লিবিয়ায় ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী: আইওএম-এর রিপোর্ট


লিবিয়ায় ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী: আইওএম-এর রিপোর্ট

উত্তর আফ্রিকার সংঘাতপূর্ণ দেশ লিবিয়ায় বসবাস করছেন ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) তাদের সদ্য প্রকাশিত ৫৭তম ‘ডিসপ্লেসমেন্ট ট্র্যাকিং ম্যাট্রিক্স (ডিটিএম)’ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরেছে।

চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এই রিপোর্ট প্রকাশ পায় সোমবার। এতে দেখা যায়, বর্তমানে লিবিয়ায় মোট ৮ লাখ ৬৭ হাজার অভিবাসী রয়েছেন, যারা বিশ্বের ৪৪টি দেশ থেকে এসেছেন। এই পরিসংখ্যানে বাংলাদেশিদের অবস্থান সপ্তম, যা লিবিয়ার মোট অভিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রায় দুই শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছেন ত্রিপোলি ও বেনগাজির মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে। আইওএম জানায়, এসব অভিবাসীর বেশিরভাগই পুরুষ এবং তারা নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতা এবং বিভিন্ন কারখানায় স্বল্প মজুরির চাকরিতে নিযুক্ত। অনেক সময় অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে হয় তাদের।

আইওএম-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের অভিবাসীরা মূলত আর্থিক সংকট ও বেকারত্বের কারণে দেশ ত্যাগ করেছেন। তাদের অনেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছান এবং যাত্রাপথে এজেন্টদের মাধ্যমে ভ্রমণ করতে গড়ে ৪ হাজার ৪১৪ মার্কিন ডলার ব্যয় করেন। এই ব্যয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের তুলনায় সর্বোচ্চ।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, লিবিয়ায় থাকা অভিবাসীদের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা থেকে বঞ্চিত। প্রায় ৭৫ শতাংশ অভিবাসী কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা পান না। যেসব অভিভাবকের সন্তান রয়েছে, তাদের অর্ধেকের বেশি জানিয়েছেন, তাদের সন্তানরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

নারী অভিবাসীরা বিশেষভাবে দুর্ভোগের শিকার। তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এ হার ২০ শতাংশ। অনেক নারী শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও জানায় আইওএম।

লিবিয়ায় অভিবাসীদের মধ্যে সংখ্যাগতভাবে এগিয়ে আছে সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলো। আইওএম জানায়, “সাব-সাহারা আফ্রিকা, মিসর, চাদ এবং নাইজার থেকে আসা অভিবাসীরা লিবিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও বাংলাদেশ হচ্ছে গুটিকয়েক এশীয় দেশের একটি, যাদের নাগরিকদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।” বাংলাদেশ ছাড়াও সিরিয়া, পাকিস্তান ও ফিলিস্তিনের অভিবাসীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে দেশটিতে।

অভিবাসীর সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে আছে সুদান, যেখান থেকে এসেছে প্রায় ২ লাখ ৮২ হাজার মানুষ, যা মোট অভিবাসীদের ৩৩ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নাইজার থেকে এসেছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৯৭ জন (২২ শতাংশ), এবং তৃতীয় স্থানে থাকা মিসর থেকে এসেছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮০ জন (১৯ শতাংশ)।

এরপর চাদ থেকে এসেছে ৮৫ হাজার ৪৭৪ জন (১০ শতাংশ), নাইজেরিয়া থেকে ২৯ হাজার ৩৮৩ জন (৩ শতাংশ), সিরিয়া থেকে ২৩ হাজার ৭৩২ জন (৩ শতাংশ), এবং বাংলাদেশ থেকে ২০ হাজার ৪১১ জন অভিবাসী।

ঘানা ও মালি যথাক্রমে ১২ হাজার ৭৬৭ এবং ১২ হাজার ২৪৮ অভিবাসীর মাধ্যমে তালিকায় অষ্টম ও নবম স্থানে রয়েছে। দশম অবস্থানে থাকা ফিলিস্তিন থেকে এসেছে ৬ হাজার ৫৬৫ জন।

লিবিয়া মূলত ইউরোপগামী অভিবাসীদের জন্য একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেকেই লিবিয়া হয়ে ইউরোপে পৌঁছাতে চান, কেউ কেউ সেখানে স্থায়ী হওয়ার চিন্তা করেন আবার কেউ নিজ দেশে ফিরে যেতে চান, যদিও বাস্তব পরিস্থিতির কারণে তা সবসময় সম্ভব হয় না।

সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×