অমীমাংসিত বিষয়ে আরও খোলামেলা আলোচনা হবে। বিএনপি জানায়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব সংস্কার এই সরকার এখনই করতে পারবে, তা তারা করবে। আর যেগুলো বাকি থাকবে, তা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার অব্যাহত রাখবে। বিচারের বিষয়ে বিএনপি জানিয়েছে, আলটিমেটাম দিয়ে কিংবা সময় নির্ধারণ করে বিচার করা হলে তাতে বিতর্ক সৃষ্টি হবে এবং স্বাধীন বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ বলে গণ্য হবে। এ জন্য বিচারকে বিচার বিভাগের হাতে ন্যস্ত করাটাই যুক্তিযুক্ত। তবে বিচার প্রক্রিয়া যাতে ত্বরান্বিত করা যায়, সে জন্য ট্রাইব্যুনালকে আরও সহায়তা দিতে পারলে ভালো হবে। প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল সংখ্যা আরও বাড়ানো যেতে পারে, লোকবল বাড়ানো যেতে পারে বলে মত দেয় বিএনপি। বিএনপি মনেকরে, এই সরকারের আমলে বিচার প্রক্রিয়াকে দৃশ্যমান করার সব আয়োজন করতে পারলে অন্তত কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। লন্ডন বৈঠকের প্রথমার্ধে উপস্থিত থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির সমকালকে জানান, নির্বাচনের সময় ঠিক করাই আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে সত্য। তবে সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে। বিএনপির এ নেতা বলেন, একান্ত বৈঠকেও এ বিষয়ে ড. ইউনূসকে আশ্বস্ত করেছেন তারেক রহমান। বলা হয়েছে, সংস্কার নিয়ে সামনে আরও আলোচনা হবে। সেখানে যেটি ভালো মনে করা হবে, সেটিই বিএনপি গ্রহণ করবে। লন্ডন বৈঠকের প্রথম ভাগে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিচারের প্রশ্নে কোনো আপস নয়। বিচার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিএনপির পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে বিচার সম্পন্ন করা হবে। আওয়ামী আমলের সব অপকর্মের বিচারের পাশাপাশি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের হত্যার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়ে আলোচনার সূত্র ধরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ে দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তা ছাড়া বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির আন্তরিকতারই প্রমাণ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে, সেসবের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যতটুকু সম্পন্ন করা যায়, তাতে বিএনপির সমর্থন থাকবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।’ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয় কিংবা নির্বাচন হয়ে গেলে সংস্কার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে– লন্ডন বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ ধরনের বিতর্কের অবসান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।

আকাশপথে ইরানকে সহায়তা করছে চীন-রাশিয়া!
তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যে চলমান তীব্র সংঘাতের মধ্যে চীন ও রাশিয়া ইরানকে ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিমান চালান পরিবহণে সহায়তা করছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম চ্যানেল ফোরটিন। বেইজিং ও মস্কো উভয়ই ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই শনিবার (১৪ জুন) ইরানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন এবং তেহরানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি বেইজিংয়ের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে চীনের এই শীর্ষ কূটনীতিক এও বলেছেন যে, ইরানের পরমাণু ইস্যু সমাধানের কূটনৈতিক উপায় এখনো শেষ হয়ে যায়নি এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা রয়ে গেছে। ইরানের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইসরায়েলি মিডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৬ জুন যুক্তরাষ্ট্র দশজন ব্যক্তি এবং সাতটি প্রতিষ্ঠানের ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ইরানের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত। এগুলোর মধ্যে হংকং-ভিত্তিক হিরো কম্পেনিয়ন লিমিটেড, প্লজকম লিমিটেড এবং কিনলার ট্রেডিং লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের খবর অনুযায়ী, ইরান চীন থেকে হাজার হাজার টন ব্যালিস্টিক মিসাইলের উপাদান অর্ডার করেছে। লেনদেনের সঙ্গে পরিচিত সূত্রকে উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি দাবি করেছিল, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচির ভবিষ্যৎ আলোচনা করার সময় 'সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠন' করতে চাইছে। চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপট গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ভোরে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি ও ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামিসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিশোধের হুমকি দেওয়া হয় এবং পরে ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা করা হয়। এরপর থেকে দুই পক্ষই একে অপরের ওপরে হামলা অব্যাহত রেখেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের তীব্রতা বাড়িয়ে চলেছে।

নেতানিয়াহুর বাড়ি লক্ষ্য করে ৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ল ইরান
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাড়ি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। রোববার (১৫ জুন) বাড়িটি লক্ষ্য করে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেইকোনোমিক টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলে ৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইরান। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাড়ি লক্ষ্যবস্তু করে এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া, ইরান সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ইসরাইলে নতুন করে ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আলজাজিরাসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার (১৫ জুন) সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীও নতুন এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা জারি করে নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ইরানের হামলায় হাইফা শহরে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা ইরনাসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের দিকে ‘নতুন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা’ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। রোববার ইরান ইসরাইলের ওপর নতুন আক্রমণ শুরু করেছে। নতুন করে ইরানের হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, কিছুক্ষণ আগে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। নাগরিকদের সুরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সেখানে থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।