আদানির চাপে নতজানু বিপিডিবি

জুনেই পরিশোধ করল ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার


February 4 2025/5_bYOoLBX.jpg

সরকারের কাছ থেকে চলতি সপ্তাহে ভর্তুকির ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পেয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সেখানে আদানি পাওয়ারকে বকেয়া হিসেবেই পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বা ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

সরকারের কাছ থেকে চলতি সপ্তাহে ভর্তুকির ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পেয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সেখানে আদানি পাওয়ারকে বকেয়া হিসেবেই পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বা ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। অথচ ভারতের এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে করা চুক্তির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও তার সমাধান হয়নি এখনো। উল্টো নানা চাপ দিয়ে আওয়ামী লীগ আমলের চেয়ে বেশি অর্থ আদায় করে নিচ্ছে আদানি।

বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ বিপিডিবির কাছে আদানি পাওয়ারের বিপুল পরিমাণ পাওনা বকেয়া পড়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। তখন যা পরিশোধ করা হতো প্রতি মাসে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার চেয়ে তিন-চার গুণ আদায় করছে আদানি।

আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিশেষ আইনের আওতায় করা সে চুক্তি বাতিলের জোর দাবি ওঠে। এমনকি ক্রয়চুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটও করা হয়। আদানিসহ ১১ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে ক্রয়চুক্তি খতিয়ে দেখতে গত বছরের অক্টোবরে জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এ কমিটি এরই মধ্যে এসব চুক্তি পর্যালোচনার জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করেছে। এ কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায়ই বাড়ানো হয়েছে আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় ও বিল পরিশোধ। মেনে নেয়া হচ্ছে একের পর এক তাদের শর্তগুলোও। বিপিডিবির তথ্যমতে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিপিডিবির কাছে আদানি পাওয়ারের মোট বকেয়া দাঁড়ায় ৭০ কোটি ডলারে। যদিও আদানির দাবি, প্রকৃত বকেয়ার পরিমাণ ৯০ কোটি ডলার। কয়লার উচ্চমূল্য নিয়ে জটিলতার কারণেই মূলত এ ব্যবধান।

আদানির সঙ্গে বিপিডিবির বিল বকেয়া নিয়ে চিঠি চালাচালি বিগত বছরের শুরু থেকেই। বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আদানির শীর্ষ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বাংলাদেশ সফর করেছেন। এমনকি বকেয়া বিলের কারণে কখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়া, কখনো কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার মতো হুমকিও এসেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে বকেয়া বিল পরিশোধের ওপর ছাড় দেয়ার মতো অফারও দিয়েছে আদানি গ্রুপ। এখন পর্যন্ত নিয়মিত বিল পরিশোধ বাড়লেও বকেয়া বিলের সংখ্যা নিয়ে আদানি ও বিপিডিবির মধ্যে বড় ধরনের কোনো নিষ্পত্তি হয়নি।

ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানি পাওয়ারের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি করেছে বিপিডিবি। তবে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মতবিরোধ চলছে বিপিডিবি ও আদানির মধ্যে। আদানি যে মূল্য কাঠামো অনুসরণ করছে, সেখানে আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিতিশীল সূচকের ওপরের অতিরিক্ত নির্ভরতা আছে। আবার পরিবহন ব্যয়ও অনেক বেশি ধরার অভিযোগ।

জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বিপিডিবি ও আদানি পাওয়ারের কর্মকর্তাদের মধ্যে গত সোমবার এক ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সেখানে কয়লার বিতর্কিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয় আদানি পাওয়ার। তার আগে বাংলাদেশকে বকেয়া বিল পরিশোধ করার শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এ বিষয়ে ওইদিনই বিপিডিবি চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠিও দেয় আদানি পাওয়ার। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বকেয়া বিল ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করা হলে বিলম্ব বিলের জরিমানা বাবদ ২০ মিলিয়ন ডলার মওকুফ করা হবে বলে ওই চিঠিতে জানায় আদানি। এর ঠিক দুই দিনের মধ্যে আদানি পাওয়ারকে বড় অংকের বকেয়া বিল পরিশোধ করা হলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘বকেয়া পরিশোধ তো করতেই হবে। এটা পরিশোধ না করলে পাহাড়সম হয়ে দাঁড়াবে। তবে যে অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে সেটি পিডিবির হিসাব অনুযায়ী। দুই পক্ষের দুই ধরনের হিসাব রয়েছে। তারা যেটা দাবি করেছে, সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। একটা মিটিং হয়েছে। সামনে এ বিষয়ে আরো মিটিং হবে। বিষয়টি সামগ্রিক বিবেচনায় দুপক্ষের আপসে যদি কমিয়ে আনা যায় তাহলে বিপিডিবির ওপর থেকে আর্থিক চাপ কমবে। তবে এখন পর্যন্ত দুপক্ষই তাদের হিসাবের পক্ষে অনড়।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×