বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে অভিযোগ এস আলমের
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৫:৩৭ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
আলোচিত এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। তার অভিযোগ, বিদেশে অবৈধভাবে পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধার চেষ্টার কারণে তার পরিবারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘শত শত কোটি টাকা’ ক্ষতির মুখে পড়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, সোমবার ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্র (ICSID)-এ এই সালিশি আবেদন জমা দেন এস আলম ও তার পরিবারের আইনজীবীরা।
আবেদনে তারা অভিযোগ করেছেন, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তাদের ব্যাংক হিসাব ও ব্যবসায়িক সম্পদ ‘নির্বিচারে জব্দ, বাজেয়াপ্ত ও মূল্য ধ্বংসের লক্ষ্যভিত্তিক অভিযান’ চালিয়েছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মামলা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি সম্ভাব্য বাধা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কারণ, সরকার শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বিদেশে পাচার হওয়া বিলিয়ন ডলার ফেরত আনার চেষ্টা করছে। সরকারি ‘অর্থনীতির শ্বেতপত্র’ অনুযায়ী, এ অর্থের পরিমাণ আনুমানিক ২৩৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর এই প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এস আলম পরিবার দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে এবং প্রশ্ন তুলেছেন, “অর্থটা কোথায় গেল?”
তবে এস আলম গ্রুপ এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, এর মধ্যে “কোনো সত্যতা নেই।”
গত ডিসেম্বরে পরিবারের পক্ষে কাজ করা আইনজীবীরা সতর্ক করেছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা না হলে তারা আন্তর্জাতিক সালিশি মামলা করবেন।
সালিশি আবেদনে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইন সংস্থা কুইন ইমানুয়েল আরকহার্ট অ্যান্ড সুলিভান এর আইনজীবীরা উল্লেখ করেছেন, সরকার তাদের ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দ করেছে, ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে ‘ভিত্তিহীন’ তদন্ত চালিয়েছে এবং পরিবারকে লক্ষ্য করে ‘উসকানিমূলক প্রচার অভিযান’ চালিয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, এই কর্মকাণ্ডের ফলে ‘শত শত কোটি ডলারের সমপরিমাণ বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি’ হয়েছে। তবে ক্ষতিপূরণের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ সেখানে উল্লেখ করা হয়নি।
এস আলম পরিবারের সালিশি আবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, “বিষয়টি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে পৌঁছাবে, তখন আমরা যথাযথ মাধ্যমে জবাব দেব।” প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এই মামলা ২০০৪ সালে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় দায়ের করা হয়েছে। আইনি নথি অনুযায়ী, এস আলম পরিবারের সদস্যরা ২০২০ সালে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন এবং বর্তমানে সেখানেই বসবাস করছেন।
এর আগে পরিবার যুক্তি দেখিয়েছে, যেহেতু তারা সিঙ্গাপুরের নাগরিক, তাই ১৯৮০ সালের বৈদেশিক বেসরকারি বিনিয়োগ আইনে প্রদত্ত সুরক্ষা তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
অন্যদিকে, আইএমএফ-এর সাবেক কর্মকর্তা আহসান মনসুর অভিযোগ করেছেন, সাইফুল আলম ও পরিবার দেশের শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় জোরপূর্বক ব্যাংক দখল করে অর্থ পাচার করেছে। তিনি বলেন, “আমরা বিপুল প্রমাণ পেয়েছি যা দেখায় তারা কত সম্পদ সরিয়ে নিয়েছে। এখন আমাদের সেই ব্যাংকগুলো নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে, যেগুলোর নিট সম্পদ ঋণাত্মক অবস্থায় আছে।”
তবে সালিশি আবেদনে পরিবার যুক্তি দেখিয়েছে, সরকার এখনও তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। চলতি বছরের শুরুতে মনসুর বলেছিলেন, যারা বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।