
বিজয় দিবসের প্রাক্কালে শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারীয়া ইউনিয়নে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরের ওপর আগুন দেওয়ার ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। রাতের আঁধারে কে বা কারা এই আগুন দিয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পরিবার।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে পরিবারের সদস্যরা জিয়ারতের জন্য কবরের সামনে এলে আগুনের চিহ্ন দেখতে পান। পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা কবরের ওপর কাঠ জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে রেখে যায়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ সিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর অবমাননার খবর পেয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করনীয় নির্ধারণ করব।”
ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. মান্নান খান শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারীয়া ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। ২০১০ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর পরিবারের বসতঘরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
পরিবার সূত্র জানায়, আ. মান্নান খানের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী মাহফুজা বেগম এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে নিয়ামতপুর গ্রামেই বসবাস করছেন।
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, সোমবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা আ. মান্নান খানের কবরের ওপর আগুন দেয়। মঙ্গলবার সকালে কবর জিয়ারত করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যরা ছাই ও পোড়া কাঠের চিহ্ন দেখতে পান। এরপরই বিষয়টি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও প্রশাসনকে জানানো হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে আফরোজা আক্তার জানান, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকালেও তার মা বাবার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে আগুনের চিহ্ন দেখতে পান। এতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যরাও সেখানে ছুটে যান। তখন কবরের ওপর ছাই ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এবং আগুন সদ্য নিভে গেলেও ধোঁয়া বের হচ্ছিল।
আফরোজা আক্তার আরও জানান, বিজয় দিবসের আগের রাতে কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে এই কাজ করেছে, তা তারা জানেন না। এ ঘটনায় পরিবারটি চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মাহফুজা বেগম বলেন, “আমার স্বামী দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। পুরো গ্রাম তার জন্য গর্ব করে। তার কবরের সঙ্গে এমন অবমাননাকর আচরণ মানতে পারছি না। মুক্তিযোদ্ধা বলেই কি তার কবর নিরাপদ নয়? আমি এর বিচার চাই।”
এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলোরা ইয়াসমিন বলেন, “একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরের ওপর আগুন দেওয়ার তথ্য তার মেয়ে আমাকে জানিয়েছেন। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। পুলিশ সুপারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”