বিচার ও সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার বিএনপির


fiytiytfiyt.jpg

লন্ডনে গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের সময় ছাড়াও জুলাই গণহত্যার বিচার ও সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের শাসনামলের অনিয়ম, গুম, খুন, অর্থ পাচার– এসব কিছুর বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছে বিএনপি। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছে দলটি। 

বৈঠক সূত্র সমকালকে জানায়, বৈঠকের প্রথমার্ধে উভয় পক্ষের প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে এবং পরে একান্ত বৈঠকেও বিচার ও সংস্কারের বিষয়ে বিস্তারিত মতামত উঠে আসে। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার যেসব সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলোকে দলের পক্ষ থেকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সব রকম সহায়তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঐকমত্য কমিশনকেও গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তাদের কাছে মতামত ও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সামনের বৈঠকগুলোতে অমীমাংসিত বিষয়ে আরও খোলামেলা আলোচনা হবে। 

 
 

বিএনপি জানায়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব সংস্কার এই সরকার এখনই করতে পারবে, তা তারা করবে। আর যেগুলো বাকি থাকবে, তা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার অব্যাহত রাখবে।

বিচারের বিষয়ে বিএনপি জানিয়েছে, আলটিমেটাম দিয়ে কিংবা সময় নির্ধারণ করে বিচার করা হলে তাতে বিতর্ক সৃষ্টি হবে এবং স্বাধীন বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ বলে গণ্য হবে। এ জন্য বিচারকে বিচার বিভাগের হাতে ন্যস্ত করাটাই যুক্তিযুক্ত। তবে বিচার প্রক্রিয়া যাতে ত্বরান্বিত করা যায়, সে জন্য ট্রাইব্যুনালকে আরও সহায়তা দিতে পারলে ভালো হবে। প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল সংখ্যা আরও বাড়ানো যেতে পারে, লোকবল বাড়ানো যেতে পারে বলে মত দেয় বিএনপি। বিএনপি মনে করে, এই সরকারের আমলে বিচার প্রক্রিয়াকে দৃশ্যমান করার সব আয়োজন করতে পারলে অন্তত কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। 

লন্ডন বৈঠকের প্রথমার্ধে উপস্থিত থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির সমকালকে জানান, নির্বাচনের সময় ঠিক করাই আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে সত্য। তবে সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে। 

বিএনপির এ নেতা বলেন, একান্ত বৈঠকেও এ বিষয়ে ড. ইউনূসকে আশ্বস্ত করেছেন তারেক রহমান। বলা হয়েছে, সংস্কার নিয়ে সামনে আরও আলোচনা হবে। সেখানে যেটি ভালো মনে করা হবে, সেটিই বিএনপি গ্রহণ করবে।

লন্ডন বৈঠকের প্রথম ভাগে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিচারের প্রশ্নে কোনো আপস নয়। বিচার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিএনপির পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে বিচার সম্পন্ন করা হবে। আওয়ামী আমলের সব অপকর্মের বিচারের পাশাপাশি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের হত্যার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’

সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়ে আলোচনার সূত্র ধরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ে দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তা ছাড়া বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির আন্তরিকতারই প্রমাণ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে, সেসবের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যতটুকু সম্পন্ন করা যায়, তাতে বিএনপির সমর্থন থাকবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।’ 

সংস্কারের আগে নির্বাচন নয় কিংবা নির্বাচন হয়ে গেলে সংস্কার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে– লন্ডন বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ ধরনের বিতর্কের অবসান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। 

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×