
নসরুল হামিদের ৩৬ কোটি টাকার সম্পদ, অস্বাভাবিক লেনদেন ৩১৮১ কোটি
৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ৯৮ ব্যাংক হিসাবে তিন হাজার ১৮১ কোটি ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ওরফে নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার এজাহার বলা হয়, ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল পদে থেকে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫৭ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। অন্যদিকে, নিজ নামে ৯৮টি ব্যাংক হিসাবে মোট তিন হাজার ১৮১ কোটি ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩১৩ টাকা জমা ও অধিকাংশ টাকাই উত্তোলনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। যা মানি লন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ হিসাবেই দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।’ সব মিলিয়ে দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন করার উদ্দেশ্যে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’-এর ২৭ (১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’-এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। গেল ২২ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ওই দিন তার প্রতিষ্ঠান হামিদ গ্রুপে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী এ অভিযান চালায়। এ সময় ‘প্রিয় প্রাঙ্গণ’ নামে ভবনের ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি ভল্টে থাকা নগদ অর্থ ও বৈদেশিক মুদ্রা (প্রায় দশ লাখ টাকা ও ২০০ তুর্কি মুদ্রা) এবং অস্ত্র-গুলিসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করা হয়। অন্যদিকে, গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আত্মগোপনে আছেন নসরুল হামিদ।

আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার লাশে আগুন: সেই কনস্টেবল মুকুল কারাগারে
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাভারের আশুলিয়ায় নিহত ছয়জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ কনস্টেবল মো. মুকুল চকদারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার পর বিচারপতি মো. গোলাম মোর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আদালত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ২৬ জানুয়ারি এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। এদিন দুপুর পৌনে বারোটায় আদালতের কাঠগোড়ায় আনা হয় আসামি মুকুলকে। শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম মো. মকবুল চাকদারকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। এরপর আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই মামলায় আসামির কী সম্পৃক্ততা রয়েছে তা আদালতে উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় নিশ্চুপ বসেছিলেন মুকুল চকদার। পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আশুলিয়া ছয়জনকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় ইতোমধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরা এ মামলার সমস্ত বিষয় তদন্ত সংস্থাকে জানিয়েছি তারা তদন্ত করছে। ছাত্র আন্দোলনের সময় সাভারের আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় সাবেক এক এমপিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এরপরই বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে এসআই মালেককে কিশোরগঞ্জ থেকে এবং কনস্টেবল মুকুলকে নবাবগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

খুনের মামলায় এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর কারাগারে
দুই বছর আগে বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানে গুলিতে মকবুল নামের বিএনপির কর্মী নিহতের ঘটনায় করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিন দিনের রিমান্ড শেষে নজিবুর রহমানকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর এ মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর এক দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এর আগে ৭ ডিসেম্বর ডিবি পুলিশের হারুন অর রশীদ, মেহেদী হাসান ও বিপ্লব কুমার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযান চালায়। কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। কার্যালয়ের পাশে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায়। এতে মকবুল হোসেন নামে এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
.jpeg)
আশুলিয়ায় ৬ মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া বাকি চারজনই পুলিশ কর্মকর্তা বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তবে তাদের পরিচয় জানাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।তদন্ত সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। গ্রেফতার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর তাদের লাশ চ্যাংদোলা করে ভ্যানে উঠিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। যেন কেউ বুঝতে না পারে তারা লাশ পুড়িয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এখন তদন্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কিছু কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে।তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আরও কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা চাওয়া হবে।ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের।সেদিন ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশভ্যানে ছাত্র-জনতার মরদেহ পোড়ানোর অভিযোগ ওঠে। গুলি করে হত্যার পর ভ্যানগাড়িতে উঠিয়ে এরপর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়। ভ্যানে লাশ তোলার পর সেগুলো পোড়ানোর একাধিক ভিডিও প্রকাশ্যে এলে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে মানা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন, তার স্ত্রী ফারহানা সাঈদ, মা শাহানা হানিফ ও ভাই জাবেদ আহমেদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. মাসুদুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, ‘অভিযোগ সংশ্লিষ্ট শাহানা হানিফ, সাঈদ খোকন ও জাবেদ আহমেদের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবগুলোতে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।’ ‘অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার পদের অপব্যবহার করে ও রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় শাহানা হানিফ, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, জাবেদ আহমেদ ও ফারহানা সাঈদ দেশত্যাগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই, সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক।’ সোমবার দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।

নতুন মামলায় সালমান, আনিসুল ও পলককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে
আওয়ামী লীগ সরকারের গ্রেফতার সাবেক উপদেষ্টা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সেনাকর্মকর্তাসহ ৯ জনকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয়া হয়েছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে তাদেরকে আদালতে তোলা হয়। পরে নতুন বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছেন আদালত।সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে নিউ মার্কেট থানার মামলায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। যাত্রাবাড়ি থানার একই হত্যা মামলায় আরও গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল আল মামুন, সাবেক এমপি ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে।সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত জিয়াউল আহসান ও সাবেক এমপি সাদেক খানকে মোহাম্মদপুর থানার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছেন আদালত। এছাড়া, নরসিংদীর সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানকে পল্টন থানার মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল।রোববার (২২ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।এর আগে, গত ১০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল গণমাধ্যমকে বলেন, শেখ হাসিনাসহ জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় অভিযুক্ত পলাতক সব আসামিকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করতে যাচ্ছে সরকার।পরে ১২ নভেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা গণহত্যা, গুমসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এবং মামলার আসামি। তবে তিনি পালিয়ে গেছেন এবং বর্তমানে দেশের সীমানার বাইরে অবস্থান করছেন। এরকম একজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বা তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে ইন্টারপোলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।

পিলখানায় হত্যা: ট্রাইব্যুনালে হাসিনাসহ ৫৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীসহ মোট ৫৭ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দপুর দুইটার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে পিলখানা গণহত্যায় শহীদ সেনা অফিসারদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা এই অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট উদয় তাসমীর বলেন, ‘২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সামঞ্জস্যতা পেয়েছি। এর সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দোসররা জড়িত ছিলেন। শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলার জন্য এবং তার স্বৈরশাসনকে দীর্ঘ স্থায়ী করার জন্য বৃহৎ এবং শক্তিশালী বাহিনীকে ধ্বংস করতে এই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। আজ আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছি, তাদের মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা রয়েছেন। আমাদের অভিযোগ খুবই সুস্পষ্ট। দুইটি বাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলে আওয়ামি ফ্যাসিস্ট মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশপ্রেমিক এবং দক্ষ ও অফিসারদেরকে খুন করা হয়েছে। তাদের লাশে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাদের লাশকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। তাদের পরিবারকে আটক করে জিম্মি করা হয়েছে এবং লুটপাট করা হয়েছে। এসব কিছুই মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। তাই, কমিশন গঠনের মাধ্যমে এসব ঘটনার বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।’

সাবেক আইজিপিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ
জুলাই আগস্টে আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি ও ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুর ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। তাদেরকে আগামী ২৬, ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।এদিকে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানসহ ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই আদালত এ আদেশ দেন।এর আগে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানসহ ৮ কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। অন্যরা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি, মিরপুর ডিএমপির সাবেক ডিসি মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুর ইসলাম, গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল হক, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান এবং ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন।গত ২০ নভেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালকসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একসঙ্গে তাদের ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারাগারে রাখতে নির্দেশ দেন আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা: খালাস পেলেও এখনই মুক্তি মিলছে না বাবরের
চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জন আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলা থেকে খালাস পেলেও এখনই মুক্তি মিলছে না তার। কারণ, একই ঘটনায় আরেক মামলায় তার দণ্ড বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। মামলাটিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ছয় আসামির সাজা কমিয়ে দশ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পরেশ বড়ুয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে আসামি মহসীন ও এনামুলসহ পাঁচজনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান। নিজামী ও বাবরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আবদুর রহিম ও লিয়াকতের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আহসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। পলাতক আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হাসনা বেগম শুনানি করেন। নুরুল আমিনের পক্ষে আইনজীবী সাধন কুমার বণিক ও মো. মহিউদ্দিন শুনানিতে অংশ নেন। রায়ে আদালত বলেছেন, ‘লুৎফুজ্জামান বাবর, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসীন উদ্দিন তালুকদার, তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কেএম এনামুল হক ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। যে কারণে তারা অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার অধিকারী। তাদের খালাস দেওয়া হল। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানা হয়েছিল।’ হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, ‘মারা যাওয়ায় তার আপিল মেরিটে নিষ্পত্তি করে অব্যাহতি (বাদ) দেওয়া হল।’ মামলাটিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। তার বিষয়ে রায়ে আদালত বলেছেন, ‘বিচারের শুরু থেকেই তিনি পলাতক। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাই, তিনি অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার অধিকারী।’ পরেশ বড়ুয়ার যাবজ্জীবন: মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়ার মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানা হয়েছিল। তার বিষয়ে হাইকোর্ট রায়ে বলেন, ‘শুরু থেকেই তিনি পলাতক। তার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত এবং পারিপার্শ্বিকতা ও সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নিয়ে তার সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হলে ন্যায়বিচার হবে। তাই, সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল।’ ছয়জনের দশ বছর করে কারাদণ্ড: বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিকে দশ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা হলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার তৎকালীন মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, তৎকালীন পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান, শ্রমিক সরবরাহকারী দ্বীন মোহাম্মদ ও ট্রলারমালিক হাজি সোবহান। বিচারিক আদালতের রায়ে তাদের পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছিল। সেটা জরিমানা পরিবর্তন করে তাদের দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রহিমের জরিমানা কমে দশ হাজার: ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিমের মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানা হয়েছিল। তার বিষয়ে রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘মারা যাওয়ার কারণে তার আপিল অ্যাবেট (পরিসমাপ্তি) ঘোষণা করা হল। বিচারিক আদালতের দেওয়া জরিমানার আদেশ সংশোধন করে দশ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হল।’ বাবরের বিষয়ে তার আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘দশ ট্রাক-সংক্রান্ত অপর একটি মামলায় দণ্ড থাকায় এখনই বাবর কারামুক্তি পাচ্ছেন না। ওই মামলায় বাবরের করা আপিল হাইকোর্টে শুনানির জন্য রয়েছে।’ ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় দশ ট্রাক ভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুইটি মামলা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পুলিশ দুইটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে। এর বিচারও একসঙ্গে শুরু হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছায়, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্য দিকে, দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। এর আগে ওই মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), লুৎফুজ্জামান বাবর, পরেশ বড়ুয়া ও দুইটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। দণ্ডিত ১২ জন পৃথক আপিল করেন। মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর গত ৬ নভেম্বর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। ১৩তম দিনে শুনানি শেষে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স নাকচের পাশাপাশি কোন ক্ষেত্রে আপিল মঞ্জুর আবার কোন ক্ষেত্রে, আপিল নামঞ্জুর করে সাজা সংশোধন করে বুধবার রায় দেওয়া হয়।

মকবুল হত্যা মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
বিএনপিকর্মী মকবুল হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুর রহমানের আদালত রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এদিন কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় নজিবুর রহমানকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর এক দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর ডিবি পুলিশের হারুন অর রশীদ, মেহেদী হাসান ও বিপ্লব কুমার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযান চালান। কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান তারা। কার্যালয়ের পাশে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালান তারা। এতে মকবুল হোসেন নামে এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর মাহফুজুর রহমান নামে একজন বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন, যেখানে আসামি হিসেবে এজাহারভুক্ত করা হয় এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকেও।

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় লুৎফুজ্জামান বাবরকে খালাস দিলেন হাইকোর্ট
বহুল আলোচিত চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এর আগে গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। সেদিন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ কয়েকজন আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন।

এক যুগ পর দেশে ফিরছেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক
প্রখ্যাত আইনজীবী ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আগামী ২৬ ডিসেম্বর দেশে আসছেন। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) তার চেম্বারের জুনিয়র কাউন্সেল ব্যারিস্টার মাহমুদ আল মামুন হিমু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন,'সব কিছু ঠিক থাকলে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর আগামী ২৬ সে ডিসেম্বর সকালে সুপ্রিম কোর্টের সুনামধন্য আইনজীবী, আমাদের সিনিয়র দেশে আসছেন, ইনশাআল্লাহ।' জানা গেছে, তিনি সুপ্রিম কোর্টে আইনপেশায় নিয়মিত হবেন। তার দুই ছেলে ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টে আইনপেশা পরিচালনা করে আসছেন। শেখ হাসিনার শাসনামলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্টাইব্যুনালে বিচার শুরু হলে শুরু থেকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী ছিলেন। ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ইংল্যান্ডে চলে যান। এক পর্যায়ে তিনি জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেন। পরে তিনি এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হন। গত সেপ্টেম্বর মাসে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) থেকে পদত্যাগ করেন দলটির প্রধান উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

কোর্ট থেকে লাথি মেরে চিফ জাস্টিসকে বের করে দিয়েছিল ডিজিএফআই
কোর্টে এসে লাথি মেরে এক চিফ জাস্টিসকে বের করে দিয়েছিল ডিজিএফআই; এটা কি তাদের কাজ? দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার শুনানিতে এমন প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকালে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শুনানিতে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বিচারপতি মোস্তফা জামার ইসলামের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ। ব্রিগেডিয়ার (জেনারেল অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর পক্ষে যখন যুক্তিতর্ক তুলে ধরছিলেন তার আইনজীবী, তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘ডিজিএফআই এসব কি করে। এটা কি ধরনের কাজ।’ কাল চূড়ান্ত যুক্তি তর্ক শেষ করে সময় পেলে রায় দেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। বহুল আলোচিত চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। এর আগে গেল ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। সেদিন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ কয়েকজন আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় দশ ট্রাক ভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুইটি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুইটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্য দিকে, কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে, গত ৫ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। ২৩ কার্যদিবস শুনানি শেষে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করা হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন, রিটকারী সুজনের বদিউল আলমের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান, চার আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী, ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলে বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার পক্ষভুক্ত হন। এরপর ইনসানিয়াত বিপ্লব, গণফোরাম, চার আবেদনকারী রুলে ইন্টারভেনর হিসেবে পক্ষভুক্ত হন। গত ১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সে সময় বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।

সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার মামলায় গ্রেফতার আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ মোট ১৬ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় প্রিজন ভ্যানে করে দ্বিতীয়বারের মতো তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। বিভিন্ন কারাগার থেকে সাবেক এসব মন্ত্রী, উপদেষ্টা, আমলা, বিচারপতি ও রাজনীতিবিদদের আদালতে আনা হয়। এর মধ্যে গোলাম দস্তগীর গাজীকে আনা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে। এর আগে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত শেষ করে আজ ১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের কথা রয়েছে। এই মামলাতেই তাদেরকে হাজির করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ড. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, আব্দুর রাজ্জাক, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও সচিব জাহাংগীর আলম, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু এবং কামরুল ইসলাম। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগে গত ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতার পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ২৭ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১০ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও সাবেক এক সচিবসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ১৮ নভেম্বর সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের রায় ঘোষণা শুরু
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের রায় ঘোষণা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটের দিকে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা শুরু করেন। এর আগে, গত ৫ ডিসেম্বর এই রুলের রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। ২৩ কার্যদিবস শুনানি শেষে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করা হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন, রিটকারী সুজনের বদিউল আলমের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান, চার আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী, ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলে বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার পক্ষভুক্ত হন। এরপর ইনসানিয়াত বিপ্লব, গণফোরাম, চার আবেদনকারী রুলে ইন্টারভেনর হিসেবে পক্ষভুক্ত হন। গত ১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সে সময় বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রিভা দুই দিনের রিমান্ডে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার (৩২) দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মাসুদ সরদার। আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়ের পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেয়। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে ক্যাম্পাস ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান রিভা। এরপর তাকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি। বিভিন্ন সময়ে ‘বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের’ জন্য আলোচিত রিভা ইডেন কলেজের মার্কেটিং বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর আগে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নিশীতা ইকবাল নদীকে গ্রেফতার করে ডিবি। কলাগান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলায় তাকে দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের আয়কর নথি জব্দের আদেশ
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম আসাদুজ্জামান খানের আয়কর নথি জব্দের আদেশ চেয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সালাউদ্দিন ইস্কান্দার কিং শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান ও কন্যা সাফিয়া তাসনিম খানসহ দশজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের আসাদুজ্জামান খান কামালসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা করেন। তাদের বিরুদ্ধে মোট ৭৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার পর গত ৪ নভেম্বর আসাদুজ্জামান খান কামালের নয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেন আদালত। এতে ১২ কোটি ১১ লাখ ৯৪ হাজার ১৮০ টাকা রয়েছে। আসাদুজ্জামান খান কামাল ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ঢাকা-১১ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৃতীয় বারের মত সাংসদ নির্বাচিত হন এবং পুনরায় শপথ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে ভারত চলে যান। পরে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিলে আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংসদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ হারান। এরপর থেকে তিনি অজ্ঞাতস্থানে আত্মগোপনে আছেন।

স্থগিত হল শমী কায়সারের জামিন
ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানায় জুলাই-আগস্টের ঘটনায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় ই-কর্মাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক সভাপতি ও অভিনেত্রী শমী কায়সারকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। একই সাথে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আগামী ৬ জানুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) এ আদেশ দেন। এ মামলায় রোববার (৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন তিনি। গত ৫ নভেম্বর শমী কায়সারকে উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেফার করে পুলিশ। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ নামের এক ব্যবসায়ীসহ অন্যরা কর্মসূচিতে অংশ নেন। উত্তরা পূর্ব থানাধীন চার নম্বর সেক্টরের আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাই স্কুলের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ হামলা চালায় ও গুলিবর্ষণ করে। এ সময় ইশতিয়াকের পেটে গুলি লাগে। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।’ এ ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইশতিয়াক মাহমুদ বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১২৬ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় শমী কায়সার ২৪ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি। ৯০ দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সার শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সার এবং ঔপন্যাসিক ও সাবেক সাংসদ পান্না কায়সারের সন্তান। শমী কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের দমনপীড়ন চলাকালে সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তুমুল সমালোচিত হন।

গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ১০ বছরের খালাসের রায় বহাল
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এ বিষয়ে মামুনের আপিল মঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের আইনজীবী সাব্বির হামজা চৌধুরী বলেন, এক এগারোর সময় এ মামলা দায়ের করা হয়। বিচারিক আদালত ১০ বছরের সাজা দেন। পরে হাইকোর্ট খালাস দেন। এর বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগ মামলাটি পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। পুনরায় শুনানির আদেশের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন মামুন রিভিউ করেন। সেই রিভিউ আদালত মঞ্জুর করেন। এরপর তিনি আপিল করেন। আজ সেই আপিল মঞ্জুর করেছেন। ফলে হাইকোর্টের খালাসের রায় বহাল। ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় একই সালের ৮ মে দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলা করেন। মামলায় মামুনের বিরুদ্ধে ১০১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ বিচারিক আদালত মামুনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চে ২০১২ সালের ৩০ জুলাই খালাস পান মামুন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে পরে লিভ টু আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর হাইকোর্টের খালাসের রায় বাতিল করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে মামলার পুনরায় আপিল শুনানির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের ওই আদেশ রিভিউ চেয়ে গিয়াস উদ্দিন মামুন আবেদন করেন। আপিল বিভাগ তার রিভিউ মঞ্জুর করলে তিনি আপিল করেন। আজ সেই আপিল মঞ্জুর করা হয়।

আরও এক মামলা থেকে খালাস পেলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। রায়ের পর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় দেন। গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পক্ষে শুনানি করেন ফিদা এম কামাল, আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আসিফ হোসেন। ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের নোটিশের প্রেক্ষিতে সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় একই সালের ৮ মে দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলা করে। মামলায় মামুনের বিরুদ্ধে ১০১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩’শ ৬৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ বিচারিক আদালত মামুনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ ২০১২ সালের ৩০ জুলাই খালাস পায় মামুন। পরে এ মামলায় আপিল বিভাগে যায় দুদক। এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর অর্থপাচারের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলা থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে খালাস দেয় হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে মামুনের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারি যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন। পরে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দিন তিনি কারাগার থেকে জামিনে বের হন।

শমী কায়সারের জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানায় করা মামলায় অভিনেত্রী শমী কায়সারকে তিন মাসের জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এবার তার জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এ আবেদন করেছেন। আজই এর শুনানি হতে পারে। এর আগে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এদিন আদালতে শমী কায়সারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম হামিদুল মেজবাহ।রোববার (৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় উত্তরা পূর্ব থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন ই-কর্মাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক সভাপতি ও অভিনেত্রী শমী কায়সার।গত ৫ নভেম্বর দিবাগত রাতে উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের ছয় নম্বর রোডের ৫৩ নম্বর বাসা থেকে শমী কায়সারকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। গত ৯ নভেম্বর শমী কায়সারকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠান আদালত।জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ নামে এক ব্যবসায়ীসহ অন্যরা কর্মসূচিতে অংশ নেন। উত্তরা পূর্ব থানাধীন চার নম্বর সেক্টরের আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাই স্কুলের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ হামলা চালায় ও গুলিবর্ষণ করে। এ সময় ইশতিয়াকের পেটে গুলি লাগে। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।এ ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইশতিয়াক মাহমুদ বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১২৬ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় শমী কায়সার ২৪ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি। রিমান্ড শেষে শমী কায়সারকে ৯ নভেম্বর কারাগারে পাঠান ঢাকার আদালত।

পিরোজপুরে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা থেকে খালাস পেলেন তারেক রহমান
পিরোজপুর জেলার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে পিরোজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হেলাল উদ্দিন এ আদেশ দেন।দায়ের হওয়া মামলার নথি ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. দেলোয়ার হোসেন ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর দণ্ডবিধি ১২৩ (ক) ধারায় বিএনপির তখনকার জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া, নিন্দাবাদ ও উসকানিমূলক বক্তব্য রাখার অভিযোগ এনে পিরোজপুর সদর থানায় এ মামলা করেন। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য থাকায় আদালতের বিচারক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন উপাদান না থাকায় তাকে দায় থেকে অব্যাহতি দেন এবং মামলাটি খারিজ করেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মামনুন আহসান। পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি ও তারেক রহমানকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। দেশে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতায় আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিধায় আজ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পিরোজপুরে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় সম্পূর্ণ খালাস ও মামলাটি খারিজ হয়েছে। সব মামলায় তারেক রহমান খালাস পাবেন ও দেশে ফিরবেন বলে আশা রাখছি।’