
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বসতবাড়ি ও স্কুলপড়শি এলাকায় প্রায় ৩০০টি অবৈধ চুল্লিতে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, এসব চুল্লির ধোঁয়ায় গ্রামবাসী শ্বাসকষ্ট ও নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন, সঙ্গে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
মানিকছড়ির বাটনাতলী ইউনিয়নের ঢাকাইয়া শিবির, লালটিলা, নবীনগর, ডাইনছড়ি ও মাস্টারঘাটা গ্রামে বসতবাড়ির পাশে চুল্লিগুলো তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, একটি চুল্লিতে ২৫০ থেকে ৩০০ মণ কাঠ পোড়ালে প্রায় এক হাজার কেজি কয়লা পাওয়া যায়। বিশেষ প্রক্রিয়ায় ৮–১০ দিন ধরে কাঠ পোড়ানোর পর কয়লা সংগ্রহ করা হয়। পরে ট্রাক ও জিপে করে এসব কয়লা চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। পাইকাররা কেজিপ্রতি ৩০–৩২ টাকায় কিনে বিভিন্ন কারখানা ও হোটেল, মশার কয়েল, ধূপকাঠি ও জুয়েলারি উৎপাদনে ব্যবহার করেন।
শ্রমিকরা জানাচ্ছেন, চুল্লির মালিকরা আশপাশের বনাঞ্চল থেকে কাঠ কেটে আনেন বা কখনও কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনে চুল্লিতে সরবরাহ করেন। স্থানীয় এক সংবাদকর্মী জানান, ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চুল্লি রয়েছে এবং বছরের ৯-১০ মাসই কাঠ পোড়ানো হয়। এর ফলে বন উজাড় হচ্ছে এবং এলাকাটি মারাত্মক বায়ু দূষণে ভুগছে।
স্থানীয়রা জানান, ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। স্কুলের পাশের চুল্লিগুলো ধোঁয়া ক্লাসরুমে প্রবেশ করায় শিক্ষার্থীরা অসুবিধায় পড়ছে।
খাগড়াছড়ির পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ’-এর প্রধান মাফুজ আহমেদ রাসেল বলেন, “কার্বন মনোক্সাইড, পিএম-২.৫ ও ব্ল্যাক কার্বনের মতো মারাত্মক দূষক বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে, যা শ্রমিক ও এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি করছে।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ এই কর্মকাণ্ড চললেও বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর বা উপজেলা প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেনি। বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিয়া বলেন, “মানিকছড়িতে সংরক্ষিত বনভূমি নেই। তবে আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি, মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে এবং কিছু কাঠ জব্দ করা হয়েছে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাছান আহ্মদ জানান, “পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ অনুযায়ী সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। বন বিভাগ যদি গাছ কাটা বন্ধ করে, চুল্লিগুলো বন্ধ হবে।”
মানিকছড়ি ইউএনও তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়া বলেন, “এ বিষয়ে আমার জানা ছিল না। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ অবস্থায় স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, অবৈধ কয়লা চুল্লির কারণে বন উজাড় ও বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেলে এলাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবেশের আরও সংকট সৃষ্টি হতে পারে।